আজ- ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ রবিবার  দুপুর ২:৩৪

টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির কোন্দল মিটছেনা সহসাই!

 

দৃষ্টি নিউজ:

টাঙ্গাইল জেলা বিএনপিকে দু’টি সাংগঠনিক জেলা কমিটি গঠনের নয়া উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। টাঙ্গাইলকে হঠাৎ উত্তর ও দক্ষিণ দুটি সাংগঠনিক অংশে ভাগ করার সিদ্ধান্তে ভিন্নমত পোষণ করছেন অনেকেই। কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী, নিবির পর্যবেক্ষণ ও নতুন নতুন নেতাকর্মী বের করে আনতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। তবে টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, দলীয় অন্ত:কোন্দল নিরসনে এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বিএনপি। তবে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বলছেন, এতে দলীয় অন্ত:কোন্দল আরও বাড়বে তাই দলকে না ভেঙে ঐক্যবদ্ধ রাখার পক্ষে তৃণমূল।
জানাগেছে, টাঙ্গাইল জেলা বিএনপিতে দীর্ঘদিন ধরে দলীয় অন্ত:কোন্দল বিরাজ করছে। ফলে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নতুন কমিটিও গঠন করতে পারেনি দলটি। জেলা-উপজেলার পুরনো সব কমিটি দিয়ে চলছে নামমাত্র কার্যক্রম। ঝিঁমিয়ে পড়েছে দলের নেতাকর্মীরা। নতুন কমিটি না হওয়ায় নতুন নেতৃত্বও বের হচ্ছেনা। এতে সাংগঠনিকভাবেও দলটি অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। অন্ত:কোন্দলের প্রভাব উপজেলা পর্যায়েও ছড়িয়ে পড়েছে। কোন কোন উপজেলায় নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিলেও তা গঠনে ব্যর্থ হতে হয়েছে। পাল্টা কমিটি গঠনের খবরও রয়েছে। নিজ দলীয় নেতাকর্মীরাই এমন অভিযোগ করছে।
সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৬ মে জেলা বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়। তখন কৃষিবিদ শামছুল আলম তোফাকে সভাপতি এবং অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবালকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। তোফা বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার দন্ডপ্রাপ্ত আসামি সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই। তাদের অপর ভাই কেন্দ্রীয় জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। একাধিক নেতাকর্মী জানায়, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখনও হয়নি। মেয়াদ উর্ত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে জেলা ছাত্রদল। উপজেলাগুলোতে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের আহ্বায়ক কমিটি হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। ১৪ বছরের পুরনো কমিটি নেতৃত্ব দিচ্ছে দেলদুয়ার উপজেলা যুবদল। দেলদুয়ার উপজেলা কৃষক দলের সভাপতি আব্দুল লতিফ মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম অনেকদিন আগে মারা গেলেও শূণ্য পদ এখনও পূরণ হয়নি। অধিকাংশ উপজেলারই এমন চিত্র। পদবঞ্চিতদের অভিযোগ, তোফা-ফরহাদের কমিটিতে আব্দুস সালাম পিন্টু পরিবারের অনুসারীদেরকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। ফলে কমিটি গঠনের পরই জেলা বিএনপিতে বিদ্রোহ দেখা দেয়। এ নিয়ে একাধিকবার সংঘর্ষ, মামলা, হামলা, দলীয় কার্যালয়ে তালা দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এখনও পদবঞ্চিতরা আলাদাভাবে দলীয় কার্যক্রম পালন করে থাকেন। ২০১৭ সালের ২৬ মে জেলা বিএনপির কমিটি হওয়ার পর ২৩ জুলাই টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের অডিটোরিয়ামের কর্মীসভায় দু’পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এসময় সহ-সভাপতি আলী ইমাম তপন, হাসানুজ্জামিল শাহীন. আহমেদুল হক শাতিল, শফিকুর রহমান লিটনকে বহিস্কার করা হয়। সখীপুরে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করতে দু’পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। ওইদিন ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। এছাড়া বিএনপির পাল্টাপাল্টি কমিটিও গঠন করা হয়। জেলা কমিটি গঠনের পর পদবঞ্চিতরা বিএনপি অফিসে হামলা চালায়। আরেকটি পক্ষের দাবি জাতীয় পার্টি থেকে আসা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর জেনারেল(অব.) মাহমুদুল হাসান বিএনপিতে যোগ দিয়ে তার অনুসারিদের পদপদবীতে অগ্রাধিকার দেয়ার পর থেকে জেলা বিএনপিতে অন্ত:কোন্দল শুরু হয়। তবে বর্তমানে পিণ্টুু পরিবারই আলোচনায় রয়েছে।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানায়, দলকে শক্তিশালী নয়- অন্ত:কোন্দল নিরসনে কেন্দ্র এমন ছক দিয়েছে। জেলার সদর উপজেলা, নাগরপুর, দেলদুয়ার, মির্জাপুর, বাসাইল ও সখীপুর নিয়ে টাঙ্গাইল দক্ষিণ জেলা হতে পারে। এ অংশে ভৌগলিক কারণে কেন্দ্রীয় নেতা মাহমুদুল হাসান, অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তী, আহমেদ আযম খান, আবুল কালাম আজাদ থাকবেন। অপরদিকে কালিহাতী, ঘাটাইল, মধুপুর, ধনবাড়ী, গোপালপুর ও ভূঞাপুর এই ছয়টি উপজেলা নিয়ে টাঙ্গাইল উত্তর জেলা কমিটি করার কথা ভাবা হচ্ছে। ভৌগলিক কারণে এ অংশে আব্দুস সালাম পিণ্টু পরিবার উত্তর অংশে পড়বে। এছাড়া লুৎফর রহমান আজাদ, ফকির মাহাবুব আনাম(স্বপন ফকির), লুৎফর রহমান মতিন ও সরকার শহীদ এ অংশে থাকবেন। আলোচনা ওঠেছে, দলটির বর্তমান সভাপতি শামছুল আলম তোফা উত্তর অংশের সভাপতি হচ্ছেন। সাধারণ সম্পাদক পদটি সরকার শহীদের দখলে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এদিকে জেলার দক্ষিণ অংশের মেজর জেনারেল(অব.) মাহমুদুল হাসান কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সভাপতি, আহম্মেদ আযম সহ-সভাপতি, আবুল কালাম আজাদ কেন্দ্রীয় শিশু বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী গৌতম চক্রবর্তী পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক। এক নেতার এক পদ নিয়মে এঁরা জেলার পদে আসবেন না। ফলে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল দক্ষিণ অংশের গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে পারেন। সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ কেন্দ্রীয় পদ ছেড়ে দক্ষিণ অংশের নেতৃৃত্বে আসার কথাও শোনা যাচ্ছে। এদিকে আশরাফ পাহেলী ও শাহীনের নামও আলোচনায় রয়েছে।
কেন্দ্রীয় বিএনপি ধারণা করছে, দুটি সংগঠন তৈরি করলে অন্ত:কোন্দল কমবে; পাশাপাশি নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হবে। তবে দলের এমন সিদ্ধান্ত কতটা ফলপ্রসূ হবে তা নিয়েও ভাবছে দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। তৃণমূল নেতাকর্মীরা ধারণা করছে, এতে অন্ত:কোন্দল আরো প্রকাশ্য রূপ নেবে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা দুটি কমিটি করার বিপক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছে। জেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি কৃষিবিদ সামছুল আলম তোফা বলেন, টাঙ্গাইল জেলা বিএনপিকে দুটি ভাগে সাংগঠনিক কমিটি করার সংবাদ আমাদের কাছেও এসেছে। তবে কবে নাগাদ বাস্তবায়ন হবে এটা বোঝা যাচ্ছেনা। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ভাগ হলে শুধু বিএনপি হবে না সবই হবে। দুটি কমিটি হলে কেমন হবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সংসার ভাগ হলে যা হয়। তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও ভাগ না হয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকতে চায়। তবে কেন্দ্রীয় বিএনপি যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটা মানার কথাও বলেন তিনি। মেয়াদ উর্ত্তীর্ণ কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে গত বছর। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের কমিটি গঠনের পর জেলা ছাত্রদলের কমিটি করার কথা বলেন তিনি। জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুল আজিজ চান খাঁ বলেন, এক জেলাকে দু’ভাগে ভাগ করলে সাংগঠনিকভাবে দলটি দুর্বল হবে। নিজেদের মধ্যে অন্ত:কোন্দল আরো বাড়বে। তিনি পুরো জেলা বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ করে এক ফ্রেমে রাখার পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেন। নতুন নেতৃত্ব বাড়াতে নবীনদের দিয়ে কমিটি সাজালেও সংগঠন দুর্বল হবে বলে মনে করেন বিএনপির এই ত্যাগী নেতা। জেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফকির মাহবুব আনাম(স্বপন ফকির) জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে কীভাবে হবে, কেন হবে বিষয়টি কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় বিএনপির পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তী দুটি কমিটি গঠনের তথ্যটি নিশ্চিত করলেও এ ব্যাপারে নিজস্ব কোন মন্তব্য করেন নি। কেন্দ্রীয় বিএনপি ভালো মনে করে এমন সিদ্ধান্ত নিলে তিনি কেন্দ্রের পক্ষেই থাকবেন। কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সভাপতি ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আহমেদ আযম খান বলেন, কেন্দ্র থেকে টাঙ্গাইলকে উত্তর ও দক্ষিণ এই দুটি ভাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে কেন্দ্রের দায়িত্বরত টিম তাকে নিশ্চিত করে বলেছে, টাঙ্গাইল একটি বড় জেলা। ৮টি সংসদীয় আসন। কাজের সুবিধা, নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি ও পর্যবেক্ষণের সুবিধার্থে কেন্দ্র এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্ত:কোন্দলের প্রশ্নটির তেমন গুরুত্ব না দিয়ে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির এই নেতা। সাবেক উপ-মন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু পরিবারের পদ-পদবির বিষয়ে তিনি বলেন, পরিশ্রম করলে সে পদ-পদবি পাবে, দায়িত্ব পাবে এটাই স্বাভাবিক। তিনি আরও বলেন কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বাইরে মতামত দেয়ার তো সুযোগ থাকেনা।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno