আজ- ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ রবিবার  সকাল ১১:৫৬

যমুনার পূর্ব-পশ্চিম দ্বন্দ্বে বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যাহত

 

দৃষ্টি নিউজ:

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের চরচন্দনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন ২০২১ সালের ১৮ জুলাই যমুনা নদীতে বিলীন হওয়ায় এক বছরেও পাঠদান চালু হয়নি।

যমুুনার পূর্ব-পশ্চিম তীরে বিদ্যালয়টি স্থানান্তরে দ্বন্দ্বের কারণে শিক্ষা কার্যক্রম চালু না হওয়ায় শ’ শ’ শিশু পড়ালেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে বিদ্যালয়ের শিশুরা মাদক সেবন সহ নানা অপরাধে জড়ানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।


জানাগেছে, ১৯৩৮ সালে ভূঞাপুর সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে চরচন্দনী সকরারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০২১ সালের ১৮ জুলাই নদী ভাঙনে বিদ্যালয়ের ভবনটি যমুনার গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। নদীর পূর্ব তীরে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকায় ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে স্থানীয় সংসদ সদস্য ছোট তানভীর হাসান মনির বিদ্যালয়টি নদীর পশ্চিম পাশে স্থানান্তরের জন্য ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশনা দেন।

সে মোতাবেক বিদ্যালয়টি নদীর পশ্চিম তীরে স্থানান্তরের জন্য ওই বছরের ২২ নভেম্বর তৎকালীন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবদুল আজিজ সরেজমিন পরিদর্শন করেন। ২৫ অক্টোবর জেলা শিক্ষা অফিসার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে প্রতিবেদন পাঠান।


প্রতিবেদনে শিক্ষা কর্মকর্তা বলা হয়, ২০২১ শিক্ষাবর্ষে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১৫৮ জন শিক্ষার্থী ভর্তি ছিল। নদীর পূর্ব পাড়ের আশে পাশের এলাকায় একাধিক সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকায় বিদ্যালয়টি পশ্চিম তীরে স্থানান্তর করা যেতে পারে।

৭ ডিসেম্বর চিঠির মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সেকশন-২ এর সহকারী পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) নাসরিন সুলতানা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে বিদ্যালয়টি নদীর পশ্চিম তীরে পুনঃস্থাপনের জন্য জমি প্রদানে আগ্রহী জমিদাতার অঙ্গীকারনামা, জমির দাগ, খতিয়ান নং ও জমির পরিমাণ জানতে চান। ২৬ ডিসেম্বর জেলা শিক্ষা অফিসার জমিদাতার অঙ্গীকারনামা, দাগ ও খতিয়ান নং এবং জমির পরিমাণ উল্লেখ করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে অবগত করেন।

কিন্তু জেলা শিক্ষা অফিসার আবদুল আজিজের বদলি জনিত কারণে বিষয়টি স্তিমিত হয়ে যায়। চলতি বছরের ৩০ জুন বিদ্যালয়টি পুনঃস্থাপনের জন্য রেকর্ডপত্র সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানোর জন্য সহকারী পরিচালক নাসরিন সুলতানা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেন।

১৪ জুলাই বিদ্যালয়টি নদীর পশ্চিম তীরে স্থাপনের জন্য নতুর যোগদানকৃত জেলা শিক্ষা অফিসার আবুল কালাম আজাদ প্রয়োজনীয় সকল তথ্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠান।


বিদ্যালয়ের পশ্চিম তীরের শিক্ষার্থী সাদিয়া, লামিয়া, আছিয়া সহ অনেকেই জানায়, বিদ্যালয়টি যমুনার পেটে চলে যাওয়ার পর তারা পড়াশোনা করতে পারছে না। নদীর পশ্চিম তীরে তাদের আশ-পাশে কোন স্কুল নাই তাই বাড়িতে খেলাধূলা করে সময় কাটায়।

স্কুলটি নদীর পূর্বতীরে প্রতিষ্ঠিত হলেও নদী ভাঙন পশ্চিম তীরকে বিভাজন করায় যাতায়াতে অসুবিধা হয়। তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিদ্যালয়টি নদীর পশ্চিম তীরে চালু করার দাবি জানায়।


বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আব্দুল কাইয়ুম জানান, করোনার আগে তারা স্কুলে গিয়েছে। করোনাকালীন সময়ে বিদ্যালয়ের ভবন ভাঙনের কবলে পড়ে নদীতে বিলীন হয়েছে। করোনার পর অন্যান্য স্কুলে ক্লাস হলেও তাদের ক্লাস এখনও চালু হয়নি। এখন পড়ালেখার সময়ে তারা খেলাধূলা আর ঘুরে বেড়ায়।


নাম প্রকাশ না করে এক অভিভাবক জানান, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুল মোর্শেদের যাতায়াতে সুবিধার জন্য তিনি বিদ্যালয়টি নদীর পূর্বতীরে রাখার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে পূর্বতীরে রাখার অভিভাবকদের বায়বীয় দাবি উত্থাপন করেছেন।

তার গাফিলতির কারণে এখনও বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়নি। তিনি সহ অন্য শিক্ষকরা বসে বসে সরকারি বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন। এতে ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি মাদক এবং সন্ত্রাসে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।


অভিভাবক সাইফুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ও শাহজাহান মিয়া জানান, স্কুল ভবন না থাকায় তাদের ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কন্যা শিশুরা বাড়িতে খেলাধূলা করে আর ঘুরে বেড়ায়। ছেলে শিক্ষার্থীরা বাপের সাথে নদীতে মাছ ধরতে যায়। দ্রুত স্কুলে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা প্রয়োজন। অন্যথায় বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়বে।


বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুল মোর্শেদ জানান, বাধ্য হয়ে তারা বসে বসে সরকারি বেতন-ভাতা নিচ্ছেন। পূর্ব-পশ্চিম তীরে বিদ্যালয় স্থানান্তরের বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।


বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির(গভর্নিং বডি) সভাপতি আব্দুল লতিফ আকন্দ জানান, বিদ্যালয় চালু না হওয়ায় নদীর পশ্চিম প্রান্তের ছেলে-মেয়েরা প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিদ্যালয়টি দ্রুততম সময়ের মধ্যে চালু করার জোড় দাবি জানান তিনি।


টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আবুল কালাম আজাদ জানান, স্কুলটি যমুনা নদীর পশ্চিম প্রান্তে নতুন করে স্থাপন করা হবে। এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা পেলেই কাজ শুরু করা হবে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno