আজ- ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ রবিবার  সকাল ১১:২৬

মির্জাপুরে লুট হচ্ছে ফসলি জমির টপসয়েল

 

দৃষ্টি নিউজ:

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে রাতের আঁধারে ফসলি জমির উপরের মাটি অর্থাৎ টপ সয়েল অবৈধভাবে কেটে নেওয়া হচ্ছে। মাটি আনা-নেওয়ার জন্য উপজেলার বানাইল ইউনিয়নের নরদানা গ্রামের খালে আড়াআড়ি বাঁধ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের চোখ আড়াল করতে অপরাধীরা সন্ধ্যা থেকে জমির টপ সয়েল লুট করা শুরু করে।


স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ইউনিয়ন পরিষদের এক সাবেক সদস্যের নেতৃত্বে নরদানা গ্রামের ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। মাটি কাটার প্রতিবাদ করলে তার সহযোগীরা এলাকার লোকজনকে মারধর ও বাড়ি থেকে তুলে নেওয়ার হুমকি দিয়ে থাকেন। এজন্য স্থানীয়রা কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়না।


কৃষি বিষেশজ্ঞরা জানান, ফসলি জমির উপরিভাগের ১০ থেকে ১২ ইঞ্চির মধ্যে মাটির জৈব উপাদান থাকে। সেই মাটি কাটা হলে জমির জৈব উপাদান চলে যায়। এতে জমির স্থায়ী ক্ষতি হয়। ফসলের উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়। ফসলি জমির মাটি কাটা তাই বেআইনি।


সরেজমিনে দেখা যায়, নরদানা গ্রামের খালের পানি প্রবাহ পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে লৌহজং নদীর সংযোগস্থলে যাচ্ছে। খালের শেষ মাথার দিকে প্রায় ১৫ ফুট উঁচু করে মাটির বাঁধ দেওয়া হয়েছে। বাঁধ দেওয়ার ফলে খালের পূর্ব পাশ থেকে পশ্চিম পাশে পানি জমাট বেধে উচ্চতা বেড়েছে।

বাঁধের পাশে এক্সকাভেটর(খননযন্ত্র) রাখা হয়েছে। এক্সকাভেটর(খননযন্ত্র) দিয়ে ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে ট্রাক্টরে ভরে বাঁধের উপর দিয়ে আনা-নেওয়া করা হয়। খালের পাশে থাকা বিভিন্ন ফসলি জমির টপ সয়েল সহ গভীর গর্ত করে মাটি কাটা হচ্ছে।


মাটি আনা-নেওয়ার কাজে নিয়োজিত ট্রাক্টর চালক মো. জিন্নত মিয়া জানান, তারা দিনে মাটি আনা-নেওয়া করেন। এ জন্য ট্রাক্টরের মালিক তাকে দিনে ৬০০ টাকা হারে মজুরি দেন। আর রাতে ট্রাকযোগে মাটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়।


এলাকাবাসীরা জানায়, প্রায় ৪০ ফুট প্রশস্তের ওই খাল ২০০ বছরের বেশি পুরানো। প্রায় ৪০ বছর আগে খালটি খনন করা হয়েছিল। খালটির কারণে পার্শ্ববর্তী পাটুলি, বানাইল, বাংগল্যা, কালা ভাতগ্রাম ও টেগুরী এলাকার জমিতে পানি সরকরাহ করে ফসল উৎপাদন করা হয়। বাঁধের কারণে এ বছর সরিষা উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।


নরদানা গ্রামের মোহাম্মদ জিন্নাহ ব্যবসায়ীদের কাছে জমির মাটি বিক্রি করেছেন। পাশাপাশি তিনি মাটির ব্যবসাও করেন। তিনি জানান, তার জমিতে সরিষার আবাদ করেছিলেন। ভালো উৎপাদন না হওয়ার আশঙ্কায় তিনিসহ কয়েকজন জমির মাটি বিক্রি করে দিয়েছেন। সেগুলো জমিগুলোই গর্ত করে কাটা হচ্ছে।


এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মির্জাপুর উপজেলার জামুর্কী ইউপির সাবেক সদস্য আগধল্যা গ্রামের সাদেক হোসেন, বরাটি গ্রামের তুষার বিশ্বাস, নরদানা গ্রামের মোহাম্মদ জিন্নাহ, ভাষানী মিয়া, রুবেল মিয়াসহ কয়েকজন মিলে ফসলি জমির মাটি কেটে খালের উপর বাঁধ দিয়ে পরিবহণ করছেন। তারা নরদানা গ্রামের ওপর দিয়ে প্রবহমান খালের ওপর আড়াআড়ি বাঁধ দেন।

কিছুদিন আগে তারা ড্রামট্রাক(বড় আকারের ট্রাক) দিয়ে খালের উত্তর পাড়ের ফসলি জমি থেকে এক্সকাভেটর(মাটি কাটার যন্ত্র) দিয়ে মাটি কেটে এনে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি শুরু করেন। স্থানীয় প্রশাসনের ঝামেলা এড়াতে তারা প্রতিদিন সন্ধ্যা রাত থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত মাটি কাটার কাজ করছেন। আর দিনে ট্রাক্টর দিয়ে মাটি আনা-নেওয়া করা হয়। পরে বড় ট্রাক দিয়ে বিভিন্ন স্থানে মাটি সরবরাহ করা হয়। গ্রামের ভেতর দিয়ে মাটিবোঝাই ট্রাক ও ট্রাক্টর চলাচল করায় গ্রামীণ রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। রাতে এক্সকাভেটর ও ট্রাক্টর-ট্রাকের শব্দে তারা ঘুমাতে পারেন না। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায়ও বিঘ্ন ঘটে।


এলাকাবাসী আরও জানায়, মাটি কাটার প্রতিবাদ করলে ওই চক্রের লোকজন তাদের মারধর করেন। ইতোপূর্বে কয়েকজনকে মারপিটও করেছে। কয়েকজনকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকিও দিয়েছেন। মাটি ব্যবসায়ী তুষার বিশ্বাস ও সাবেক ইউপি সদস্য সাদেক হোসেন এসব করেছেন।


মাটি ব্যবসায়ী তুষার বিশ্বাস জানান, ধল্যার সাদেক মেম্বার, নরদানার ভাষানীসহ ১৭ জন পার্টনার রয়েছেন। ২৫০ টাকা গাড়ি দরে মাটি কিনে তিনি নিজের বাসায় ফেলেন। রাতে ট্রাকে মাটি আনা-নেওয়া করলে কেউ কিছু বলে না বিধায় তারা রাতে মাটি আনা-নেওয়া করেন।


এলাকার প্রতিবাদীদের ভয় দেখানোর বিষয়ে তুষার বিশ্বাস জানান, কেউ মাটি কাটার প্রতিবাদ করেনা। প্রতিবাদের কথা বলে কেউ কেউ ‘চান্দামান্দা’ চায়- তাদেরকেই কিছুটা ধমক-ধামক দিতে হয়। তিনি জানান, রাতে গাড়ি চলে বলে নরদানা গ্রামের রাজীব চাঁদা চেয়েছে।


অভিযোগের বিষয়ে সাবেক ইউপি সদস্য সাদেক হোসেন জানান, তিনি মাটির ব্যবসায় জড়িত নন। তবে মাটি কাটার যন্ত্র ও ট্রাকে তিনি তেল সরবরাহ করেন। এতে তার কিছুটা লাভ হয়।


তিনি আরও জানান, ছেলে-পেলেরা মাটি কাটছে- এলাকার তিনটি স্থানে তিনটি গ্রুপ মাটি কাটছে। তারা মাটি ব্যবসায়ী তুষার বিশ্বাসকে শেল্টার দেন।


মির্জাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাসুদুর রহমান জানান, বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা (সংশোধন) আইন অনুযায়ী ফসলি জমি বা উদ্ভিদ বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকলে- সেখান থেকে বালু বা মাটি তোলা যাবে না। খালে কোনোভাবেই বাঁধ দেওয়া যাবে না। অবৈধ মাটি কাটার বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno