আজ- ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ মঙ্গলবার  ভোর ৫:৫৯

টাঙ্গাইল বাস টার্মিনাল অন্যত্র সরিয়ে সম্প্রসারণের দাবি :: জনভোগান্তি চরমে

 

দৃষ্টি নিউজ:

টাঙ্গাইল নতুন বাস টার্মিনালে দীর্ঘ ৩৭ বছরে যানবাহনের সংখ্যা চারগুণ বাড়লেও সম্প্রসারিত না হয়ায় প্রতিনিয়ত যাত্রী সাধারণ ও টার্মিনাল সংলগ্ন দেওলা, কোদালিয়া ও সাবালিয়া এলাকাবাসী ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। বাস টার্মিনালের জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টাঙ্গাইল জেনালের হাসপাতালের রোগী ও তার আত্মীয়-স্বজনরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এলাকাবাসীর দাবি, বাস টার্মিনালটি অন্যত্র সরিয়ে সম্প্রসারিত করা হোক।

জানা যায়, বিগত ১৯৮১ সালে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের দেওলা এলাকায় ৩ একর জায়গার উপর টাঙ্গাইল বাস টার্মিনালটি নির্মাণ করা হয়। সে সময় এর অবস্থান ছিল শহর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে। বর্তমানে শহর সম্প্রসারিত হয়ে টার্মিনালের আশ-পাশে ঘণবসতি গড়ে ওঠেছে। এ এলাকায় অবস্থিত টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালও উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। ওই মেডিকেল কলেজ চালু হলে হাসাপাতালমুখী জন¯্রােত বাস টার্মিনালের কারণে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করবে। এছাড়া দ্রুতগতির যানবাহনের কারণে রাস্তা পাড় হয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করাও দূরূহ হয়ে পড়বে।

টার্মিনালের মালিক ও শ্রমিক সংগঠন সূত্রে জানা যায়, ১৯৮১ সালে নতুন বাস টার্মিনালের যাত্রার শুরুতে বাসের সংখ্যা ছিল ২৫০টি। বর্তমানে এক হাজারেরও বেশি বাস-মিনিবাস রয়েছে। ফলে গত চার দশকে গাড়ির সংখ্যা চারগুণ বাড়লেও টার্মিনালের জায়গা বাড়েনি এক শতাংশও। বরং সম্প্রতি টাঙ্গাইল জেলা পরিষদ টার্মিনালের পাশে ১.৩৩ একর জায়গায় ‘বিবর্তণ’ নামে একটি বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করছে। যেখানে আগে বেশ কিছু বাস-মিনিবাস রাখা হত। এছাড়া টার্মিনাল ভবনের দু’পাশেই পৌর মার্কেট হওয়ায় দোকানগুলোর সামনে বাস দাঁড়াতে দেয়া হয়না। টার্মিনালের রাস্তার পূর্ব পাশে গড়ে ওঠেছে বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রান্তে চলাচলকারী বাস কাউন্টার। এসব পরিবহনের বাসগুলো প্রায়ই বাসস্ট্যান্ডের পূর্ব পাশে রাস্তার ওপর রাখা হয়। ফলে প্রতিনিয়ত যাত্রী সাধারণ ও আশ-পাশে বসবাসরত এলাকাবাসী দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। বিশেষ করে রোগী পরিবহনের অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতালে যাতায়াতে মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে। কোন কোন সময় ওইসব অ্যাম্বুলেন্সকে টার্মিনাল পাড় হতে দীর্ঘক্ষণ ধরে অপেক্ষা করতে হয়।

সরেজমিনে ঘাটাইল থেকে আসা অ্যাম্বুলেন্স চালক আ. আলিম জানান, প্রতিদিন রোগী নিয়ে এসে টার্মিনালে যানজটের কারণে এভাবে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। বিশেষ করে টাঙ্গাইলের উত্তরাঞ্চলের ৬টি উপজেলার রোগী পরিবহনে বেশি এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। বিকল্প রাস্তায় অনেক দূর ঘুরে আসতে হয় বিধায় যানজট থাকলেও বাধ্য হয়ে তারা টার্মিনালের রাস্তা ব্যবহার করতে বাধ্য হন।

নিয়মিত যাতায়াতকারী কয়েকজন বাসযাত্রী জানান, টাঙ্গাইল নতুন বাস টার্মিনালটি বর্তমান অবস্থান থেকে সরিয়ে রাবনা বাইপাসের কাছে নেয়া এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। যত দ্রুত বাস টার্মিনালটি সরানো হবে টাঙ্গাইলবাসীর জন্য ততই মঙ্গল। এছাড়া, বাস টার্মিনালকে কেন্দ্র করে একটি অপরাধীচক্র গড়ে ওঠেছে। তারা বিভিন্নভাবে যাত্রী সাধারণ ও পথচারিদের হয়রানি করে। টার্মিনালটি সরিয়ে শহরের বাইরে নিয়ে সম্প্রসারিত করে প্রতিষ্ঠা করার দাবি জানান তারা।

ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা চালক সামছু জানান, তিনি রাবনা বাইপাস থেকে বাস টার্মিনাল হয়ে নিয়মিত শহরের নিরালা মোড়ে যান। বাস টার্মিনালে এসে পৌঁছলে তিনি আর সময় ঠিক রাখতে পারেন না। বিশেষ করে সকাল ও বিকালে টার্মিনালে যানজট বেশি হয়।

দেওয়া এলাকার স্কুলছাত্র রাকিব, শামীম, রশিদ, হৃদয় সহ অনেকেই জানান, টার্মিনালের রাস্তায় যানজটের কারণে স্কুলে যেতে খুব সমস্যা হয়। বিশেষ করে বৃষ্টির দিনে গাড়ির কাদা লেগে স্কুলড্রেস নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া অটোরিকশাযোগে স্কুলে যেতে সঠিক সময় পাড় হয়ে যায়।

টাঙ্গাইল বাস-মিনিবাস শ্রমিক সমিতির সহ-সভাপতি সেলিম রহমান বলেন, যখন ১৯৮১ সালে এই বাস টার্মিনাল চালু করা হয় তখন থেকেই আমি এখানে কাজ করছি। এই টার্মিনালের কিছু জায়গায় অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ড করে জায়গা দখল করে রাখা হয়েছে। আগে জেলা পরিষদের জায়গায় কিছু বাস রাখা যেত। এখন ওখানে মার্কেট নির্মাণ হচ্ছে, টার্মিনালে গাড়ির সংখ্যাও বেড়েছে। এছাড়া বাস স্ট্যান্ডের দুইপাশে পৌর মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে গাড়ি রাখার জায়গা সঙ্কুলান হচ্ছেনা। টার্মিনাল সম্প্রসারিত করা খুবই প্রয়োজন।

টাঙ্গাইল বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার ইকবাল হোসেন বলেন, শহর সম্প্রসারিত হয়েছে, যানবাহনও বেড়েছে, পাল্লা দিয়ে জনসংখ্যাও বেড়েছে। ফলে, বর্তমান বাস টার্মিনাল আর আতিরিক্ত বাস ধারণ করতে পারছে না। বাস টার্মিনালটি উর্ধমুখী সম্প্রসারণ করে তিনতলা বা চারতলা করা হলে নতুন করে জায়গার প্রয়োজন হবে না। সেখানে এক দিক দিয়ে বাস ঢুকে অন্য দিক দিয়ে বের হয়ে যাবে। যাত্রীদের খাওয়া-দাওয়া বিশ্রাম সহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা সহ বাস রাখার পর্যাপ্ত জায়গা থাকবে। উন্নত বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এ ধরণের বাস টার্মিনাল রয়েছে। তিনি বলেন, বাস টার্মিনাল হাসপাতাল সংলগ্ন হলেও রোগীদের কোন সমস্যা হচ্ছেনা। যানবাহনের শব্দ কিংবা কোলাহল হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছায় না।

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপালের তত্ত¡াবধায়ক ডা. নারায়ন চন্দ্র সাহা বলেন, টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নে হাসপাতালের সামনের রাস্তার দু’পাশের অবৈধ দোকান-পাট উচ্ছেদ করা অত্যন্ত জরুরি। এছাড়া ওই জায়গায় রাস্তা পাড় হয়ে হাসাপাতালে আসার জন্য একটি ফুটওভার ব্রিজ প্রয়োজন।

তিনি বলেন, হাসপাতালটি বাস টার্মিনালের কাছে হওয়ায় বহুবিধ সমস্যা হচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীরা রাতে শব্দের কারণে ঘুমাতে পারেনা। বিশেষ করে শিশু ও হার্টের রোগীদের সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে। বর্তমানে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার রোগীকে সেবা দেয়া হয়। যখন মেডিকেল কলেজ চালু হবে তখন রোগীর সংখ্যা তিনগুণ হবে। মূলত শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জন্য টাঙ্গাইল বাস টার্মিনাল একটি বড় প্রতিবন্ধক।

টাঙ্গাইল পৌর সভার প্যানেল মেয়র মাহমুদা বেগম জেবু বলেন, বর্তমান অবস্থান থেকে বাস টার্মিনালটি রাবনা বাইপাস এলাকায় সরিয়ে নেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। জায়গাও অধিগ্রহন করা হয়েছে। আশাকরি, দ্রুত বাস টার্মিনালটি সরিয়ে নেয়ার অনুমোদন পাওয়া যাবে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno