আজ- ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার  সন্ধ্যা ৭:৩৭

ধলেশ্বরীর বুকে বাম্পার ফলনের টমেটোয় মেডিসিনের প্রলেপ!

 

দৃষ্টি নিউজ:

টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ধলেশ্বরী নদীর চরাঞ্চলে বিস্তীর্ণ এলাকায় টমেটোর চাষ করা হয়েছে। কিন্তু ক্রমাগত শৈত্যপ্রবাহের কারণে কাঁচা টমেটো পাকাতে মেডিসিনের প্রলেপ দিতে হচ্ছে।

কৃষকদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, নাগরপুরের চরাঞ্চলজুড়ে এক সময় তামাকের চাষ হত। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের লাগাতার পরামর্শে তারা তামাক ছেড়ে টমেটো চাষে ঝুঁকছে। তারা জানান, টমেটো শীতকালীন সবজি হলেও বর্তমান সময়ে শীত থেকে বসন্তকাল পর্যন্ত প্রচুর পরিমাণে টমেটো উৎপাদিত হয়। নাগরপুরের উৎপাদিত টমেটো স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্নস্থানে যাচ্ছে। এ বছর নাগরপুর উপজেলায় ৮৫ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছে। কিন্তু ক্রমাগত শৈত্য প্রবাহের ফলে টমেটো পাকতে বিলম্ব হচ্ছে। ফলে চাষীরা অধিক মুনাফার লোভে গাছ থেকে কাঁচা টমেটো ছিঁড়ে মেডিসিন দিয়ে পাকিয়ে বাজারজাত করছে।

নাগরপুর উপজেলার মোকনা ইউনিয়নের বেটুয়াজানী গ্রামের সফল চাষী করিম শেখ, সবুর মিয়া, পাগলা মিয়া, মোতাসিম, শহীদুল, জয়েদ আলী সহ অনেকে। এক সময় তারা চরাঞ্চলে তামাক চাষ করতেন। এখন টমেটো সহ নানা রকমের সবজি চাষ করেন। এবার তারা টমেটো ছাড়াও ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, বেগুনসহ নানা রকমের শীত ও গ্রীষ্মকালীন সবজির চাষ করছেন।

চাষী পাগলা মিয়া বলেন, ‘আমরা এক সময় ধলেশ্বরী নদীর চরাঞ্চলে তামাক চাষ করতাম। কিন্তু এখন স্থানীয় কৃষি অফিসের সহযোগিতা ও পরামর্শে আমরা বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করছি। এর মধ্যে আমরা প্রতি বছর টমেটোর বাম্পার ফলন পেয়ে থাকি’।

একাধিক চাষী জানান, ফলনের প্রথম দিকে টমেটোর ভালো দাম পেলেও শেষের দিকে টমেটোর দাম প্রতিকেজি ৫-৭ টাকায় নেমে যায়। যা তাদের জন্য লাভজনক নয়। তাই বাধ্য হয়ে তারা মেডিসিন দিয়ে টমেটো পাকিয়ে বাজারে বিক্রি করছেন। যদি টমেটো বা সবজি রাখার জন্য সংরক্ষণাগার থাকত তাহলে কৃষকের টমেটো পঁচে নষ্ট হত না। টমেটোয় মেডিসিনও দিতে হত না। তারা আরো ভালো দাম পেতেন।
চাষী শহীদুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন বীজ কোম্পানির পরামর্শ ও উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায়, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি নিয়ে তারা জৈব সার ও সেক্সফোরমেন ট্র্যাপ ব্যবহার করে নিরাপদ সবজি উৎপাদন করছেন। বর্তমানে তিনি কয়েক একর জমিতে টমেটো ও সবজি চাষ করছেন। কিন্তু এবার ফলন ভালো হলেও শৈত্য প্রবাহের কারণে টমেটো পাকতে বিলম্ব হচ্ছে। ফলে ভালো দাম পাওয়া নিয়ে তারা চিন্তিত।

লোকসান ঠেকাতে ও উৎপাদনে উৎসাহিত করতে নাগরপুরে একটি সবজি সংরক্ষণাগার(কোল্ডস্টোরেজ) স্থাপনের দাবি চাষীদের।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, টমেটো সোলানেসি পরিবারের লাইকোপার্সিকগনের অন্তর্ভুক্ত কোমল ও রসালো সবজি। বাংলাদেশে টমেটোকে বিলাতি বেগুনও বলা হয়। এতে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন-সি রয়েছে। টমেটোতে লাইকোপেন নামে বিশেষ উপাদান থাকায় এটা ফুসফুস, পাকস্থলী, অগ্নাশয়, কোলন, স্তন, মূত্রাশয়, প্রোষ্টেট ইত্যাদি অঙ্গের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। টমেটো একটি অর্থকরী ফসল। শুধু সবজি নয় সালাদ ও সস তৈরিতেও টমেটো ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

নাগরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল মতিন বিশ্বাস জানান, এক সময় এ অঞ্চলের চাষীরা তামাকের চাষ করত। কিন্তু তারা কৃষকদেরকে সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছেন। এখন এলাকায় টমেটোর পাশাপাশি প্রচুর শীত ও গ্রীষ্মকালীন সবজির আবাদ হচ্ছে।

তারা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন, কীভাবে মেডিসিন ছাড়া প্রাকৃতিক উপায়ে টমেটো পাকানো যায়। এছাড়া কৃষকদের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে ঢাকা ও টাঙ্গাইলের নিরাপদ সবজি বিক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের কাছে কৃষকদের উৎপাদিত মেডিসিন ছাড়া টমেটো সরবরাহের ব্যবস্থা করছেন।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno