আজ- ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শনিবার  সকাল ৯:৩০

বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে ১৪ কিলোমিটারে যানজটের শঙ্কা

 

দৃষ্টি নিউজ:

আসন্ন ঈদ যাত্রায় বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে উত্তরবঙ্গগামী দুই লেনে একমুখী চলাচলের ব্যবস্থা করে দেওয়ার পরও ১৪ কিলোমিটারে তীব্র যানজটের আশঙ্কা করছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। অপরদিকে মহাসড়কের ফোর লেন, ফ্লাইওভার ও আন্ডারপাস খুলে দেওয়ায় ঈদুল ফিতরের ন্যায় যানজটমুক্ত থাকবে বলে দাবি করেছে জেলা পুলিশ।


এরইমধ্যে বুধবার(৬ জুলাই) ভোর রাত থেকে বৃহস্পতিবার(৭ জুলাই) সকাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সেতুর গোলচত্তর থেকে টাঙ্গাইলের রাবনা বাইপাস পর্যন্ত মহাসড়কের ঢাকাগামী লেনে দীর্ঘ ২১ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। রাজধানীর বিভিন্ন হাটে যেতে বেশকিছু গরুবাহী ট্রাক উত্তরবঙ্গ থেকে সেতু পাড় হয়ে ঢাকা যাচ্ছিল।

এছাড়া বেশকিছু ফিটনেস বিহীন লক্কর-ঝক্কর মার্কা গাড়ি চলাচল, সড়ক দুর্ঘটনা, প্রশিক্ষণবিহীন চালক, এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত দুই লেনের সড়ক ও সিরাজগঞ্জ থেকে গাড়ি টানতে না পারায় ওই যানজটের সৃষ্টি হয়। যদিও পুলিশি তৎপরতায় বেলা বাড়ার সাথে সাথে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।


সংশ্লিষ্টরা জানায়, এলেঙ্গা থেকে সেতুর টোলপ্লাজা পর্যন্ত দুই লেনের সড়কে যানজটের স্থায়ী সমাধান হচ্ছেনা। তাই ওই ১৪ কিলোমিটারে ঈদে ঘরমুখো মানুষ যানজটের শিকার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

যদিও বুধবার রাত থেকে উত্তরাঞ্চল থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাস সেতুর পূর্বপাড় গোলচত্তর থেকে ভূঞাপুর হয়ে এলেঙ্গা দিয়ে যাতায়াত করছে। গরুবাহী যানবাহন ও উত্তরাঞ্চলগামী যাত্রীবাহী বাস মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করছে। এ কারণে ভূঞাপুর বাসস্ট্যান্ডেও ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাসগুলো যানজটের সম্মুখিন হচ্ছে।


মহাসড়কে ট্রাক লরি ও কাভার্ডভ্যান চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও প্রচারণা না থাকায় বিআরটিএ’র ওই নির্দেশনার কেউ মানছেনা। এছাড়া মোটর সাইকেল চলাচলে বিধি নিষেধ থাকার পরও নানা বাহানায় বাইকাররা মহাসড়ক ব্যবহার করছে।


সড়ক ও জনপথ(সওজ) বিভাগ সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে কালিহাতীর এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেন সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। ওই অংশের সবগুলো ফ্লাইওভার(উড়াল সড়ক), আন্ডার পাস চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এজন্য মহাসড়কের ওই অংশে নির্বিঘেœ যান চলাচল করছে।

এরপরও ঈদকে সামনে রেখে কোরবানির পশু আনা-নেওয়ার জন্য মহাসড়কে অতিরিক্ত ট্রাক চলাচল করছে। টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটারে দুই লেনের সড়কে একমুখী চলাচলের ব্যবস্থা করা হলেও যানজটের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছেনা।


ওই ১৪ কিলোমিটারে দুই লেন একমুখী চলাচলের নিয়ম করলেও মহাসড়কে এলেঙ্গার ময়মনসিংহ রোড, পুরাতন ভূঞাপুর রোড, চরভাবলা, আনালিয়াবাড়ী, হাতিয়া, সল্লা ও জোকারচর এলাকায় বাসস্ট্যান্ড থাকায় স্থানীয় লোকজন পারাপাড় হয়ে থাকে। ফলে দুর্ঘটনার পাশাপাশি মহাসড়ক পারাপাড়ের কারণেও যানজট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।


সরেজমিনে মহাসড়কের টাঙ্গাইলের আশেকপুর বাইপাস, পাকুল্যা, বাঔখোলা, করটিয়া, রাবনা বাইপাস, এলেঙ্গা হয়ে বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় ঘুরে বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) দুপুর আড়াইটায় দেখা যায়- স্বাভাবিকভাবে যানবাহন চলাচল করছে। ফোর লেন মহাসড়ক ও সড়কের দুই পাশে সার্ভিস লেন চালু করা হয়েছে। মহাসড়কের যেখানে গাড়ির চাপ বেশি সেখানে সাইড রোড ব্যবহার করে যানবাহনগুলো চলাচল করছে।


অভি এণ্টারপ্রাইজের বাসচালক মাসুদ ও চালকের সহযোগী ই¯্রাফিল, শ্যামলী পরিবহনের বাসচালক আব্দুর রশিদ ও তার সহযোগী রনি মিয়া জানান, এবার মহাসড়কের টাঙ্গাইল অংশে যানজটের সম্ভাবনা নেই। তবে যদি এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত এলাকায় বেপরোয়াভাবে গাড়ি চলাচল ও এলোপাতাড়ি পাকিং করা হয় তাহলে এক বার যানজট হলে তার ভোগান্তি অনেক দূর পর্যন্ত গড়াবে। বুধবার রাতেও সে কারণেই যানজট হয়।


মহাসড়ক সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মহাসড়ক ফোর লেন হওয়ায় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা যানবাহন এখন কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পর্যন্ত দ্রুত চলে আসতে পারে। এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত দুই লেনের সড়ক এবং সেতুটিও দুই লেনের। যানবাহনগুলো ফোর লেনের সুবিধায় দ্রুত এলেঙ্গা পর্যন্ত এসে দুই লেনের মুখে আটকে যায়। এছাড়া সেতুর টোল পরিশোধ করতে গিয়েও যানজট লেগে যায়। এ কারণে ঈদ ও উৎসবে মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়।


বঙ্গবন্ধু সেতু টোল প্লাজা সূত্র জানায়, স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতিদিন ১৪-১৫ হাজার যানবাহন সেতু পারাপাড় হয়। ঈদের আগে-পরে দুইদিন ৩০ হাজারের বেশি যানবাহন সেতু পারাপাড় হয়। স্বাভাবিকের অধিক যানবাহন রাস্তায় থাকায় দুই লেনের সড়কে যানজট লেগে যায়। তাছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্তে(সিরাজগঞ্জ অংশে) মহাসড়কে উন্নয়ন কাজ করায় যানজট সৃষ্টি হয়ে সেতু অতিক্রম করে টাঙ্গাইল অংশ পর্যন্ত চলে আসে।

বুধবার (৬ জুলাই) বেলা ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) বেলা ১২টা পর্যন্ত ৩৪ হাজার ৪০৭টি যানবাহন সেতু পারাপাড় হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে দুই কোটি ৭২ লাখ ৩৩ হাজার ৫০ টাকা।


টাঙ্গাইল বাস কোচ মিনিবাস মালিক সমতির মহাসচিব গোলাম কিবরিয়া বড় মনি জানান, গত রমজানের ন্যায় এবারও মালিক-শ্রমিকদের সমন্বয়ে গঠিত প্রায় ৫০ জন সেচ্ছাসেবক যানজট নিরসনে মাঠে থাকছে।


এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ আতাউর রহমান জানান, এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত দুই লেনের সড়কটি ওয়ানওয়ে করে দেওয়া হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশ মহাসড়ক যানজট মুক্ত রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) ঢাকা ও গাজীপুর এলাকার অধিকাংশ পোশাক কারখানাগুলোতে ছুটি হয়েছে- এজন্য মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে।

তবে মহাসড়কে বাইকারদের উৎপাত বন্ধ করতে তারা মামলা দেওয়া সহ নানা পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন। ট্রাক লরি ও কাভার্ডভ্যান চালকরা না জানার ভান করে মহাসড়কে গাড়ি চালাচ্ছে। তারা ট্রাক লরি ও কাভার্ডভ্যান চালকদের সতর্ক করে দিচ্ছেন এবং ঈদ মওসুমের কয়েকদিন মহাসড়কে চলাচল করতে নিষেধ করছেন।


টাঙ্গাইল ট্রাফিক ইন্সপেক্টর(প্রশাসন) দেলোয়ার হোসেন জানান, এবারও মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে ট্রাফিক পুলিশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ট্রাফিক পুলিশ দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছে।


টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, মোটর সাইকেল চালকরা রেজিস্ট্রেশনকৃত জেলার সীমানা অতিক্রম করতে পারবেন না। এছাড়া ট্রাক লরি ও কাভার্ডভ্যান মহাসড়কে চলাচল বন্ধ থাকবে।


তিনি আরও জানান, মহাসড়কে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকবে। দুর্ঘটনা কবলিত যানবাহন যাতে দ্রুত সরিয়ে ফেলা যায় এ জন্য হাইওয়ে পুলিশ ও সেতু কর্তৃপক্ষের চারটি রেকার সব সময় প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সড়ক পর্যবেক্ষণের জন্য ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। ওয়াচ টাওয়ার থেকে মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গা মনিটরিং করা হচ্ছে। কোথাও কোন সমস্যা দেখলে তাৎক্ষণিক তা সমাধান করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno