প্রথম পাতা / টাঙ্গাইল / কালিহাতী /
সিদ্দিকী পরিবারের দুই ভাই স্বতন্ত্র- দুই ভাই ঐক্যফ্রণ্টের হয়ে নির্বাচনে লড়বেন
By দৃষ্টি টিভি on ২৬ নভেম্বর, ২০১৮ ৪:২৩ অপরাহ্ন / no comments
বুলবুল মল্লিক:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে টাঙ্গাইলের প্রভাবশালী সিদ্দিকী পরিবারের চার ভাই আলোচনায় রয়েছেন। এরমধ্যে দুই ভাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এবং অপর দুই ভাই জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টের হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সবার কাছে গ্রহনযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে চার ভাইয়ের তিন ভাই আগামি জাতীয় সংসদে যেতে পারেন বলে মনে করছেন সিদ্দিকী পরিবারের সমর্থকরা।
হ্যাভিওয়েট প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৪(কালিহাতী) সংসদীয় আসন থেকে স্বতন্ত্র, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টের প্রার্থী হিসেবে টাঙ্গাইল-৮(সখিপুর-বাসাইল), তাদের ছোটভাই মুরাদ সিদ্দিকী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে টাঙ্গাইল-৫(সদর) এবং অপর ছোট ভাই শামীম আল মনসুর আজাদ সিদ্দিকী জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টের প্রার্থী হিসেবে টাঙ্গাইল-৪(কালিহাতী) আসন থেকে নির্বাচনে লড়বেন। একাদশ জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব পেতে তারা দৃঢ় প্রত্যয়ী এবং সে লক্ষ্যে তাদের কর্মী-সমর্থকরা নির্বাচনী এলাকায় প্রচার-প্রচারণাও চালাচ্ছেন। তাঁরা প্রত্যেকে নিজেদের মতো করে কাজ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে কাদের সিদ্দিকী ও মুরাদ সিদ্দিকী দীর্ঘদিন ধরেই নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়িয়েছেন। সিদ্দিকীদের চার ভাইয়ের নির্বাচন লড়ার বিষয়টি নিয়ে টাঙ্গাইলের রাজনীতিতে বর্তমানে কঠোর হিসাব-নিকাশ চলছে ও মানুষের কাছে ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে। নিজের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের পাশাপাশি পারিবারিক ঐতিহ্য-কর্তৃত্ব¡ ধরে রাখতে এই নির্বাচন সিদ্দিকীদের অ্যাসিড চেষ্ট বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ।
আবদুল লতিফ সিদ্দিকী:
মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী কালিহাতী থেকে থেকে স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন। রোববার(২৫ নভেম্বর) সকালে তাঁর কালিহাতীর বাসায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার অনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন তিনি। সে লক্ষে লতিফ সিদ্দিকীর কর্মী সমর্থকরা মোট ভোটারের এক শতাংশ স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন।
লতিফ সিদ্দিকী কালিহাতী থেকে ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য, ১৯৭৩, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে মন্ত্রীত্ব লাভ করেন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। ওই বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে টাঙ্গাইল সমিতি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে হজ্ব ও তাবলিগ জামাত নিয়ে বক্তব্য দেন তিনি। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিভিন্ন সংগঠন লতিফ সিদ্দিকীর বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করে। তাঁর বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন আদালতে ২২টি মামলা হয়। পরে তিনি দেশে এসে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। একপর্যায়ে তিনি মন্ত্রিত্ব হারান এবং দল থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। পরে তিনি জাতীয় সংসদে ঐতিহাসিক বক্তব্য দিয়ে সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তারপর থেকে তিনি রাজনীতিতে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় ছিলেন। হঠাৎ করেই তিনি আবার নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন।
লতিফ সিদ্দিকী টাঙ্গাইলের কালিহাতী সদরে তাঁর নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, তিনি স্বতন্ত্র প্রতীকে নির্বাচন করতে পারেন। তবে তিনি আগামি ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। নিজেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের বাইরের কেউ নই। জননেত্রী শেখ হাসিনাকে এই আসনটি উপহার দেয়ার জন্যই নির্বাচনে লড়ব। আমি যখন পদত্যাগ করি তখনো বলেছিলাম, আমি একজন মুসলিম, আমি একজন আওয়ামী লীগার। আওয়ামী লীগ জনস্বার্থের দল আর আমি জনগনের সেবক। জনগণ আমাকে চায়। সেই জন্য আমি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চাই। মানুষের ভালবাসা ও চাওয়া থেকেই নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম:
মহান মুক্তিযুদ্ধে কাদেরীয়া বাহিনীর প্রধান ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টের অন্যতম নেতা। কাদের সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৮(সখিপুর-বাসাইল) আসন থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টের হয়ে নির্বাচন করছেন- এটা প্রায় নিশ্চিত।
কাদের সিদ্দিকী ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে টাঙ্গাইল-৮(সখিপুর-বাসাইল) থেকে এমপি নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বেড়িয়ে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রয়াত শওকত মোমেন শাজাহানের কাছে পরাজিত হন তিনি। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে নিজ দলের প্রার্থী হিসেবে তিনি ফের এমপি নির্বাচিত হন।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের টাঙ্গাইল জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৮ ও টাঙ্গাইল-৪ এই দুইটি আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। ঐক্যফ্রণ্টের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পথে। তবে ঐক্যফ্রণ্টের প্রার্থী হিসেবে টাঙ্গাইল-৮(সখিপুর-বাসাইল) আসনে বঙ্গবীরের নির্বাচন করবেন- এটা প্রায় নিশ্চিত। টাঙ্গাইল-৪(কালিহাতী) আসনটি তিনি ছোট ভাই শামীম আল মনসুর আজাদ সিদ্দিকীকে ছেড়ে দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই আসন থেকে শামীম আল মনসুর আজাদ সিদ্দিকীও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন। রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, কাদের সিদ্দিকীর নির্বাচনে আইনী জটিলতা নিরসনের প্রক্রিয়া চলছে। আশা করি তার নির্বাচন করার ক্ষেত্রে এবার কোন সমস্যা থাকবে না।
মুরাদ সিদ্দিকী:
টাঙ্গাইল-৫(সদর) আসনে মুরাদ সিদ্দিকী ২০০১ ও ২০০৮ সালে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ থেকে এবং ২০১৪ সালে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে উল্লেখযোগ্য ভোট পেয়ে পরাজিত হন। তিনি এবার ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণের উদ্দেশে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর থেকে নিয়মিত সভা, সেমিনার, উঠান বৈঠক ও জনসভা করে চলেছেন। মুরাদ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহও করেছিলেন। তিনি জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টের প্রার্থী হতে পারেন এমন আলোচনা ছিল। পরে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন।
নির্বাচন সম্পর্কে মুরাদ সিদ্দিকী বলেন, টাঙ্গাইল সদরের উন্নয়ন এবং মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছি। জনগণ আমার সাথে আছেন। ঐক্যফ্রণ্টে যোগদান করবেন কি না এমন প্রশ্নে মুরাদ সিদ্দিকী বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টে যাওয়ার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেই নাই। তবে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেই জনগনের কাছে কাছে বেশি গ্রহনযোগ্য বলে তাঁর কর্মী-সমর্থকরা মনে করেন।
শামীম আল মনসুর আজাদ সিদ্দিকী:
টাঙ্গাইলের বনেদী সিদ্দিকী পরিবারের ছোট সন্তান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর ছোট ভাই শামীম আল মনসুর আজাদ সিদ্দিকী একসময় ছাত্রলীগের সক্রিয় নেতা ছিলেন। তিনি করটিয়া সা’দত কলেজের সাবেক সহ-সভাপতি(ভিপি) ছিলেন। পরে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ গঠিত হলে ভাইয়ের দলে চলে যান। বর্তমানে তিনি রাজনীতিতে খুব একটা সক্রিয় নন। তবে দলের (কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ) নানা কর্মসূচিতে তাঁকে অংশ নিতে দেখা যায়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি টাঙ্গাইল-৪(কালিহাতী) আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টের অন্যতম শরীক কৃষক শ্রমিক জনতালীগের দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। মেঝ ভাই বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী এ আসন ছেড়ে দিলে তিনি জাতীয় ঐক্যফ্রণ্টের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
উল্লেখ্য, এই সিদ্দিকী পরিবারের পৈত্রিক নিবাস কালিহাতী উপজেলার নাগবাড়ী ইউনিয়নের ছাতিহাটী গ্রামে।
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস
সর্বশেষ আপডেট
-
ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেনের সময়সূচি ও ভাড়ার তালিকা
-
তিন দিন কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে বজ্রপাত-শিলাবৃষ্টির শঙ্কা
-
পথ-ঘাট-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রক্ত রঙের ছড়াছড়ি!
-
ভূঞাপুর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি বহিষ্কার
-
ঘাটাইলে বজ্রপাতে হোটেল শ্রমিকের মৃত্যু
-
মধুপুরে বারোয়ারী মন্দির ও বনে অগ্নিকাণ্ডে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ!
-
ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
-
মির্জাপুরে গভীর রাতে কৃষি শ্রমিককে কুপিয়ে হত্যা
-
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস :: তথ্য প্রাপ্তির সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে- বেড়েছে হয়রানিও