আজ- ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শনিবার  দুপুর ১২:৪৪

টাঙ্গাইলে ৯ নেতা দিয়ে চলছে আওয়ামীলীগের তিন সাংগঠনিক কমিটির কাজ

 

বুলবুল মল্লিক:

টাঙ্গাইলে আওয়ামীলীগের ধনবাড়ী উপজেলায় দুই ও কালিহাতী উপজেলায় তিন এবং টাঙ্গাইল শহর শাখায় চার নেতা দিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। প্রতিটি সাংগঠনিক কমিটি আনুষ্ঠানিক ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের এক বছর অতিবাহিত হলেও নানা কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি।

ফলে আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক কর্মকান্ডে নেতাকর্মীদের মধ্যে অনীহা, পদ পেতে নেতাকর্মীদের মধ্যে অসম প্রতিযোগিতা এবং ত্যাগী নেতাকর্মীরা পদ-বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন।


জানাগেছে, আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ডক্টর মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপির নিজ এলাকা টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন দীর্ঘ ১১ বছর পর গত বছরের ২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়। মধুপুর উপজেলা থেকে পৃথক হওয়ার পর নতুন এ উপজেলায় প্রথম সম্মেলন হয়েছিল ২০১১ সালের ২ নভেম্বর।


ধনবাড়ী কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে সম্মানিত অতিথি ছিলেন, কৃষিমন্ত্রী ডক্টর মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি। প্রধান অতিথি ছিলেন, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও সভাপতি মন্ডলীর সদস্য কর্নেল(অব.) ফারুক খান। সম্মেলনে সাবেক মন্ত্রী ও সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম সহ কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতারা অংশ নেন।

সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মীর আহমাদ ফরিদকে সভাপতি এবং সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক মেয়র খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। সেই থেকে অদ্যাবদি ৭১ সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এই দুই নেতাকে দিয়েই চলছে ধনবাড়ীর সাংগঠনিক কার্যক্রম।


ধনবাড়ী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপন জানান, নানা কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে।


মহান মুক্তিযুদ্ধের সুতিকাগার খ্যাত কালিহাতী উপজেলা আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন দীর্ঘ সাত বছর পর গত বছরের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত হয়। এরআগে ২০১৫ সালের মার্চ মাসে এ উপজেলায় সর্বশেষ ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময় মোজহারুল ইসলাম তালুকদার সভাপতি এবং আনসার আলী বিকম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় আনসার আলী দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।


কালিহাতী আরএস পাইলট হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ডক্টর মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের তৎকালীন প্রশাসক ফজলুর রহমান খান ফারুক।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপি, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপা, সদস্য অ্যাডভোকেট এবিএম রিয়াজুল কবির কাওছার।


সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে নানা নাটকীয়তার পর কেন্দ্রীয় ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা নতুন সভাপতি হিসেবে মোজহারুল ইসলাম তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আনোয়ার হোসেন মোল্লা এবং ১ নম্বর সহ-সভাপতি পদে আবদুল মালেক ভূঁইয়াকে মনোনীত করেন। পরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম(ভিপি জোয়াহের) এমপি তাদের নাম ঘোষণা করেন।


কালিহাতী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি পদে মোজহারুল ইসলাম তালুকদার এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো দায়িত্ব পান। সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মোল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। ১নং সহ-সভাপতি আবদুল মালেক ভূঁইয়া সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক।

তাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে ১ নং সহ-সভাপতি সাংগঠনিক কর্মকান্ড থেকে প্রায়শই মুখ ফিরিয়ে থাকেন। তারপরও সেই থেকে অদ্যাবদি ৭১ সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং সহ-সভাপতি এই তিন নেতা দিয়ে চলছে সাংগঠনিক কার্যক্রম।


কালিহাতী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোজহারুল ইসলাম তালুকদার জানান, পৌরসভা ও ইউপি নির্বাচন এবং রাজনৈতিক নানাবিধ জটিলতার কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। তারা খসড়া কমিটি গঠন করেছেন এবং দ্রুত তা অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।


টাঙ্গাইল শহর আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন, আওয়ামীলীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ডক্টর মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি।

সম্মেলনে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী মির্জা আজম এমপি, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি এমপি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এবিএম রিয়াজুল কবির কাওছার, কেন্দ্রীয় আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য মামুনুর রশিদ মামুন ও জেলা নেতারা।


শহরের শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে সভাপতি পদে পৌর মেয়র এসএম সিরাজুল হক এবং সাধারণ সম্পাদক পদে এমএ রৌফকে পুনঃনির্বাচিত করা হয়। এছাড়া সহ-সভাপতি পদে গোলাম কিবরিয়া এবং যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদে আহমেদ মজিদ সুমনের নাম ঘোষণা করা হয়।

দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ওইদিন পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে অনুমোদনের জন্য জমা দিতে নির্দেশ দেন। তারপর থেকে ১১ মাস অতিবাহিত হলেও ৬৭ সদস্যের শহর আওয়ামীলীগের কমিটি চার নেতা দিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।


শহর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, এর আগে ২০১৫ সালে আনুষ্ঠানিক সম্মেলনের মাধ্যমে শহর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হয়েছিল। তারা একাধিক পূর্ণাঙ্গ খসড়া কমিটি গঠন করলেও তা অনুমোদন করাতে ব্যর্থ হন।

এদিকে, শহর আওয়ামী লীগের ৬৭টি পদে স্থান পেতে দুই শতাধিক নেতাকর্মী তৎপর রয়েছেন। কাঙ্খিত পদ লাভের আশায় তারা শহর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ জেলা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা এবং সংসদ সদস্যদের কাছে যাচ্ছেন। কেউ কেউ পদ লাভের আশায় অনৈতিক পদ্ধতি অবলম্বন করছেন।


পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন প্রসঙ্গে শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ রৌফ জানান, শহর আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের লক্ষে কাজ করা হচ্ছে। আগামি সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে কমিটি গঠন করা হবে।


ধনবাড়ী ও কালিহাতী উপজেলা এবং শহর আওয়ামীলীগের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করে জানান, সম্মেলনের পর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় তারা কোন পদবী ব্যবহার করতে পারছেন না। সাবেক নেতা হিসেবে দলীয় কর্মকান্ড পরিচালনা করতে হচ্ছে।

এভাবে কাজ করে তারা আনন্দের পরিবর্তে হতাশ হয়ে পড়ছেন। পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ায় পদ পেতে অনেকে বিশেষ করে হাইব্রিড নেতারা মন্ত্রী, স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে গিয়ে উপঢৌকন নিয়ে লবিং করছেন।


তারা জানান, যারা মাঠের নেতাকর্মী- তারা মন্ত্রী-এমপিদের পেছনে ঘুর ঘুর করেন না, সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনে দিনরাত পরিশ্রম করেন। এ কারণে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা পদ বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন।


টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভপতি আনিসুর রহমান জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় সকল নেতাকর্মী তৎপর রয়েছে। জাতীয় ও দলীয় কর্মকান্ড নিয়ে ব্যস্ততা ও অভ্যন্তরীণ নানা কারণে জেলার তিনটি সাংগঠনিক কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা সম্ভব হয়নি। তবে কোন কোন এলাকায় খসড়া কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno