প্রথম পাতা / অপরাধ /
এসডিএস-আইটিসিএল’র সম্পত্তি গোপণে বিক্রির পায়তারা ॥ গ্রহকরা হতাশ!
By দৃষ্টি টিভি on ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৭ ৫:১১ অপরাহ্ন / no comments
বুলবুল মল্লিক:
ইসলামিক ট্রেড অ্যান্ড কমার্স লিমিটেড(আইটিসিএল) এবং সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট সংসদ(এসডিএস) বাংলাদেশের শত শহ গ্রাহককে না জানিয়ে সংশ্লিষ্ট কমিটির অগোচরে সুকৌশলে প্রতিষ্ঠানের স্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে টাকা আত্মসাতের পায়তারা চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে খোলা বায়নাপত্র দলিল সম্পাদন করে প্রায় ৪০ একর সম্পত্তি ২০ কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। এতে শত শত গ্রাহকের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ৯০ দশকের শুরুতে ইসমাইল হোসেন সিরাজী তার তিন বন্ধু নুরুল ইসলাম, সেলিম আল দীন ও আব্দুর রহিম মিয়াকে সাথে নিয়ে সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট সংসদ (এসডিএস) নামক একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। টাঙ্গাইল সমাজ সেবা বিভাগ থেকে রেজিস্ট্রেশন নিয়ে শুরু হওয়া ওই সংগঠন টাঙ্গাইল শহর ও আশপাশের এলাকায় ক্ষুদ্রঋণ ও সঞ্চয় কার্যক্রম শুরু করে। এসডিএস’র প্রসার ঘটার পর ১৯৯৬ সালে তারা এর অঙ্গসংগঠন হিসেবে আইটিসিএল প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে আমানত সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করে। খুব অল্প সময়ে শুধু টাঙ্গাইল নয়, সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এর কার্যক্রম। আমানত সংগ্রহের পাশাপাশি তারা বিভিন্ন ব্যবসায়িক কার্যক্রমও শুরু করেন তারা। আমানত সংগ্রহ কার্যক্রম বিস্তৃতি লাভ করার পর ঢাকার গুলশানে তারা অফিস নেন। একই সাথে, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার চারাবাড়ি এলাকায় দুই শতাধিক একর জমির উপর কৃষি খামার গড়ে তোলে এসডিএস। পরে, ২০০২ সালে আইটিসিএল-এর আমানত সংগ্রহকে অবৈধ ব্যাংকিং কার্যক্রম হিসেবে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর গ্রাহকরা টাকা তোলার জন্য ভীড় করেন আইটিসিএল-এর বিভিন্ন কার্যালয়ে। বিক্ষুব্ধ গ্রাহকরা জমানো টাকা ফেরত পেতে বিক্ষোভ মিছিল, কার্যালয় ঘেরাও সহ নানা কর্মসূচি পালন করে।
গ্রাহকদের চাপের মুখে এক পর্যায়ে আইটিসিএল-এসডিএস’র সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। কর্মকর্তারা সবাই গাঁ ঢাকা দেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে আইটিসিএল কর্তৃপক্ষের নামে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা মামলা দায়ের করেন। ইসমাইল হোসেন সিরাজী ও তার তিন বন্ধুর নামে সারাদেশে প্রায় তিনশ’ মামলা দায়ের করে গ্রহকরা। ২০০২ সালের ১৫জুন টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বৈঠক করতে এলে পুলিশ ইসমাইল হোসেন সিরাজীকে গ্রেপ্তার করে। প্রায় সাড়ে আট বছর জেল-হাজতে থাকার পর ২০১০ সালের ২৯ জানুয়ারি ইসমাইল হোসেন সিরাজী জামিন লাভ করেন। তিনি আদালতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আইটিসিএল-এসডিএস’র নামে থাকা সকল সম্পত্তি বিক্রি করে জেলা প্রশাসন নিয়ন্ত্রিত তহবিলে জমা রাখবেন এবং সেখান থেকে গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করবেন। এ সময় স্থানীয় প্রশাসনের মনোনীত ব্যক্তি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জিপি, পিপি, প্রেসক্লাবের সভাপতি ও গ্রাহক কমিটির সভাপতি সমন্বয়ে প্রশাসন নিয়ন্ত্রিত একটি কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু ইসমাইল হোসেন সিরাজী জামিন পেয়ে আর টাঙ্গাইল আসেননি। আত্মগোপন অবস্থা থেকেই তার ভায়রা নুরুল ইসলামের সহায়তায় গোপনে বেশ কিছু সম্পত্তি বিক্রি করে দেন।
সম্পত্তি বিক্রি করে গ্রাহকদের আমানতের টাকা ফেরত দেবেন- এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইসমাইল হোসেন সিরাজী জামিনে মুক্তি লাভ করলেও দীর্ঘ সাত বছরেও একজন গ্রাহকের টাকাও তিনি ফেরত দেননি। গ্রাহকদের করা একাধিক প্রতারণা মামলায় তার অনুপস্থিতিতেই সাজা হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে বিজ্ঞ যুগ্ম দায়রা জজ ঢাকা সিআর ২৫৭৩/১২, বিজ্ঞ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত টাঙ্গাইল জিআর-৩৫০ (০২)০২, টাঙ্গাইল ০৯ (০৮)০২, জিআর ৮৫(০৫)০৩, টাঙ্গাইল ০৭ (০৩)০৩, দেলদুয়ার ০৮ জিআর ৮৪/০৯ সাজাপ্রাপ্ত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এবং দেলদুয়ার ১১ (১১)০৮, জিআর ১১৯১/০৮, ভূঞাপুর ০৩(০৩)০৯, জিআর ১৩১/০৯, টাঙ্গাইল মডেল থানার মামলা নং-৩৯(০৮)০২, জিআর ৪০২/০২, মামলা নং ০৯ (০৮) ০২, ঘাটাইল ২০(১১)০৯ জিআর ৯২৭/০৯ ও টাঙ্গাইল ৩৬ (১১)০৮, জিআর ১১৪০/০৮ মামলায় হাজিরের জন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, মামলা থেকে রেহাই পেতে ইসমাইল হোসেন সিরাজী বিদেশে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করেন। তারই অংশ হিসেবে ধানমন্ডির বাসা থেকে তিনি আত্মগোপণে চলে যান। গত ১৩ মে(শনিবার) এসডিএস ও আইটিসিএল এনজিও’র চেয়ারম্যান ও শিল্পপতি ইসমাইল হোসেন সিরাজীকে(৬৮) ধানমন্ডি এলাকা থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে অপহরণ করা হয়েছে বলে তার স্ত্রী রুবাইয়া গুলশান-ধানমন্ডি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। অপহরণ নয়, মূলত: আত্মগোপণ করেন সিরাজী। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ধুলবাড়ী গ্রামের মরহুম সবুর প্রামানিকের ছেলে ইসমাইল হোসেন সিরাজী আত্মগোপণ করে টাঙ্গাইল শহরের আকুর টাকুর পাড়ায় তার শশুরবাড়ি ওঠেন। শশুরবাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় গত ১৬ মে(বুধবার) গভীর রাতে গোপণ সংবাদের ভিত্তিতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ টাঙ্গাইল শহর বাইপাসের নগর জলফৈ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। ১৭ মে(বৃহস্পতিবার) তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল-হাজতে পাঠানো হয়। গত ২৯ আগস্ট জিআর মামলা-২২/০৯ এবং ৫১২/০৯ মামলায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-২ এর বিচারক মো. আব্দুল্লাহ আল মাসুমের আদালতে ইসমাইল হোসেন সিরাজী বলেন, ‘জনগণ তার কাছে কোন টাকা পায়না, এসডিএস-আইটিসিএল’র সব সম্পত্তি তার পৈত্রিক’। এ বক্তব্যের পর আদালতে আইনজীবীদের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্য ও হই-হুল্লোর শুরু হয়।
স্থানীয় একাধিক সূত্র দাবি করে, ওই ঘটনার পর জেল-হাজতে থেকেও ইসমাইল হোসেন সিরাজী তার ভায়রা নুরুল ইসলাম, বন্ধু সেলিম আল দীন ও আব্দুর রহিম মিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকার সম্পত্তি খোলা বায়না দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে বিক্রি করে টাকা আত্মসাত করছেন। এরই মধ্যে তার ভায়রা নুরুল ইসলাম টাঙ্গাইল সদর উপজেলার পোড়াবাড়ী মৌজায় ৭৪১ শতাংশ ও গদুরগাতী মৌজায় ১৯৮ শতাংশ জমি(আলাদা আলাদা দাগে) বিক্রির পায়তারা চলছে। উল্লেখিত পোড়াবাড়ী ও গদুরগাতী মৌজায় প্রতিষ্ঠানের অ্যাগ্রোফিসারিজ অ্যান্ড ডেইরী সিন্ডিকেট লিমিটেড প্রকল্পের নামে থাকা মোট ৯৩৯ শতাংশ জমি প্রকল্পের চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম এসডিএস ভবনে সভা দেখিয়ে বিক্রির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছেন। সভায় প্রকল্পের চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে উপস্থিত দেখানো হয়েছে, ভাইস-চেয়ারম্যান সেলিম আল দীন, মহাসচিব মো. আ. রহিম মিয়া, সচিব মো. রফিজ উদ্দিন, মির্জা মো. ফিরোজ মিয়া, মো. শহিদুল ইসলাম, মির্জা মো. নান্নু মিয়া ও মো. সাইফুল ইসলাম শিশির। সভায় সচিব মো. আফজাল হোসেন খানকে উপস্থিত দেখালেও তিনি সাক্ষর করেননি।
স্থানীয় একাধিক সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রকল্পের চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম উল্লেখিত জমি বিক্রির শর্তে কোন কোন দাগের বিপরীতে বায়না হিসেবে নগদ টাকা গ্রহন করেছেন। কিন্তু জেলা প্রশাসন নিয়ন্ত্রিত কমিটির কাছে কোন প্রকার টাকা-পয়সা জমা দেওয়া হচ্ছেনা। এহেন পরিস্থিতিতে জমি বিক্রি করে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) মো. অতুল মন্ডল জানান, এসডিএস-আইটিসিএল’র সকল সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তরের জন্য আদালতের নির্দেশনায় সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির সিদ্ধান্তের বাইরে জমি বিক্রির কোন সুযোগ নেই। তিনি জানান, ইতোপূর্বে জনৈক ব্যক্তি জমি বিক্রি করার অনুমতি চেয়েছিল, কিন্তু তিনি স্রেফ ‘না’ বলে দিয়েছেন। তাছাড়া এ বিষয়ে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসেও নির্দেশনা দেয়া আছে। এরপরও যদি কেউ জেনে-বুঝে আইনসিদ্ধ নয় এমন বায়নার মাধ্যমে জমি কেনার জন্য টাকা-পয়সা লেনদেন করে- তাহলে তা নিজ দ্বায়িত্বে করবে।
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস
সর্বশেষ আপডেট
-
ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেনের সময়সূচি ও ভাড়ার তালিকা
-
ধনবাড়ীতে ভোট কেন্দ্র তছনছ ॥ ভীমরুলের আক্রমণে আহত ৩৫
-
মধুপুরে বাবার ভোট দিতে গিয়ে ছেলে আটক
-
ট্রান্স-এশিয়ান রেলপথ নেটওয়ার্কে যুক্ত হচ্ছে দেশ
-
ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মলিকুলার বেসিস অফ ডিজিস : বায়োকেমিক্যাল পার্সপেক্টিভ’ শীর্ষক সেমিনার
-
কালিহাতীতে কাভার্ডভ্যান-ট্রাক সংঘর্ষে ট্রাকচালক নিহত
-
টাঙ্গাইলে ধান ক্ষেত থেকে কঙ্কাল উদ্ধার
-
ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনোভেশন প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত
-
তিন দিন কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে বজ্রপাত-শিলাবৃষ্টির শঙ্কা