আজ- ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ রবিবার  সকাল ৯:১৯

নৌকায় ভোট দেয়ার অপরাধে ৩ পরিবার একঘরে!

 

দৃষ্টি নিউজ:

dristy.tv p-17
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ায় তিন পরিবারকে সামাজিকভাবে একঘরে করে রাখা হয়েছে। এছাড়া ওই তিন পরিবারের সদস্যদের মসজিদে যাওয়াও নিষেধ করা হয়েছে। ওই তিন পরিবারের সদস্যদের প্রতিনিয়ত অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও নানা প্রকার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে মির্জাপুর উপজেলার বহুরিয়া ইউনিয়নের গেড়ামারা গ্রামে। এ বিষয়ে মির্জাপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।
জিডি সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ এপ্রিল মির্জাপুর উপজেলার বহুরিয়া ইউনিয়নসহ ছয়টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বহুরিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবু সাইদ সাদু আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। গেড়ামারা গ্রামের রেজাউল করীম বাবুল আওয়ামী লীগের সমর্থন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। গেড়ামারা গ্রামের আব্দুল বারেক, তার ছেলে আব্দুল মালেক ও সানোয়ার হোসেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন।
নির্বাচনের আগের রাতে বাবুলের সমর্থকরা নৌকা মার্কার কর্মীদের ওপর হামলা চালায় এবং তাদের পাঁচটি মোটরসাকেইল ভাঙচুর করে। এতে আব্দুল মালেক ও শাহিনুর রহমান নামে দুই সমর্থক গুরুতর আহত হয়। এ ঘটনায় মির্জাপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এর জের ধরে রেজাউল করিম বাবুল ওই তিন পরিবারের ওপর চড়াও হন এবং ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ওই তিন পরিবারকে সামাজিকভাবে একঘরে করে রাখার ঘোষণা দেন। এতেও তিনি ক্ষান্ত না হয়ে ওই তিন পরিবারের সদস্যদের মসজিদে নামাজ পড়াও নিষেধ করেন। এছাড়া মসজিদের ইমামকে ওই তিন পরিবারের শিশুদের মক্তবে না পড়ানোর জন্য চাপ দেয়া হয়।
গেড়ামারা বাজারে অবস্থিত ওই তিন পরিবারের এক সদস্য সরোয়ারের দোকান থেকে কোনো প্রকার কেনাকাটা না করার জন্য গ্রামবাসীকে চাপ সৃষ্টি করে ৫শ টাকা জরিমানার বিধান জারি করা হয়েছে। তাছাড়া বাবুলের সন্ত্রাসীরা ওই তিন পরিবারের সদস্যদের প্রতিনিয়ত অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও নানা প্রকার হুমকি দিয়ে আসছে বলে জিডিতে উল্লেখ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার(১ জুন) দুপুরে গেড়ামারা গ্রামের ভুক্তভোগী এক পরিবারের অভিভাবক বৃদ্ধ আব্দুল বারেক একই গ্রামের মহুর উদ্দিনের ছেলে মো. মোস্তফা, আলম শিকদারের ছেলে লিটন ও মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে দেলোয়ারের বিরুদ্ধে মির্জাপুর থানায় একটি জিডি করেন। তারা সবাই বাবুলের সমর্থক। এরপর দুপুর আড়াইটার দিকে ভুক্তভোগী তিন পরিবারের সদস্য আব্দুল বারেক, আব্দুল মালেকের স্ত্রী তাসলিমা আক্তার ও গেড়ামারা বাজারের ব্যবসায়ী যুবলীগ নেতা সরোয়ার হোসেন মির্জাপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধের পক্ষের শক্তির সঙ্গে কাজ করে আজ আমাদের এই করুণ অবস্থা। আমরা কী স্বাধীনভাবে এলাকায় বসবাস করতেও পারবো না। বাবুলের পোষা সন্ত্রাসীদের ভয়ে আজকে আমরা পালিয়ে মির্জাপুরে এসেছি। তাছাড়া স্কুল পড়ুয়া শিশুদের নিয়ে প্রতিদিন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি।
গেড়ামারা গ্রামের মসজিদের ইমাম মাওলানা রফিকুল ইসলাম জানান, গ্রামের ১৫/২০ জন তাকে জানান ওই তিন পরিবারকে একঘরে করে রাখা হয়েছে। তাদের মসজিদে নামাজ পড়া এবং তাদের পরিবারের শিশু বাচ্চাদের মক্তব্যে পড়ানো যাবে না। কিন্তু ইমাম হিসেবে ওই তিন পরিবারের সদস্যদের নিষেধ করতে পারেননি তিনি। এজন্য সমাজের পক্ষ থেকে তাকে বিভিন্ন ধরনের চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে রেজাউল করিম বাবুল বলেন, ওই তিন পরিবারকে সমাজে বন্ধ রাখার বিষয়টি সমাজের। তাছাড়া তাকে অভিযুক্ত করা এবং নৌকার পক্ষে কাজ করায় তাদের সমাজে বন্ধ রাখা হয়েছে এটি মিথ্যে কথা। আওয়ামী লীগের সিমপেথি পাওয়ার জন্য তারা এসব কথা বলছেন। ওই তিন পরিবারকে সমাজে বন্ধ রাখা হলো কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সমাজের অন্য কোনো বিষয় থাকতে পারে।
মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে একটি জিডি করা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno