আজ- ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ রবিবার  সকাল ৬:৩৫

শহীদ বুদ্দিজীবী দিবস আজ

 

দৃষ্টি নিউজ:

অঅজ ১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর, বাঙালির চূড়ান্ত বিজয় যখন একেবারেই নিশ্চিত ঠিক তখনই দেশের প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।

এই দিনটিকে ধরা হয় বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবস হিসেবে। বুদ্ধিজীবী দিবসের ঠিক দুইদিন পর যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজীর নেতৃত্বে বর্বর পাকিস্তান বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানের এ দেশীয় দোসর আলবদরের সাহায্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ও বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, সংস্কৃতি কর্মীসহ বিভিন্ন পেশার বরেণ্য ব্যক্তিদের অপহরণ করা হয়। পরে নিদাররুণ যন্ত্রণা দিয়ে রায়েরবাজার ও মিরপুরে তাদের হত্যা করা হয়।

এ দুটি স্থান এখন বধ্যভূমি হিসেবে সংরক্ষিত। মুক্তিযুদ্ধের শেষ লগ্নে ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে আলবদর বাহিনী আরো অনেক বুদ্ধিজীবীকে ধরে নিয়ে মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে স্থাপিত আলবদর ঘাঁটিতে নির্যাতনের পর রায়েরবাজার বধ্যভূমি ও মিরপুর কবরস্থানে নিয়ে হত্যা করে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক একাধিক গবেষণা থেকে জানা গেছে, একাত্তরের ডিসেম্বর থেকেই বেছে বেছে বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে গেছে পাকিস্তানি কসাইরা। ওই মাসের ১২ তারিখ থেকে ১৫ ও ১৬ তারিখ পর্যন্ত ওদের ছদ্মবেশী গাড়িগুলো পাড়ায় পাড়ায় হানা দিয়েছে বারবার।

জানা গেছে, প্রায় দেড়ঘণ্টার মধ্যে তাদের তুলে নেয় তারা। সকাল সাড়ে ৮টায় ডাক্তার মূর্তজাকে, তার আগে একজনকে গাড়িতে চোখ বাঁধা অবস্থায় দেখা গিয়েছিল। বিজয় দিবসের বেলা ১০টা পর্যন্ত ওরা হায়েনার মতো খুঁজে বেড়িয়েছে শিকার। যাদের তুলে নেয়া হয়েছিল ১৪ তারিখে, তারা কেউ আর ফিরে আসেননি।

বাহাত্তর সালের ২ জানুয়ারি মিরপুর থানা থেকে পাড়ায় খবর আসে শিয়ালবাড়ীর বধ্যভূমিতে কিছু লাশের সন্ধান পাওয়া গেছে। পরের দিন ৩ জানুয়ারি সকালে নিখোঁজদের আত্মীয়স্বজন সেখানে লাশ শনাক্ত করতে যেতে পারবেন। অনেকেই সেদিন সকাল সাড়ে ৮টায় শিয়ালবাড়ীতে লাশ শনাক্ত করতে যান। আসলে ২০ দিন পর লাশ শনাক্ত করা ছিল কঠিন কাজ।

বাসন্তী গুহঠাকুরতা থাকতেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের আবাসিক ভবনে। অপারেশন সার্চলাইটের নামে পাকিস্তানি খান সেনাদের বিভৎস নির্যাতনের রাতে গুলিতে আহত হয়ে মারা যান তার স্বামী অধ্যাপক ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা। যুদ্ধের দীর্ঘ নয়মাস একমাত্র কন্যা অধ্যাপক ড. মেঘনা গুহঠাকুরতাকে নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই করেছেন।

শুধু জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতাই নন; ওই রাতে শহীদ হন উপমহাদেশের প্রখ্যাত দার্শনিক অধ্যাপক ড. জি সি দেব, ড. অনুপ দ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা।

ভয়াল রাতে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় এলাকা থেকে যে আটজনকে পাকিস্তানিরা তুলে নিয়ে যায় তারা সবাই ফিরে এসেছেন ঠিকই, তবে জীবিত নয়, ট্রাকে চড়ে বাক্সবন্দি লাশ হয়ে। ইয়াহিয়া- ভুট্টোর নীল নকশার শিকার এরা।

আসন্ন বিজয়ের মুহূর্তে বিহারি-বাঙালি-আলবদরসহ হানাদারদের দোসররা বিষাক্ত সাপের ফণা তুলে মরণ ছোবল দিয়েছে প্রতিভাধর এই মুক্তচিন্তার বুদ্ধিজীবীদের।

স্বাধীনতার ৪৯ বছরের শেষ প্রান্তে এসে রোববার(১৩ ডিসেম্বর) এক হাজার ২২২ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা অনুমোদন দিয়েছে সরকার। চলতি মাসেই আনুষ্ঠানিকভাবে এ তালিকা প্রকাশ করা হবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের তালিকা আরও প্রকাশ হবে।

এদিকে সরকার যখন শহীদ বুদ্ধিজীবীর তালিকা প্রকাশের কাজ শুরু করেছে, তখনো নির্ধারণ হয়নি শহীদ বুদ্ধিজীবীর সংজ্ঞা। বুদ্ধিজীবীর তালিকা কোন প্রক্রিয়ায় হবে, তাও নির্ধারণ হয়নি। গতকাল বুদ্ধিজীবীর তালিকা প্রণয়ন কমিটির প্রথম বৈঠক শেষে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমন তথ্য জানান।

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে আরো যে কজনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় তাদের মধ্যে অধ্যাপক মুনির চৌধুরী, ডা. আলিম চৌধুরী, অধ্যাপক মুনিরুজ্জামান, ড. ফজলে রাব্বী, সিরাজ উদ্দিন হোসেন, শহীদুল্লাহ কায়সার, অধ্যাপক রশীদুল হাসান, ড. আবুল খায়ের, ড. মুর্তজা, সাংবাদিক খন্দকার আবু তাহের, নিজামউদ্দিন আহমেদ, এস এ মান্নান (লাডু ভাই), এ এন এম গোলাম মোস্তফা, সৈয়দ নাজমুল হক, সেলিনা পারভীন অন্যতম।

বাসন্তী গুহঠাকুরতার মতে, নীল নকশার রেখা অংকন শুরু হয়েছিল একাত্তরের পয়লা মার্চের আগেই সত্তরের ১৭ ডিসেম্বর গণভোট বা তারো অনেক আগে ঊনসত্তরের গণ আন্দোলনের সময় থেকেই, কিংবা বাহান্নর ভাষা আন্দোলনের পর।

একাত্তরে তারা ছক কষেই যুদ্ধে নামে। যুদ্ধতো নয়, কেবল নিরস্ত্র মানুষ নিধন। প্রথমে ওদের এলোপাতাড়ি মারা, তারপর শহরে, গ্রামে-গঞ্জে বেছে বেছে ধনী, ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী নিধন করে নদীতে, খালে ফেলে দেয়া।

অনেকে মনে করেন, চরম বিপর্যয় আসন্ন, পরাজয় একেবারেই সন্নিকটে তখনই তারা সেই পরিকল্পনা কার্যকর করে। তালিকাভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের চোখ বেঁধে নিয়ে হত্যা করে। তারা স্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে এভাবেই অন্ধকার করার পাঁয়তারা করেছিল।

অপারেশন সার্চ লাইটের নামে একাত্তরের ২৫ মার্চ যখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাঙালি নিধনে নামে তখনই দেশে এবং বিদেশে একটি উদ্বেগের বিষয় ছিল জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের এভাবে হত্যা করা হতে পারে।

আজ সেই শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। প্রতিবছর বাঙালি অবনত মস্তকে পালন করে দিনটি। শ্রদ্ধা জানায় জাতির বীর সন্তানদের প্রতি। ভিড় জমে মিরপুর ও রায়েরবাগ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে। আজকের এই দিবসটি উপলক্ষে জাতীয়ভাবে নেয়া হয়েছে বিস্তারিত কর্মসূচি।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। তবে এবার করোনা মহামারির কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই বুদ্ধিজীবী দিবসের কর্মসূচি পালিত হবে।

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে জাতীয় ও কালো পতাকা অর্ধনমিত করন, মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ও রায়ের বাজার বধ্যভ‚মিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ।

সকাল ৯টায় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন। সকাল সাড়ে ৯টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে এবং সকাল ১০টায় রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ।

মইনুদ্দীন-আশরাফুজ্জামান এখনো অধরা : একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী ও বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের অনেকের বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। কারো কারো বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় ঘোষিত হয়েছে। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়েছে।

জামায়াতের অপর নেতা মো. কামারুজ্জামান ও বুদ্ধিজীবী হত্যার অন্যতম হোতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। ২০১৬ সালের ১১ মে মুক্তিযুদ্ধকালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের নীলনকশা বাস্তবায়নকারী গুপ্তঘাতক আলবদর বাহিনীর প্রধান ও জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়।

তবে বুদ্ধিজীবী হত্যায় সরাসরি জড়িত চৌধুরী মইনুউদ্দীন ও আশরাফুজ্জামান খান পলাতক থাকায় তাদের বিচার এখনো কার্যকর সম্ভব হয়নি।

চৌধুরী মইনুদ্দীন যুক্তরাজ্য এবং আশরাফুজ্জামান খান যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক রয়েছে। তাদের ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ডদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno