আজ- ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ রবিবার  সকাল ৯:২৫

মধুপুর-ঘাটাইলের সাড়ে ৫ হাজারের মধ্যে নিবন্ধিত মাত্র ৭০০ খামার

 

দৃষ্টি নিউজ:

dristy.tv p-12
টাঙ্গাইলের মধুপুর ও ঘাটাইল উপজেলার প্রায় সাড়ে ৫ হাজার পোল্ট্রি শিল্পের মধ্যে নিবন্ধিত মাত্র ৭১৬টি খামার। উপজেলা প্রাণি সম্পদ কার্যালয়ের হিসাবমতে নিবন্ধন না করায় ঘাটাইল-মধুপুরের এসব খামার থেকে সরকার প্রতি পাঁচ  বছরে গড়ে ৫ কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ শিল্পের খামার স্থাপন থেকে শুরু করে ডিম ও মাংস বিক্রি পর্যন্ত  রয়েছে নানা সমস্যা আর অনিয়ম।
জানা যায়, টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর ও ঘাটাইল উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ৫ হাজার ৫৩১টি পোল্ট্রি খামার রয়েছে। এরমধ্যে লেয়ার ৩ হাজার ৯০০টি এবং বয়লার খামার ৮০০টি। শুধুমাত্র ঘাটাইল উপজেলায় পোল্ট্রি খামার রয়েছে ৪ সহস্রাধিক।
ঘাটাইল উপজেলার মোট জনসংখ্যার ১৪ ভাগই এ পোল্ট্রি শিল্পের সঙ্গে জড়িত। শুধুমাত্র ঘাটাইল উপজেলা থেকে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ২২ কোটি ডিম উৎপাদিত হয়েছে। যা ২০০৭-১৫ অর্থ বছরে ছিল ৪ কোটি ৯০ লাখ। গত ৮ বছরে ডিম উৎপাদনের হার বেড়েছে ৩৫০ ভাগ। উপজেলার ১১ হাজার ২৫৭টি পরিবার পোল্ট্রি শিল্পের উপর নির্ভরশীল। তবে এ উপজেলার এত সংখ্যক খামারের মধ্যে নিবন্ধিত হয়েছে মাত্র ৪৮৪টি খামার। মধুপুর উপজেলায় লেয়ার ৩৩২টি এবং বয়লার ২৯৯টি। তন্মধ্যে নিবন্ধিত হয়েছে লেয়ার ৭১টি এবং বয়লার ১৬১টি।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ কার্যালয়ের দেয়া তথ্যে জানা যায়, বেসরকারি লেয়ার খামার নিবন্ধনে ‘এ’ গ্রেডের ৫ বছরের জন্য সরকারি ফি ১৫ হাজার টাকা আর নবায়ন ফি ১২ হাজার ৫০০টাকা। ‘বি’ গ্রেডের জন্য ১০ হাজার টাকা, নবায়ন ফি ৭ হাজার ৫০০টাকা। ‘সি’ গ্রেডের (১০০১-১০০০০ মুরগি) জন্য ফি ৫ হাজার টাকা, নবায়ন ফি ৩ হাজার ৫০০টাকা।
২০০৮ সালের জাতীয় পোল্ট্রি উন্নয়ন নীতিমালায় বলা হয়েছে, বাণিজ্যিক খামার ঘণবসতি এলাকা এবং শহরের বাইরে স্থাপন করতে হবে। একটি বাণিজ্যিক খামার থেকে আরেকটি খামারের দূরত্ব ২০০ মিটার হতে হবে। ব্রিডিং খামারের পারস্পারিক দূরত্ব ৫ কিমি. হতে হবে। গ্র্যান্ড প্যারেন্ট স্টক ও প্যারেন্ট স্টক খামারের ২ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো খামার স্থাপন করা যাবে না।
খামার স্থাপনের পূর্বে পশু সম্পদ অধিদপ্তরের অনুমতি গ্রহণ বাধ্যতামূলক। খামার বা হ্যাচারি স্থাপন পরিকল্পনায় উন্নত জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থার উল্লেখ করতে হবে। খামার বা হ্যাচারি স্থাপন পরিকল্পনায় বর্জ্য স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে অপসারণের ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং বর্জ্য অপসারণের জন্য প্রয়োজনীয় স্থানের সংস্থানও থাকতে হবে।
মধুপুরের নিবন্ধিত রংধনু পোল্ট্রি ফার্মের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মো. আবু জাফর জানান, বড় খামারিরা সরকারকে সুবিধা দিচ্ছে। সরকারও তাদের সহযোগিতা করছেন। তবে এখন পর্যন্ত খামারিরা পোল্ট্রি খাতে কোনো ব্যাংক লোন পাচ্ছেন না।
এ সময় তিনি আরও জানান, মধুপুর এলাকার খামারিরা নীতিমালার তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র খামার স্থাপন করছে এবং খোলা জায়গায় পোল্ট্রি বর্জ্য ফেলে পরিবেশ দূষণ করছে। ঘাটাইলের রসুলপুর ও ধলাপাড়া ইউনিয়নের অধিকাংশ পোল্ট্রি খামারের বর্জ্য বংশাই নদীতে ফেলে নদীর পানিও দূষিত করছে।
সরেজমিনে খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খামার স্থাপন নীতিমালা কঠিন হওয়ায় অনেক খামারি সরকারের নিবন্ধন নিতে পারছেন না।
তারা জানান, বিভিন্ন সিন্ডিকেটের জন্য ছোট খামারিরা পদে পদে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বাচ্চা ক্রয় থেকে শুরু করে ডিম বিক্রি পর্যন্ত আয়ের ৪ ভাগের ৩ ভাগই চলে যাচ্ছে মধ্য সত্ত্বভোগিদের পকেটে। কোম্পানির সিন্ডিকেট থেকে ১০৫ টাকার বাচ্চা কিনতে হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়। আবার ঢাকার তেজগাঁও ও কারওয়ান বাজারে ডিম বিক্রেতা সমিতির সিন্ডিকেটের কারণে ডিমের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রান্তিক খামারিরা।
অপরদিকে নি¤œমানের কোম্পানির মেডিসিন ও ভেজাল খাদ্যের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন খামারি। গাজীপুরের কাশিমপুরস্থ গ্রাম বাংলা পোল্ট্রি অ্যান্ড ফিস ফিডের ভেজাল খাদ্যের জন্য ঘাটাইল উপজেলার সন্ধানপুর এবং রসুলপুর ইউনিয়নের ৮-১০টি খামারের মুরগি মারা যাওয়ার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগিরা।
গ্রাম বাংলা পোল্ট্রি অ্যান্ড ফিস ফিডের ডিলার মো. আবুল কালাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, ভেজাল খাদ্যের জন্য তার খামারসহ প্রায় ১০টি খামারের ৫০ লাখ টাকার মুরগি মারা গেছে। কোম্পানি ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত দেয়নি।
এ ব্যাপারে গ্রাম বাংলা পোল্ট্রি অ্যান্ড ফিস ফিডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রেজাউল করিম মুঠোফোনে জানান, এতগুলো মুরগি মারা যায়নি। আমি ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেব।
ধলাপাড়ার মেসার্স রকীব এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারি ও পাওয়ার ফিস ফিডের পরিবেশক মো. মাসুম সিদ্দিকী জানান, বাচ্চার সিন্ডিকেট ভাঙতে পারলে খামারিরা অনেক লাভবান হবেন।
এ ব্যাপারে কাজী ফার্মস লি. এর মার্কেটিং ম্যানেজার সুভাস জানান, বাচ্চার দাম কত তা আমার পক্ষে সাংবাদিকদের জানানোর অধিকার নেই।
ঘাটাইল উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, পোল্ট্রি শিল্প একটি উজ্জল ও সম্ভাবনাময় খাত। অনেক বেকার যুবক এ পেশায় কাজ করে সাবলম্বী হচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল কাশেম মোহাম্মদ শাহিন জানান, যারা নদীতে পোল্ট্রি খামারের বর্জ্য ফেলছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno