আজ- ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শনিবার  সকাল ১১:২১

টাঙ্গাইল হানাদার মুক্ত দিবস আগামিকাল

 

দৃষ্টি নিউজ:

আগামিকাল ১১ ডিসেম্বর, টাঙ্গাইল হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলার দামাল ছেলেরা পাক হানাদার বাহিনীর কবল থেকে টাঙ্গাইলকে মুক্ত করে। উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা।

মুক্তির স্বাদ পেয়ে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত করে তুলে জেলা শহর। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে টাঙ্গাইলের অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতাপূর্ণ গেড়িলা যুদ্ধের কাহিনী দেশের সীমানা পেড়িয়ে বহির্বিশ্বেও ছড়িয়ে পড়েছিল।


টাঙ্গাইল পাক হানাদারমুক্ত দিবস উপলক্ষে পৌরসভার উদ্যোগে ১১ ডিসেম্বর থেকে শহরের শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে পাঁচ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহন করা হয়েছে।


এদিন সকালে শহরের শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে জাতীয় সংগীতের সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং কবুতর ও বেলুন উড়িয়ে পাঁচ দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন করা হবে। এরপর মুক্তিযোদ্ধা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে শোভা যাত্রা বের হয়ে শহরের গুরত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করা হবে।


সন্ধ্যায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন কৃষিমন্ত্রী ডক্টর মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান খান ফারুকের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি থাকবেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা জোয়াহেরুল ইসলাম (ভিপি জোয়াহের) এমপি, মো. ছানোয়ার হোসেন এমপি, খন্দকার মমতা হেনা লাভলী এমপি, টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র ও অনুষ্ঠান উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব এসএম সিরাজুল হক আলমগীর, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক জেলা কমান্ডার ফজলুল হক বীরপ্রতীক প্রমুখ।


১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষনের পর পরই দেশকে শত্রুমুক্ত করতে টাঙ্গাইলে স্বাধীন বাংলা গণমুক্তি পরিষদ গঠন করা হয়। চলতে থাকে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ। ২৬ মার্চ গণমুক্তি পরিষদের উদ্যোগে টাঙ্গাইল সদর থানায় স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়।


২৭ মার্চ বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত সভায় টাঙ্গাইলের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়। ওইদিন রাতেই সার্কিট হাউজ আক্রমন করে মুক্তিযোদ্ধারা।

অতর্কিত ওই আক্রমনে দুই জন পাকিস্তানী সেনা নিহত হয় ও ১৫০ জন আত্মসমর্পন করে। প্রথম আক্রমনে ব্যাপক সাফল্য পাওয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জন্মে। এরপর থেকে গ্রামে গ্রামে যুবকরা সংগঠিত হতে থাকে।


টাঙ্গাইল মুক্তিবাহিনীর দখলে চলে যাওয়ায় ঢাকা থেকে পাকবাহিনী ৩ এপ্রিল টাঙ্গাইলে আসার চেষ্টা করে। পথে মির্জাপুর উপজেলার গোড়ান-সাটিয়াচড়া নামক স্থানে মুক্তিবাহিনী অগ্রগামী পাকবাহিনীর কনভয়কে প্রতিরোধ ব্যূহ রচনা করে। সেদিনের প্রতিরোধ যুদ্ধে ২৩ জন পাকসেনা নিহত হয়। এরপর স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় হানাদার বাহিনী ওই এলাকায় পাল্টা আক্রমন চালায়। এতে মুক্তিযোদ্ধা সহ ১০৭ জন বাঙালি গণহত্যার শিকার হয়।


হানাদার বাহিনী টাঙ্গাইল শহরে প্রবেশ করলে মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ স্থানে চলে যায়। বীর মুক্তিযোদ্ধারা নতুন করে অস্ত্র সংগ্রহ ও সংগঠিত হতে থাকে। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হয়।

সখীপুর উপজেলার পাহাড়িয়া এলাকা বহেড়াতৈলে কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে কাদেরিয়া বাহিনী গঠন করা হয়। শুরু হয় বিভিন্ন স্থানে হানাদার বাহিনীর সাথে একের পর এক যুদ্ধ। চারদিক থেকে আক্রমনে দিশেহারা হয়ে পড়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী।


১০ ডিসেম্বর বিকালে টাঙ্গাইল শহরের উত্তরে কালিহাতী উপজেলার পৌলিতে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর প্রায় দুই হাজার ছত্রীসেনা অবতরণ করায় হানাদারদের মনোবল একেবারে ভেঙ্গে পড়ে। তারা ঢাকার দিকে ছুটতে থাকে।

১০ ডিসেম্বর রাতেই কাদেরিয়া বাহিনীর কমান্ডার বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ডক্টর মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি টাঙ্গাইল থানা দখল করে সেখানে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন।


১১ ডিসেম্বর ভোর থেকে মুক্তিযোদ্ধারা বীর বেশে শহরে প্রবেশ করতে থাকে এবং সারা শহর নিজেদের দখলে নিয়ে হানাদারদের ধরতে থাকেন। এভাবেই টাঙ্গাইল শহর সম্পূর্ণ হানাদার মুক্ত হয়।

মুক্তির স্বাদ পেয়ে উল্লসিত মানুষ রাস্তায় বেড়িয়ে পড়ে। ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে টাঙ্গাইল শহর।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno