আজ- ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার  রাত ১১:৫৬

মাত্র ৭১ টাকায় মোরগ পোলাও বিক্রিতে দেশপ্রেমের সমন্বয়!

 

বুলবুল মল্লিক:

টাঙ্গাইলে মাত্র ৭১ টাকায় ডিমসহ মোরগ পোলাও বিক্রির পাশাপাশি দেশপ্রেমের সমন্বয় করে অনন্য নজির সৃষ্টি করেছেন তিন যুবক। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতির এ সময়ে এমন উদ্যোগ অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি।

টাঙ্গাইল পাসপোর্ট ও নির্বাচন অফিস চত্বরে প্রায় তিন মাস ধরে লাযীয বিরিয়ানী নামে ভ্রাম্যামাণ হোটেলটি পরিচালিত হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ ওই হোটেলটি গড়ে তুলেছেন অনার্স সম্পন্ন ও পড়ুয়া স্থানীয় তিন যুবক। কমমূল্যে সুস্বাদু মোরগ পোলাও বিক্রির মহৎ উদ্যোগকে ক্রেতাসহ স্থানীয়রা স্বাগত জানিয়েছে।


উদ্যেক্তারা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতীয় বীরদের ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে এর মূল্য ৭১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ৭১ টাকায় ডিমসহ মোরগ পোলাওয়ের দামের ৭০ টাকা নিজেরা নেন বাকি ১ টাকা জমা রেখে হতদরিদ্রদের মাঝে খাবার সরবরাহ করছেন।


সরেজমিনে দেখা যায়, টাঙ্গাইল পাসপোর্ট ও নির্বাচন অফিস চত্বরে খোলা জায়গায় বসেছে ভ্রাম্যামাণ ‘লাযীয বিরিয়ানী’ নামীয় হোটেল। ক্রেতাদের জন্য ১০-১২টি প্লাস্টিকের টুল রাখা হয়েছে। এর কয়েকটিতে বসে ক্রেতারা ৭১ টাকার মোরগ পোলাও খাচ্ছেন। খাওয়া শেষে প্লাস্টিক জারের পানি পানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ হোটেলটিতে কোন বাবুর্চি বা শ্রমিক নেই।


টাঙ্গাইল শহর ঘুরে দেখা গেছে, হাজী বিরিয়ানী হাউসে ডিমসহ মোরগ পোলাও হাফপ্লেট ১৫০ ও ফুলপ্লেট ৩০০ টাকা, নান্না বিরিয়ানীতে শাহী মোরগ পোলাও হাফপ্লেট ১৫০ ও ফুলপ্লেট ২৮০ টাকা, নবাব বিরিয়ানী হাউজে মোরগ পোলাও হাফপ্লেট ১৪০ টাকা ও স্পেশাল শাহী বিরিয়ানী হাউজে মোরগ পোলাও হাফপ্লেট ১৪০ ও ফুলপ্লেট ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।


মাত্র ৭১ টাকায় ডিমসহ মোরগ পোলাও বিক্রির লাযীয বিরিয়ানীর উদ্যোক্তা এলেঙ্গা শামসুল হক মহাবিদ্যালয়ের একাউন্টিং অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র আব্দুল্লাহ জানান, টাঙ্গাইল পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের হাউজিং এলাকার বাসিন্দা রাজীব হোসেন, সাদিক ও তিনি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেছেন। তবে কারোরই চাকুরি ভালো লাগেনি।

এ কারণে তারা বাড়িতে ফিরে আসেন। তারা নিজেদের উপার্জনের পাশাপাশি সমাজের জন্য ‘কিছু করার’ চিন্তা করেন। সেই ভাবনা থেকেই হোটেল করা ও ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর সেনানীদের ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন হিসেবে তাদের ভ্রাম্যামাণ হোটেলের মোরগ পোলাও এর দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৭১ টাকা। এর মধ্যে ১ টাকা সমাজের হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। খেতে না পারা ব্যক্তিদের প্রতিদিনই জনপ্রতি জমা হওয়া ১ টাকা থেকে খাবার দেওয়া হচ্ছে।


তিনি জানান, সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার ব্যতিত পাঁচদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ওই হোটেল খোলা থাকে। হোটেলে গড়ে প্রতিদিন তাদের ১০-১২ কেজি চালের মোরগ পোলাও বিক্রি হচ্ছে। ওই পরিমাণ চালে ১০০-১২০ প্লেট মোরগ পোলাও তৈরি হয়ে থাকে।

ওই হোটেলের স্পেশাল শাহী দম বিরিয়ানী নামের মোরগ পোলাও তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে- চিনি গুড়া চাল, বয়লার মুরগী ও সরিষার তেল। এক প্লেট মোরগ পোলাও এ দেওয়া হচ্ছে- পোলাওসহ এক টুকরো মুরগীর মাংশ, হাফ ডিম, লেবু ও শশা। নিজেরাই রান্না করে পরিবেশন পর্যন্ত সকল কার্যক্রম পরিচালনা করায় এত কম টাকায় বিক্রির পরও তাদের লাভ হচ্ছে প্রায় ২৫-৩০ টাকা।


টাঙ্গাইল পাসপোর্ট অফিসের গ্রাহক ও হোটেলের ক্রেতা গোপালপুর উপজেলার ঝাওয়াইল গ্রামের সুমী জানান, সাধারণ মানুষের জন্য ৭১ টাকায় বিরিয়ানী তাদের কাছে অনেক কিছু। এই বিরিয়ানী যদি তারা হোটেল বা রেস্টুরেন্টে খেতে যান- তাহলে সর্বনিম্ন বিল হবে ১৮০-১৪০ টাকা। পরিবেশসহ খাবারের মানও ভালো। ৭১ টাকায় এক প্লেট পোলাও, এক টুকরো মুরগীর মাংশ, ডিম, লেবু ও শশা পাওয়া যাচ্ছে। সরিষার তেল দিয়ে খাবার রান্না করায় স্বাস্থ্য সম্মত ও খুবই সুস্বাদু।


পাসপোর্ট অফিসে আসা অপর ক্রেতা এম রতন মিয়া জানান, ‘টাঙ্গাইল ফুডিস’ নামে একটি গ্রুপে এই হোটেলের খোঁজ পান তিনি। বেশ কয়েকবার এই হোটেলের মোরগ পোলাও খেয়েছেন। খুবই মান সম্মত। পাসপোর্ট অফিসে কয়েকজন বন্ধু মিলে এসেছেন। এই সুযোগে ও খাওয়ার জন্য পাঁচ প্যাকেট নেওয়া হয়েছে।


তিনি জানান, অনেকেই ভাবতে পারেন এই মোরগ পোলাও এর দাম কম তাই মান ভালো হবেনা। তাদের বলছি- এমনটা নয়। এই হোটেলের মোরগ পোলাও খুবই মান সম্মত ও সুস্বাদু। রিকশা-ভ্যান চালকসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখা হয়েছে এই মোরগ পোলাও এর দাম।


লাযীয বিরিয়ানী নামের ওই ভ্রাম্যমাণ হোটেলের মালিক রাজীব হোসেন জানান, মানুষকে কম দামে ভালো খাবার দেওয়ার জন্য তারা প্রাথমিকভাবে এটা শুরু করেছেন। শুরুর পর তারা ক্রেতাদের ভালো সাড়া পান। এরই মধ্যে ক্রেতারা এর মান ভালো বলে ভীর করতে শুরুর করেছেন।


তিনি জানান, নিজেরা প্রকৃত বাবুর্চি না হওয়ায় প্রথম দিকে রান্নায় কিছুটা সমস্যা হলেও আড়াই মাসের বেশি সময় পার হওয়ায় এখন তারা মান সম্মত রান্না করতে পারছেন। এই খাবার প্রতিদিন দুপুরে তারা নিজেরাও খেয়ে থাকেন।
তিনি আরও জানান, ৭১ টাকার ১ টাকা জমা রেখে সমাজের খেতে না পারা ব্যক্তিদের সহায়তা করা হচ্ছে এবং খাবার বাবদ তারা ৭০ টাকা নিচ্ছেন।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno