প্রথম পাতা / অপরাধ /
টাঙ্গাইলে নিয়ন্ত্রণহীন শব্দ দূষণে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে!
By দৃষ্টি টিভি on ২৬ মার্চ, ২০১৯ ১:৪৩ পূর্বাহ্ন / no comments
বুলবুল মল্লিক:
টাঙ্গাইলে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলছে শব্দ দূষণ। প্রচলিত শব্দ দূষণ আইন থাকলেও প্রয়োগ না থাকায় বেপরোয়া শব্দে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলায় শব্দ দূষণের মাত্রা আরো অনেকগুন বেড়েছে। ফলে স্থানীয় জনসাধারণ সাময়িক বধির বা স্থায়ী বধির রোগে আক্রান্ত হওয়ার দিকে ধাবিত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে শিশু-কিশোররা রয়েছে সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে।
জানাগেছে, শব্দ দূষণের গুরুত্ব বিবেচনায় ১৯৯৭ সালে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে শহরকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এরমধ্যে নীরব এলাকা, আবাসিক এলাকা, মিশ্র এলাকা, শিল্প এলাকা ও বাণিজ্যিক এলাকা। এসব এলাকায় দিন ও রাত ভেদে শব্দের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নীরব এলাকায় ৪৫ ডেসিবেল, আবাসিক এলাকায় ৫০ ডেসিবেল, বাণিজ্যিক এলাকায় ৭০ ডেসিবেল, শিল্প এলাকায় ৭৫ ডেসিবেল, আবাসিক কাম বাণিজ্যিক অর্থাৎ মিশ্র এলাকায় ৬০ ডেসিবেল মাত্রার বেশি শব্দ করা যাবেনা। ওই আইন অনুযায়ী হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকার নির্ধারিত কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত এলাকাকে নীরব এলাকা চিহ্নিত করা হয়। এসব এলাকায় মাইকিং ও উচ্চ শব্দে হর্ণ বাজানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ আইন-২০০৬ এর বিধিমালায় বলা হয়েছে, আবাসিক এলাকার সীমানা থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে নির্মাণ কাজের ইট বা পাথর ভাঙার যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। যানবাহনে অপ্রয়োজনে উচ্চ শব্দে হর্ণ বাজানো যাবে না। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করা যবে না। এই বিধির আওতায় স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতকে নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের চতুর্দিকে ১০০ গজের ভেতরে কোনো প্রকার হর্ণ বাজানো যাবে না। আরো বলা হয়েছে, কোনো উৎসব, সামাজিক বা রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে লাউড স্পিকার, অ্যামপ্লিফায়ার বা কোনো যান্ত্রিক কৌশল ব্যবহার করতে হলে কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি লাগবে। এসব কার্যক্রম সর্বোচ্চ পাঁচ ঘণ্টার বেশি হবে না। পাশাপাশি রাত ১০টার পর কোনোভাবেই শব্দ দূষণকারী যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।
টাঙ্গাইলের বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা চলছে ব্যাপকভাবে। এক্ষেত্রে মাইকের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ৮-১০টি মাইক একসাথে লাইন ধরে উচ্চ শব্দে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে। প্রচলিত আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, বাজার, মসজিদ-মন্দির ও আবাসিক এলাকায় প্রচারকারীরা উচ্চ শব্দে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এমনকি যানজটে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায়ও তারা অবাধে প্রচারণা চালাচ্ছেন। পথচারীরা প্রতিবাদ করলে তাদের সাথে প্রচারকারীদের তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে, কোন কোন ক্ষেত্রে বসচা ঝগড়ায় রূপ নিচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে কানে আঙ্গুল দিয়ে রাস্তায় চলাচলকারীরা শব্দের যন্ত্রণা সহ্য করছেন।
সরেজমিনে বেশ কয়েকজন প্রচারকর্মী জানান, এ সম্পর্কে কোন আইন আছে বলে তাদের জানা নেই। ভূঞাপুরের প্রচারকর্মী আব্দুর রহমান, ধনবাড়ীর মোতালেব সরকার বলেন, ‘এতো বছর ধরে মাইক মারতাছি, কেউ তো কিছু কয় নাই। মাইক মারার উপরেও আইন আছে নাকি?’ কালিহাতীর প্রচারকর্মী সুজন প্রশ্ন করেন, ‘কন্ কি? মাইক মারার আইন! আইজক্যাই শুনলাম’। প্রায় একই সুরে কথা বলেন, বাসাইলের প্রচারকর্মী কামাল হোসেন, ঘাটাইলের গাজি মিয়া, নাগরপুরের আব্দুল কুদ্দুছ, মির্জাপুরের মো. হালিম মিয়া প্রমুখ।
এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, ‘কি আর বলব? স্বাধীন দেশ, যার যা খুশি তাই করে। মানুষের চিন্তা কেউ করে না। এই ভাবে উচ্চ শব্দে মাইক বাজিয়ে প্রচারণা নয়- মানুষকে অত্যাচার করা হচ্ছে’। বটতলা এলাকার বাদাম বিক্রেতা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘ভাই কানে আঙ্গুল দিয়েও রেহাই পাইনা। এতোগুলা মাইক দিয়া একসাথে যে কি কইতাছে, কিছুই তো বুঝা যায় না- মধ্যে থিকা কানের কাম সারা’। ইতালী প্রবাসী লিপন খান বলেন, ‘আমি ১৪ বছর যাবত প্রবাসে থাকি, আজ পর্যন্ত একদিনও এ রকম উচ্চ শব্দে মাইক শুনি নাই। ওখানে সবাই আইনকে শ্রদ্ধা-সম্মান করে, আইন মেনে চলে’।
টাঙ্গাইলের নির্বাচন কমিশনার এইচএম কামরুল ইসলাম বলেন, বিধি অনুযায়ী শব্দ দূষণ করে প্রচারণা চালানো- নির্বাচনী আচরণ বিধির সুস্পষ্ট লংঘন। আচরণ বিধির ২১ অনুচ্ছেদে ‘মাইক্রোফোন ব্যবহার সংক্রান্ত বিধি-নিষেধ’- এ বলা হয়েছে, ‘(১) কোন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তাহার পক্ষে কোন রাজনৈতিক দল অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান একটি ইউনিয়নে অথবা পৌরসভায় পথসভা বা নির্বাচনী প্রচারণার কাজে একের অধিক মাইক্রোফোন বা শব্দের মাত্রা বর্ধনকারী অন্যবিধ যন্ত্র ব্যবহার করিতে পারিবেন না।’ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আচরণ বিধি লংঘন বা তদ্রুপ অপরাধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য একজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি প্রয়োজন বোধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, উচ্চ শব্দ একটি নিরব ঘাতক, যা মানুষকে বিভিন্নভাবে আক্রান্ত করে। তিনি বলেন, এলাকাভেদে (আবাসিক, বাণিজ্যিক, নিরব, শিল্প ও মিশ্র) শব্দের বিভিন্ন মাত্রা নির্ণয় করা আছে। কিন্তু টাঙ্গাইলে সে এলাকাগুলো নির্ধারণ করা নাই। তাই আমরা ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করতে পারছি না। তারপরও আমি এ বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস
সর্বশেষ আপডেট
-
ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেনের সময়সূচি ও ভাড়ার তালিকা
-
তিন দিন কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে বজ্রপাত-শিলাবৃষ্টির শঙ্কা
-
পথ-ঘাট-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রক্ত রঙের ছড়াছড়ি!
-
ভূঞাপুর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি বহিষ্কার
-
ঘাটাইলে বজ্রপাতে হোটেল শ্রমিকের মৃত্যু
-
মধুপুরে বারোয়ারী মন্দির ও বনে অগ্নিকাণ্ডে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ!
-
ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
-
মির্জাপুরে গভীর রাতে কৃষি শ্রমিককে কুপিয়ে হত্যা
-
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস :: তথ্য প্রাপ্তির সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে- বেড়েছে হয়রানিও