আজ- ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ রবিবার  সকাল ৮:৫৭

বঙ্গবন্ধুসেতুতে নয়া সিস্টেমে টোল ফাঁকির অভিযোগ!

 

দৃষ্টি নিউজ:

Capture-1-6
বঙ্গবন্ধুসেতুর টোল আদায়ে নিয়োজিত কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম (সিএনএস) কোম্পানী সেতুর টোল আদায়ে নতুন সিস্টেম চালু করে পরিবহনের টোল ফাঁকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টোল আদায়ের এক্সজ্যাম্পট ওয়ারেণ্ট লগ (ঊীবসঢ়ঃ ডধৎৎধহঃ খড়ম) রিপোর্টে দেখা গেছে ৫০০ টাকার তিনটা গাড়ি। টোল কালেক্টর ৮ ঘণ্টা ডিউটি শেষে শিফট রিপোর্টে রয়েছে ২১টা গাড়ি। এরমধ্যে বড় বাস, বড় ট্রাক রয়েছে। যা সেতু পারপারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) কোন অনুমোদন নেই। প্রায় প্রতিটি বুথে প্রতি শিফটে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। বাড়তি গাড়ি সেতু পারাপার করছে সিএনএস কোম্পানী। সেতুর পূর্ব ও পশ্চিমে মোট ১২টি বুথ থেকে টোল আদায় করা হচ্ছে। ৮ ঘণ্টা পর পর একজন করে টোল কালেক্টর পরিবর্তন করা হয়। অন্যদিকে টোল কালেক্টর ৮ ঘণ্টা টোল আদায় শেষে রিপোর্ট প্রিণ্ট করার পর কালেকশনের থেকে গাড়ি সংখ্যা বেশি হলে সেখানে রিপোর্টটি পুনরায় এডিট করে প্রিণ্ট করে বিবিএ’কে দেখাচ্ছে সিএনএস কোম্পানী। এমন অনিয়মের কারণে সরকার লাখ লাখ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, অনিয়মের এই টাকা ভাগ করে নিচ্ছেন সিএনএস কোম্পানী ও বিবিএ’র কতিপয় উচ্চপদস্থ কর্তা। কয়েক সপ্তাহের অনুসন্ধানে বের হয়ে এসেছে এমন সব তথ্য।
জানা গেছে, সেতুর পূর্ব ও পশ্চিমে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের অনুমোদন রয়েছে থানার একটি টহল গাড়ি, সেনাবাহিনীর ২৮টি, সেতু পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিয়োজিত গাড়িগুলো এবং বিবিএ’র নির্দিষ্ট কিছু সংখ্যক গাড়ি সেতু  এক্সজ্যাম্পশনে পাড় হতে পারবে। অথচ সিএনএস কোম্পানীর টোল আদায়ের এক্সজাম্পট রিপোর্টে অনেক বাস ও ট্রাক দেখা যায়।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতিদিন তিন শিফটে ১২টি বুথ দিয়ে সিএনএস কোম্পানী শ’ শ’ গাড়ি এক্সজাম্পশনে গাড়ি পারাপার করছে। ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব ও পশ্চিমে টোল আদায়ের জন্য বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) প্রধান প্রকৌশলীর স্বাক্ষরিত একটি চিঠির প্রেক্ষিতে বিনামূল্যে টোল আদায়ের জন্য অস্থায়ীভাবে কণ্ট্রাক্ট পাওয়া কম্পিউটার সিস্টেম নেটওয়ার্ক (সিএনএস) কোম্পানী সেতুতে নতুন সিস্টেম ‘সফটওয়্যার রিয়েল টাইম অনলাইন ওয়েব বেইজড মর্ডান টোল কালেকশন সিস্টেম’ এবং ওয়েব বেইজড অডিট ও মনিটরিং সিস্টেম স্থাপন করে। যদিও সেতুতে টোল আদায়ের জন্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন এবং বিশেষজ্ঞ কনসালটেন্টের পর্যবেক্ষণে পূর্বের সিস্টেম স্থাপিত হয়েছিল। যার দ্বারা সেতুতে টোল আদায় করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে সিএনএস কোম্পানী মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুরের সেতুতে স্থাপিত সিস্টেম দিয়ে দেশের বৃহৎ বঙ্গবন্ধুসেতুতে টোল আদায় করছে। যা আন্তর্জাতিক মানের তো নয়ই এবং কোন বিশেষজ্ঞ বা কনসালটেন্টের দ্বারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই নতুন সিস্টেম বসানো হয়েছে।
টোলের লেনগুলোতে কোন সেন্সর না থাকায় গাড়ি টোল পাড় হওয়ার সময় কোন ট্রানজ্যাকশন নম্বর উঠে না। ফলে একাধিক গাড়ি টোকেন ছাড়াই পাড় হয়ে যেতে পারে। ট্রানজ্যাকশন নম্বর না থাকার ফলে গাড়ি টোল পাড় হলে সেটি সনাক্ত করার কোন উপায় থাকে না। গত ২৩ মার্চ সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে নতুন সিস্টেম বিকল হয়ে যাওয়ায় একটি প্রাইভেটকার টোল রশিদ নেয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। এ সময়ই একটি গাড়ি টোল কালেক্টরকে টাকা দিয়ে টোকেন না নিয়েই প্রাইভেটকারটিকে ওভারটেক করে টোল পাড় হয়ে গেছে। গাড়িটি দ্রুত যেতে দেখে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক কর্মী বাধা দিলে টোল প্লাজা থেকে ছেড়ে দিতে বলা হয়। টোল বুথের ভিতরের ক্যামেরার ফুটেজ থেকে বিনা রশিদে টাকা গ্রহনের দৃশ্যটি দেখা গেছে।
সিএনএস কোম্পানীর দাবি করে, সেতুতে নতুন সিস্টেমে টোল আদায়ের জন্য বাংলাদেশ রোড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি(বিআরটিএ) এর ডাটা বেইজড ব্যবহার করা হচ্ছে। যদিও বিআরটিএর দেয়া ব্লু-বুকে গাড়ির ক্যাপাসিটি দেয়া আছে কেজিতে। কিন্তু সিএনএসের নতুন সিস্টেমে টোল আদায়ের ক্ষেত্রে গাড়ির ওজন টন হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে সিএনএস কোম্পানী মনগড়াভাবে গাড়ির ক্যাপাসিটি নির্ধারণ করে গাড়ি প্রতি বেশি টোল আদায় করছে। এতে প্রতিনিয়ত গাড়ির চালকদের সাথে বাড়তি টোল আদায় নিয়ে ঝগড়া ও মারধরের ঘটনাও ঘটছে। গত ১৪ মে বঙ্গবন্ধু  সেতুর পূর্ব ও পশ্চিমের মহাসড়ক সংস্কার কাজে নিয়োজিত ইউডিসি কোম্পানীর ট্রাকের চালকের কাছ থেকে ১১০০ টাকার টোকেন দিয়ে তার কাছ থেকে ১৪০০ টাকা আদায় করেছে। পরে বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করলে ওই ট্রাক চালককে মারধর ও লাঞ্ছিত করে কর্তৃপক্ষ।
টোলপ্লাজার আরেকটি সিসি টিভি ফুটেজে দেখা গেছে, একটা বিকল ট্রাক আরেক ট্রাকের সাথে বেঁধে টোল পাড় হলেও টোল আদায় করা হয়েছে দু’টি ট্রাকের। অথচ ওই চালককে টোলের টোকেন দেয়া হয়েছে একটি। ফলে একটি ট্রাকের টোলের টাকা সেতু কর্তৃপক্ষের হিসেবে জমা পড়েনি।
নারিশ পোল্ট্রি ফিডের ট্রাক চালক হামসত আলী ও করতোয়া পরিবহনের চালক আমিনুল ইসলাম জানান, সেতুর টোল আগে গাড়ির ব্লু-বুক দেখিয়ে দিতাম ১১০০ টাকা। আর এখন ব্লু-বুক না দেখেই বিআরটিএ’র অজুহাতে টাকা নিচ্ছে ১৪০০ করে। সিরাজগঞ্জের বাস চালক আব্দুল কাদের জানান, একেক দিন একেক রকম টোল নেয়। কোন টোকেনে আনরেজিস্ট্রার হলে গাড়ির টোল নেয়া হয় ৯০০ টাকা এবং গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর থাকলে টোল নেয়া হয় ৬৫০ টাকা। কারণ গাড়ির সিরিয়াল নম্বর ‘জ’ দিয়ে শুরু। একাধিক ট্রাক চালক জানান, অঘোষিতভাবে বাড়তি টোল আদায় করা হচ্ছে। এছাড়া ওজন স্টেশনে প্রবেশের সময় গাড়ির সামনের চাকায় ওজন তারতম্য হলে স্টকইয়ার্ডে পাঠিয়ে দিচ্ছে। স্টকইয়ার্ড ঘুরতেও টাকা দিতে হচ্ছে। ট্রাক থেকে মালামাল এদিক-সেদিক করতে লেবারদের টাকা দিতে হচ্ছে। ফলে পণ্য পরিবহনের জন্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আমাদেরকেও বাড়তি ভাড়া আদায় করতে হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের উপর।
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম (সিএনএস) কোম্পানীর টোল-কো অর্ডিনেটর মুকিতুল কবীর জানান, গাড়ির বডির মোডিফিকেশন করা হলে কোম্পানীর ম্যানেজমেন্টের নির্দেশে গাড়ির শ্রেণি পরিবর্তন করে ৮৫০ টাকার পরিবর্তে ১১০০ টাকা নেয়া হয়। শিফট রিপোর্ট প্রিণ্ট হওয়ার পর সেটি পরিবর্তন বা এডিট করে প্রিণ্ট করার কোন নিয়ম-নীতি নেই। তবে ম্যানুয়ালি আরেকটি রিপোর্টের সাথে শিফট রিপোর্ট মিলিয়ে দেখা হয়। এছাড়াও তিনি আরও জানান, টোল কালেক্টররা সম্ভবত ভুলবশত: টাকা ক্যাশ না করে এক্সজাম্পট করে। কিন্তু পরবর্তিতে বাড়তি টাকা আলাদাভাবে বিবিএ’র অ্যাকাউন্টে জমা দেয়া হয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) বঙ্গবন্ধু সেতু সাইট কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি। পরবর্তীতে বিবিএ’র সহকারী প্রকৌশলী ওয়াসিম আলী এবং সহকারি প্রকৌশলী আহসান মাসুদ বাপ্পীর সাথে একাধিকবার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও কেউ ফোন ধরেননি।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno