আজ- ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ রবিবার  ভোর ৫:৫৫

‘ফেতনা হত্যা অপেক্ষা গুরুতর পাপ’

 

: সাখাওয়াত হোসেন :

ইসলাম শান্তি ও সম্প্রীতির ধর্ম। মানবসমাজ থেকে ফেতনা, ফ্যাসাদ, জুলুম, অনাচার দূর করে ন্যায় ও ইনসাফের সমাজ উপহার দেওয়া ইসলামের অন্যতম লক্ষ্য।

এজন্য যুগে যুগে মানবতা বিচু্যত মানুষকে ন্যায়ের পথে ফিরিয়ে আনতে আলস্নাহ রাব্বুল আলামিন বহু নবী-রাসুল (সা.) প্রেরণ করেছেন। যারা অন্ধকার জগতের বাসিন্দাদের আলোর পথে ফিরিয়ে এনেছেন। দিশাহীনদের সঠিক পথ বাতলে দিয়েছেন। অসহায় ও মাজলুমদের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

মানুষ হত্যা, ফেতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি এবং সব ধরনের আত্মঘাতী অপতৎপরতার পথ থেকে মুসলিম জাতিকে দূরে রাখতে সচেষ্ট থেকেছেন। সন্ত্রাস ও উগ্রপন্থা পরিহার করে ভারসাম্যপূর্ণ মধ্যপন্থা অবলম্বন করার নির্দেশনা দিয়েছেন।


কারণ ইসলাম অসাম্প্রদায়িক এবং ভারসাম্যপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা, রক্তপাত, অরাজকতাও সৃষ্টি করা ইসলামে সম্পূর্ণভাবে নিষেধ।


আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘ফেতনা (দাঙ্গা, বিশৃঙ্খলা ও গৃহযুদ্ধ) হত্যা অপেক্ষা গুরুতর পাপ।’ (সুরা বাকারা : ১৯১)। সূরা মায়েদার ৩২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘নরহত্যা কিংবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কাজ করা ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সব মানুষকেই হত্যা করল’।


মহাগ্রন্থ আল কোরআনুল কারিমে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম। সেখানে সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্য প্রস্তুত রেখেছেন ভয়ংকর শাস্তি’। (সুরা নিসা : ৯৩)। আল্লাহ আরও ইরশাদ করেন, ‘আর যে কারও প্রাণ রক্ষা করল, সে যেন সব মানুষের প্রাণ রক্ষা করল।’ (সূরা মায়েদা ৩২)।


হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘কেয়ামত দিবসে সর্বপ্রথম রক্তপাত তথা হত্যার বিচার হবে’। (বুখারি : ৬৫৩৩)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘সেই স্বত্বার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ! মানুষ এমন এক সময়ের মুখোমুখি হবে, যখন হত্যাকারীও জানবে না যে, কেন সে হত্যা করল। নিহত ব্যক্তিও জানবে না যে, কেন তাকে হত্যা করা হলো’। (মুসলিম : ২৯০৮)।


হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমরের (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি জিম্মিকে হত্যা করবে, সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। যদিও জান্নাতের ঘ্রাণ চল্লিশ বছর দূরের পথ হতেও পাওয়া যাবে।’ (বুখারি : ৩১৬৬)।


কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন, নরহত্যা কিংবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কাজ করা ছাড়া কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সব মানুষকেই হত্যা করল।’ (সুরা মায়েদা : ৩২)। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘মুসলমানকে গালি দেওয়া গুনাহর কাজ আর তাকে হত্যা করা কুফরি কাজের অন্তর্ভুক্ত (মুসলিম : ১১৬)।


ইসলাম জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে প্রয়াসী হইও না। নিশ্চয়ই আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীকে পছন্দ করেন না। (সূরা কাসাস ৭৭)।


ইসলাম সর্বপ্রকারের উগ্রবাদ এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে। ইসলামের আইনে যেভাবে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ঘৃণিত অপরাধ, তেমনি রাষ্ট্রীয় আইনেও মারাত্মক অপরাধ। কাজেই সমাজ-রাষ্ট্রে ফেতনা-ফ্যাসাদ, বিশৃঙ্খলাকারী এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে মুমিন মুসলমানদের তাগিদ দেওয়া হয়েছে।


পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘মুমিনদের দুই দল দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেবে। অতঃপর তাদের একদল অপর দলকে আক্রমণ করলে তোমরা আক্রমণকারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে; যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। যদি তারা ফিরে আসে তবে তাদের মধ্যে ন্যায়ের সঙ্গে ফয়সালা করে দেবে এবং সুবিচার করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিচারকারীদের ভালোবাসেন।’ (সূরা : আল-হুজুরাত, আয়াত: ৯)।


ইসলাম বিনাকারণে ঝগড়া-বিবাদের মতো ঘৃণ্যতর কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে। কোনো বান্দা যে পর্যন্ত ঝগড়া-বিবাদ বর্জন না করবে, সে পর্যন্ত তার ইমানের বাস্তবে রূপের পরিপূর্ণতা বিধান করতে পারবে না।

রাসূলুল্লাহ (সা.) ঝগড়া-বিবাদ পরিহারকারীদের সুসংবাদ দিয়ে বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তির জন্য বেহেশতের সর্বোচ্চ স্থানে একটি, বেহেশতের মধ্যভাগে একটি এবং বেহেশতের বাগানে একটি ঘর আমার জিম্মায় রয়েছে, যে এমনকি ন্যায়বাদী হওয়া সত্ত্বেও ঝগড়া-বিবাদ থেকে বিরত থাকে।’

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno