আজ- ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শনিবার  বিকাল ৫:১৬

বাসাইলের হেলে পড়া সেতু ১০ গ্রামের গলার ফাঁস!

 

দৃষ্টি নিউজ:

টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার ফুলকি-ফুলবাড়ি সড়কের নিরাইল এলাকায় নির্মিত হেলে পড়া সেতুটি ওই এলাকার ১০ গ্রামের মানুষের গলার ফাঁস দিসেবে দেখা দিয়েছে। উদ্বোধনের আগেই হেলে পড়া সেতুটি দীর্ঘ পাঁচ বছরেও পুণনির্মাণ না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

এ নিয়ে এলাকাবাসী বার বার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দরজায় কড়া নাড়লেও কোন সুফল আসেনি। উদ্বোধনের আগেই সেতুটি হেলে পড়ায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নিজ খরচে পুনরায় নির্মাণ করে দেওয়ার নির্দেশ দেয় প্রকল্প পরিচালক। কিন্তু তা আর আলোর মুখ দেখেনি।

অভিযোগ রয়েছে, বাসাইল উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার(পিআইও) যোগসাজসে ওই ঠিকাদার সেতুর পুরো বিল তুলে নিয়ে সটকে পড়েছেন। ফলে সেতু না থাকায় আশপাশের ১০ গ্রামের মানুষের চলাচলে ভোগান্তি কয়েকগুন বেড়েছে।


সরেজমিনে দেখা যায়, টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার ফুলকি-ফুলবাড়ি সড়কের নিরাইল এলাকায় অযত্ন-অবহেলায় পড়ে রয়েছে উদ্বোধনের আগেই হেলে পড়া ৬০ ফুট দীর্ঘ সেতুটি। দেখে অভিসপ্ত নগরীর ধ্বংসাবশেষ বলে ভ্রম হওয়া বিচিত্র্য নয়। এলাকাবাসী বার বার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পিআইও অফিসের বারান্দায় ঘুরেও সেতুটির বিষয়ে কোন প্রকার সুরাহা পায়নি।


সূত্রমতে, গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে বিগত ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে টাঙ্গাইল জেলার ১২টি উপজেলায় দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ১২৮টি সেতু নির্মাণ করে। বাসাইল উপজেলার ফুলকি ইউনিয়নের ফুলকি-ফুলবাড়ি সড়কের নিরাইল এলাকায় ৬০ ফুট দীর্ঘ সেতু নির্মাণের কাজ পায় স্থানীয় মেসার্স আব্দুল্লাহ এন্টারপাইজ নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে কাজ করায় উদ্বোধনের আগেই সেতুটি হেলে পড়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। এ সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ(প্রকল্প পরিচালক) সরেজমিন তদন্ত শেষে ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নিজ খরচে সেতুটি পুনরায় নির্মাণ করে দেওয়ার নিদের্শ দেয়।

এরপর পরই ঠিকারদারী প্রতিষ্ঠান সেতুটি পুনরায় নির্মাণের লক্ষে সেতুর বিভিন্ন অংশ ভাঙ্গা শুরু করে। এর অংশ হিসেবে সেতুর উপরের অংশ ভেঙ্গে রড বের করে নিয়ে যায়। কিন্তু এরপর ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সেতুটি পুনরায় নির্মাণ না করে সম্পূর্ণ(ফাইনাল) বিল তুলে নেয়।

ওই সময় অভিযোগ ওঠে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. সাখাওয়াত হোসেন সাত লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রতিবেদন দেন। ফলে ওই প্রতিষ্ঠান পুনরায় কাজ শেষ না করেই সেতুর উপরের অংশে ব্যবহৃত রড ও কংক্রিট সরিয়ে ফেলে এবং সম্পূর্ণ বিল তুলে নেওয়ার প্রয়াস পায়। এতে সড়ক ব্যবহারকারীদের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।


দীর্ঘ দিনেও ফুলকি-ফুলবাড়ি সড়কের নিরাইল এলাকার সেতু নির্মাণ না হওয়ায় আশপাশের অন্তত ১০ গ্রামের মানষ চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে। গ্রামহুলো হচ্ছে- বালিয়া, ফুলকি, ফুলবাড়ি, বাঘিল, নিরাইল, তিরঞ্জ, ঝনঝনিয়া, ময়থা, আইসড়া ও সেহরাইল। হেলে পড়া সেতুটি ওই এলাকার অন্তত ১০ গ্রামের মানুষের গলার ফাঁস হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে। একদিকে হেলে পড়া সেতু ব্যবহার করতে পারছে না, অন্যদিকে ওই স্থানে নতুন সেতুও নির্মাণ করা হচ্ছেনা। দীর্ঘ ১০ কিমি রাস্তা ঘুরে ওইসব এলাকার মানুষদের উপজেলা সদরে যেতে হচ্ছে।


নিরাইল গ্রামের রবি মিয়া জানান, হেলে পড়া সেতু দিয়ে বড় গাড়ি চলাচল না করতে পারলেও সাধারণ মানুষ পাড় হতে পারত। কিন্তু সেতুটি ভেঙ্গে ফেলায় এখন তাদের দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেছে। তদের এলাকা কৃষি প্রধান। সেতু না থাকায় তারা কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্যও পাচ্ছেন না। স্কুলছাত্র মো. রামিম, হামিম, খসরু, নাজমুল সহ অনেকেই জানান, বর্ষা মৌসুমে তদোর দুর্ভোগের কোন সীমা থাকে না। বিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় পানিতে অনেক সময় তাদের বই খাতা ভিজে যায়।


ফুলকি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সামছুল আলম (বিজু) জানান, যখন ওই সেতু নির্মাণ হয়- তখন তিনি চেয়ারম্যান ছিলেন না। তবে তিনি চান তার এলাকার জনগনের সুবিধার জন্য ওই স্থানে একটি সেতু পুনরায় নির্মাণ হোক। এজন্য তিনি খুব শীঘ্রই জেলা প্রাশাসকের কাছে একটি লিখিত আবেদন করবেন।


এ বিষয়ে বাসাইল উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা (পিআইও) মো. সাখাওয়াত হোসেন ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তাদের ক্ষতি হবে জেনে সেতুটি পুনরায় নির্মাণ করে দেয়নি। এছাড়া দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ওই স্থানে সেতু নির্মাণের কোন প্রকার প্রকল্প পুনরায় গ্রহন করেনি।


টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার জানান, সেতু নির্মাণে দুর্নীতির বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। জনগনের সুবিধার্থে সেতুটি পুনরায় নির্মাণ করার ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno