আজ- ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার  সকাল ১১:৩১

বাসাইলে ব্যাংকের কোটি টাকা নিয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি উধাও!

 

দৃষ্টি নিউজ:

টাঙ্গাইলে গ্রাহকের কোটি টাকা হাতিয়ে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকিং বুথের এজেণ্ট সারোয়ার হোসেন গা-ঢাকা দিয়েছেন।

এজেণ্ট সারোয়ার হোসেন সবুজ বাসাইল উপজেলার ফুলকী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি। তার বাবার নাম মারিফত মিয়া। বাড়ি আইসড়া গ্রামে।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার(২৪ জুন) গ্রাহকরা জমাকৃত টাকা ফেরতের দাবিতে বাসাইলের ফুলকী ইউনিয়নের আইসড়া বাজারে অবস্থিত আইসড়া ডাচ্-বাংলা এজেণ্ট ব্যাংকিং বুথ ঘেরাও ও মিছিল সমাবেশ করেছে।

জানা যায়, তিন বছর আগে ডাচ্-বাংলা কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইসড়া বাজারে এজেণ্ট ব্যাংকিং বুথ চালু করে। বাসাইলের ফুলকী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সারোয়ার হোসেন সবুজ এজেণ্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন। বাজারে একটি দালান ভাড়া নিয়ে এজেণ্ট ব্যাংকিং শুরু করেন।

তাঁত সমৃদ্ধ আইসড়া গ্রামে প্রবাসীদের স্ত্রী এবং বাবা-মাদের টার্গেট করেন এজেণ্ট সবুজ। ব্যাংকিং নীতিমালা উপেক্ষা করে সাধারণ রেটের চেয়ে উচ্চ হারের রেটের প্রলোভন দেখিয়ে ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে প্রলুব্ধ করেন। অতি মুনাফার আশায় গ্রামের সরল মানুষ বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা ও বাজারের ব্যবসায়ীরা ওই ব্যাংকে টাকা জমা রাখেন।

এক পর্যায়ে জমাকৃত টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে দেখেন তাদের জমানো টাকা ব্যাংক হিসেবে নেই। এজেণ্ট সবুজের কাছে টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিভিন্ন গ্রাহককে টাকার দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তালবাহানা করেন।

টাকা না পেয়ে গ্রাহকরা বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন। তাদের জমানো টাকা পাওয়ার আশায় বাজারে সালিশী বৈঠক হয়। বৈঠকে সবুজ গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রতি দেন। হঠাৎ করে গত এক সপ্তাহ ধরে সবুজ ব্যাংক বন্ধ করে আত্মগোপণে চলে যান। এ ঘটনায় গ্রাহকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে বৃহস্পতিবার মিছিল ও সমাবেশ করেন।

ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগে জানা যায়, গ্রাহক রুম্পা বেগমের ১৪ লাখ টাকা, আফজাল হোসেনের ৯ লাখ টাকা, রাজু বেগমের ৭ লাখ টাকা, জলি বেগমের পৌঁনে চার লাখ টাকা, বাজারের চা বিক্রেতা আবুল হোসেনের এক লাখ টাকা, ইতি খানের ৪০ হাজার টাকাসহ স্থানীয় গ্রাহকদের প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়েছেন এজেণ্ট সবুজ।

স্থানীয় ব্যবসায়ী রাজু বলেন, আমি পাঁচ লাখ টাকা জমা দিয়ে প্রতারিত হয়েছি। ডাচ বাংলা এজেণ্ট ব্যাংক টাঙ্গাইল অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা এর পেছনে জড়িত রয়েছে। তা না হলে সবুজ এই কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সাহস পেত না। আত্মসাতের সাথে জড়িতদের বিচার ও টাকা ফেরতের দাবি জানান তিনি।

গ্রাহক ইতি খান অভিযোগ করে বলেন, আমরা বিশ্বাস করে ব্যাংকে টাকা রেখেছি। এমন প্রতারণার শিকার হবো বুঝতে পারিনি। প্রথম যখন টাকা জমা রাখি তখন মোবাইলে এসএমএস আসতো। পরবর্তীতে ব্যাংকে টাকা জমা দিলে এসএমএস আসতো না। এ বিষয়ে তাদের জানালে তারা বলতো সার্ভার নষ্ট হয়েছে।

প্রবাসী গ্রাহক আফজাল হোসেন বলেন, বিদেশে থেকে পাঠানো ৯ লাখ টাকা আমার মা ও স্ত্রী জমা রেখেছে। উচ্চ হারের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের টাকা জমা রাখতে বাধ্য করেছে। তারাও গ্রামের ছেলে হিসেবে বিশ্বাস করেছে। দেশে এসে টাকা উঠাতে গেলে জানতে পারি টাকা নিয়ে পালিয়েছে। সবুজ এমন প্রতারক ভাবতেও পারিনি।

ফুলকী ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, গ্রাহকের টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে গত তিন দিন আগে আইসড়া বাজারের সকল গ্রাহক, ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্র্তৃপক্ষ, বাজার কমিটির নেতৃবৃন্দ এবং পলাতক এজেণ্ট সবুজের বাবাকে নিয়ে সালিশী বৈঠকে বসা হয়।

সবুজের বাবা তার সম্পতি বিক্রি করে গ্রাহকের টাকা পরিশোধে রাজি হন। সকলের উপস্থিতিতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের হিসাবের ভিত্তিতে টাকা পরিশোধ করা হবে বলেও জানান তিনি।

বাসাইল উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কামরান খান বিপুল বলেন, সবুজ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি। তিনি একটি ব্যাংকের এজেণ্ট ছিল। বহু গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে শুনেছি।

এ ঘটনায় তাকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

টাঙ্গাইল ডাচ্বাংলা এজেণ্ট ব্যাংকিং অফিসের ব্যবস্থাপক আব্দুর রউফ বলেন, এ ঘটনা নিয়ে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ একটি মিটিং করেছে। স্থানীয় পর্যায়ের লোকজনকে সাথে নিয়ে গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno