আজ- ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার  ভোর ৫:৩৯

করোনায় গীতিকবি ফজল-এ-খোদার ইন্তেকাল

 

দৃষ্টি নিউজ:

আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে কোটি কোটি বাঙালিকে উদ্দীপ্ত করেছিল একটি গান। ‘সালাম সালাম হাজার সালাম/সকল শহীদ স্মরণে/আমার হৃদয় রেখে যেতে চাই/তাদের স্মৃতি চরনে।’

যার হাতের কলম দিয়ে এ কালজয়ী গান লেখা হয়েছিল তিনি গীতিকবি ফজল-এ-খোদা। গানটির সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী মোহাম্মদ আবদুল জব্বার।

বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসের অন্যতম অনুপ্রেরণা এ গানটির গীতিকবি ফজল-এ-খোদা আর নেই। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোববার ভোর ৪টায় ইন্তেকাল করেন তিনি (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

তার ছেলে সজীব ওনাসিস জানিয়েছেন, রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে রায়ের বাজার কবরস্থানে বাবাকে সমাহিত করা হয়েছে। তার আগে কবরস্থানের পাশের মসজিদে জানাজা হয়।

ফজল-এ-খোদার স্ত্রী মাহমুদা সুলতানাও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার তিন ছেলে ওয়াসিফ-এ-খোদা, ওনাসিস-এ-খোদা ও ওয়েসিস-এ-খোদা।

১৯৬৩ সালে বেতারের তালিকাভুক্ত গীতিকার হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। অবসরে যান বাংলাদেশ বেতারের পরিচালক হিসাবে।

ফজল-এ-খোদার লেখা ও আব্দুল জব্বারের গাওয়া ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ গানটি একাত্তরে স্বাধীনতাকামী বাংলার মানুষকে উজ্জীবিত করেছিল। এছাড়া ‘যে দেশেতে শাপলা শালুক ঝিলের জলে ভাসে’, ‘ভালোবাসার মূল্য কত আমি কিছু জানি না’, ‘কলসি কাঁখে ঘাটে যায় কোন রূপসী’, বাসন্তী রং শাড়ি পরে কোন রমণী চলে যায়’, আমি প্রদীপের মতো রাত জেগে জেগে’, ‘প্রেমের এক নাম জীবন’, ‘ভাবনা আমার আহত পাখির মতো, পথের ধুলোয় লুটোবে’র মতো শ্রোতাপ্রিয় গান লিখে গেছেন তিনি।

ফজল-এ-খোদার মৃত্যুতে দেশে সংস্কৃতি অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তারা মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। শোক জানিয়েছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’ গানটি বিবিসির জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাংলা গানের তালিকায় সেরা ২০ গানের মধ্যে ১২তম স্থানে রয়েছে।

গান লেখার পাশাপাশি ছড়াকার, সংগঠক হিসাবেও পরিচিত ছিলেন ফজল-এ-খোদা। শিশু-কিশোর সংগঠন শাপলা শালুকের আসরের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। সত্তর দশকে তিনি শিশু-কিশোরদের মাসিক পত্রিকা ‘শাপলা শালুক’ সম্পাদনা করেন। তার লেখা ১০টি ছড়াগ্রন্থ, ৫টির কবিতার গ্রন্থসহ তার ৩৩টি বই প্রকাশিত হয়েছে।

বাংলাদেশ বেতারের সাবেক পরিচালক ফজল-এ-খোদা। এই গুণী ১৯৪১ সালের ৯ মার্চ পাবনার বেড়া থানার বনগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বেতারে গীতিকার হিসাবে তালিকাভুক্ত হন ১৯৬৩ সালে। এর পরের বছর টেলিভিশনে গীতিকার হিসাবে তালিকাভুক্ত হন।

গীতিকবি ফজল-এ-খোদার গীতিকবিতায় আজাদ রহমান, আবদুল আহাদ, ধীর আলী, সুবল দাস, কমল দাশ গুপ্ত, আবেদ হোসেন খান, সত্য সাহার মতো বরেণ্য সুরকার ও সংগীত পরিচালক গান করেছেন। সেই গান কণ্ঠে দিয়েছেন বশীর আহমেদ, আবদুল জব্বার, মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, রথীন্দ্রনাথ রায়, সৈয়দ আব্দুল হাদীসহ অনেকেই।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার শিকার হলে ফজল-এ-খোদা গানে গানে তার শোক প্রকাশ করেন।

বশীর আহমেদের সুরারোপে মোহাম্মদ আবদুল জব্বারের গাওয়া ফজল-এ-খোদার সেই গানটি ছিল ‘ভাবনা আমার আহত পাখির মতো/ পথের ধুলোয় লুটোবে/ সাত রঙে রাঙা স্বপ্ন-বিহঙ্গ/সহসা পাখনা লুটোবে/এমন তো কথা ছিল না’। ১৯৭৬ সালে গানটি প্রচার হয়।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno