আজ- ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শনিবার  রাত ৮:২৩

মহান বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী আজ

 

বুলবুল মল্লিক:

আজ ভোরেও সূর্য উঠবে। তবে আজকের সূর্যের মর্ম বা মাহাত্ম্য অন্য যেকোনো দিনের চেয়ে আলাদা। আজ যে বাঙালির যুদ্ধজয়ের আনন্দের দিন, আত্মপরিচয় লাভের দিন।

৫০ বছর আগের এই দিনে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বিজয়ের ভেতর দিয়ে অর্জিত হয়েছিল জাতীয় স্বাধীনতা; বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছিল একটি স্বাধীন-সার্বভৌম ভূখণ্ড- বাংলাদেশ। দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে এই সূর্য তাই নতুন রূপে নতুন ‘আলোকের ঝর্ণাধারা’র বার্তা নিয়ে আসবে বাঙালির জীবনে। দিনটির আনন্দ তাই বাঙালি জাতির কাছে অপরিসীম।


আজ ১৬ ডিসেম্বর। স্বাধীনতা অর্জনের সুবর্ণ জয়ন্তী আজ। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ, দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয় এই বিজয়।

১৯৭১ সালের এই দিনে ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী হাতের অস্ত্র ফেলে মাথা নিচু করে আত্মসমর্পণ করেছিল বিজয়ী বীর বাঙালির সামনে। সাক্ষর করেছিল পরাজয়ের সনদে। সেই দিন থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আজ সেই মহান বিজয় দিবস। আজ লাল-সবুজের উৎসবের দিন।


বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবজনক অধ্যায় একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ। এ যুদ্ধের প্রাণপুরুষ বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ’৭১-এর ২৫ মার্চ কালরাতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হামলে পড়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের দোসররা। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পূর্ব পাকিস্তান নামে পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রদেশের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। জন্ম হয় নতুন লাল-সবুজের বাংলাদেশ।

শুরু হয় সশস্ত্র প্রতিরোধ, মহান মুক্তিযুদ্ধ। এরপর দীর্ঘ ৯ মাস সারাদেশে হানাদার বাহিনী ও তার দোসরদের গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, নারী নির্যাতনের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে। এক কোটি মানুষ জন্মভূমি ছেড়ে শরণার্থী হয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। গঠিত হয় মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে যৌথবাহিনী। বিজয়ের দিনটি জাতির জীবনে একই সঙ্গে বেদনারও। স্বাধীনতা অর্জনের জন্য চরম মূল্য দিতে হয়েছে বাঙালিকে। ৩০ লাখ শহীদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে বাংলার পলি মাটি, রক্তিম হয়েছে পদ্মা-মেঘনা-যমুনার ধারা। সম্ভ্রম হারিয়েছেন ৩ লাখ মা-বোন। অগণিত মানুষ নির্যাতিত হয়েছেন, সহ্য করছেন দুর্বিষহ যন্ত্রণা।

হানাদার পাকিস্তানি সেনারা জ্বালিয়ে দিয়েছে অসংখ্য ঘরবাড়ি। সম্পদহানি হয়েছে বিপুল। মহান বিজয় দিবসে কৃতজ্ঞ জাতি গভীর বেদনা ও বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে স্বাধীনতার জন্য যে বীর সন্তানরা আত্মদান করেছেন, যারা জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাদের।

একাত্তরে যারা বাংলাদেশের জন্মের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছিলেন তাদেরও সিংহভাগ ছিলেন তরুণ। তাই স্বাভাবিকভাবেই বর্তমান বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয়েছে তরুণ প্রজন্মের ওপর। এখন যারা তরুণ তাদেরও অনুভবে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের শানিত চেতনা। সেই চেতনা নিয়েই বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে।

অনেক সীমাবদ্ধতা আছে, তারপরও আমরা সাম্প্রতিককালে অনেক এগিয়ে গিয়েছি। এগিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাবই। এজন্যই বারবার বলা হয়, বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবে তরুণরা। সেই এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখাবেন প্রবীণরা। এ যুগ প্রতিযোগিতার। প্রতিযোগিতা মানে লড়াই। লড়াইয়ের জন্য চাই সাহস। আর সেই সাহস সঞ্চারিত করতে দরকার একটি সাহসী নেতৃত্ব। ১৯৭১ সালে জাতি পেয়েছিল হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ নেতা আর তার সাহসী নেতৃত্ব।


মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আজ জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করবে দেশের পরাধীনতার গ্লানি মোচনে প্রাণ উৎসর্গ করা বীর সন্তানদের।

সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের মানুষ শহীদের উদ্দেশে নিবেদন করবে শ্রদ্ধার ফুল। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের সব প্রান্তের মানুষ উদযাপন করবে বিজয় দিবস।


এবারের বিজয় দিবস উদযাপন হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে। এসব কারণে এবার বিজয় দিবস উদযাপন হতে পারত ব্যাপক আয়োজনের মধ্য দিয়ে। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno