প্রথম পাতা / জাতীয় /
ফিরে দেখা ২০১৭ সালের বাংলাদেশ
By দৃষ্টি টিভি on ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭ ১:২৫ পূর্বাহ্ন / no comments
দৃষ্টি নিউজ:
ঘটনাবহুল দিনগুলো নিয়ে একেকটি বছর। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ, ভালো-মন্দ ঘটনাগুলো উঠে আসে সামাজিক মাধ্যমে, অনলাইনে, পত্রিকার পাতায় এবং টেলিভিশনের পর্দায়। বিশ্বজুড়ে ঘটা অসংখ্য ঘটনা বাংলাদেশের সবার নজরে আসে না, গুরুত্ব পায় না। কিন্তু ২০১৭ সাল এমন একটি বছর- যে বছরে বাংলাদেশ নিজেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর। কারণ মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের শিকার প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয় বাংলাদেশ। এরপর পোপের সফর।
সবচেয়ে আলোচিত রোহিঙ্গা শব্দটি ছাড়াও বছরটিতে দেশের আলোচিত বিষয় ছিল প্রধান বিচারপতি, পদ্মা সেতুর অগ্রগতি, চিকুনগুনিয়া থেকে রোবট সোফিয়া। বনানী ধর্ষণ, গাজীপুরে ধর্ষণের বিচার না পেয়ে বাবা মেয়ের আত্মহত্যা। ব্লু হোয়েল গুজব নিয়ে কানাঘুষা, নিখোঁজের পর গুমের আশঙ্কা জাগিয়ে কয়েকজনের ফিরে আসা। ছিল নায়ক রাজ রাজ্জাক, হাসিমুখের আন্তরিক মেয়র আনিসুলের মতো নক্ষত্রদের চিরবিদায়ের শোক। বিনোদনের আলোচিত বিষয় শাকিব-অপুর বিচ্ছেদ, ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটকে মাশরাফির বিদায় জানানোর মতো ঘটনা।
দেশের অর্জনের মুকুটে কয়েকটি উজ্জ্বল পালকও যুক্ত হয় ২০১৭ সালে। বিশ্বের প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ইউনেস্কো স্বীকৃতি এবং বছরের শেষ মাসে লাল-সবুজ জার্সিতে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ জিতে ফুটবলে আশা জাগানো কিশোরীদের হাসি।
রোহিঙ্গা ঢলে সীমান্ত খুলে মানবিক বাংলাদেশ:
অতীত বছরগুলোতে নানা অজুহাতে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দমন অভিযান চালানো হয়েছে। তাদের বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে বর্মী সেনাবাহিনী। ২০১৭ সালের ২৪ আগস্টে এই পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। এ বছর আগস্টে রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে আনান কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশের পরদিন থেকেই দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে রাখাইনে। নদী-সাগর পাড়ি দিয়ে হাঁটু পর্যন্ত কাদায় দেবে যাওয়া পায়ে হেঁটে বাংলাদেশে ঢুকতে শুরু করে রোহিঙ্গারা। তাদের মুখ থেকেই বাংলাদেশ ও বিশ্ব জানতে শুরু করে এই সভ্য সময়ে বর্বরোচিত হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের জাতিগত নিধনযজ্ঞের কথা।
শুরুতে সীমান্তে কঠোর হলেও ৭১ সালে এর চেয়েও বেশি বর্বরতার শিকার বাংলাদেশ মানবিক না হয়ে পারেনি। তাই রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক আচরণের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কক্সবাজারের উখিয়া, কুতুপালংয়ের মতো ১২টি ক্যাম্পে আশ্রয়, খাবার, চিকিৎসা পেতে শুরু করে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা। একদিকে মানবিক সহায়তা চলে অন্যদিকে চলে মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা দমন ও ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করার কূটনৈতিক প্রচেষ্টা। বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ায় জাতিসংঘসহ অন্যান্য সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের দেখতে আসেন জর্ডানের রানী রানিয়া, তুরস্কের ফার্স্টলেডি, তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম। চীন-জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও কমপক্ষে ৫০টি দেশের রাষ্ট্রদূতরাও রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো পরিদর্শন করেন। সফরে এসে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো বর্মী বাহিনীর অভিযানকে সরাসরি ‘জাতিগত নিধন’ বলেছেন তুর্কি প্রধানমন্ত্রী।
তবে জাতিসংঘে মিয়ানমারের দমন বন্ধে নেয়া প্রস্তাবে বিপক্ষে অবস্থান নেয় চীন-রাশিয়ার মতো দেশ। দুই পরাশক্তির এমন অবস্থানের পরও বাংলাদেশ কূটনৈতিক চেষ্টা চালিয়ে যায়। ২৩ নভেম্বর রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে একটি অ্যারেঞ্জমেন্টে সই করে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। এই অ্যারেঞ্জমেন্টে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে দিতে-নিতে কাজ করবে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ। এ বছরের ১৯ ডিসেম্বর দুই দেশের ৩০ সদস্যের এই ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়।
সুরেন্দ্র কুমার সিনহা- আলোড়ন থেকে সমাপ্তি:
এ বছরের ১ আগস্ট সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এরপর থেকেই এ নিয়ে সরকার ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সংক্ষুব্ধ হয়। বিশেষ করে সদ্য সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিলেন মন্ত্রী, দলীয় নেতা ও সরকারপিন্থ আইনজীবীরা। তারা এস কে সিনহার পদত্যাগের দাবিও তোলেন। সে সময় তার কিছু ‘দুর্নীতি’র কথাও আলোচিত হয়।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে ব্যাপক আলোচনার পর এক মাসের বেশি ছুটি নিয়ে গত ১৩ অক্টোবর বিদেশে যান বিচারপতি এস কে সিনহা। ছুটি শেষে ৯ নভেম্বর কানাডা যাওয়ার পথে সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনে রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। পরের দিন ১০ নভেম্বর পদত্যাগপত্রটি বঙ্গভবনে এসে পৌঁছায়।
এরপর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠান। এর মধ্য দিয়ে প্রধান বিচারপতি হিসেবে বহুল আলোচিত এস কে সিনহা অধ্যায়ের সমাপ্তি হয়।
দৃশ্যমান পদ্মা সেতু:
২০১৭ সালে বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে আলোচিত বিষয় ছিল স্বপ্নের পদ্মা সেতু। সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখে স্বপ্ন বাস্তব হতে শুরু করে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে। এর মধ্য দিয়ে স্বপ্নের সেতুটি দৃশ্যমান হয়।
পারমাণবিক বিদু্যৎযুগের সূচনা:
প্রকল্প গ্রহণের ৫৭ বছর পর ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ পারমাণবিক বিদু্যতের জগতে প্রবেশ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের হাতে পারমাণবিক চুল্লি বসানোর জন্য প্রথম কংক্রিট ঢালাই কাজের (ফার্স্ট কংক্রিট পোরিং বা এফসিপি) উদ্বোধন করেন।
রূপপুর পারমানবিক কেন্দ্র আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি কমিশনের রীতি অনুযায়ী এই উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পারমানবিক বিদু্যতের যুগে প্রবেশ করে। চুক্তি অনুযায়ী এফসিপি উদ্বোধনের দিন হতে ৬৩ মাসের মধ্যে এই প্রকল্পে উৎপাদিত বিদু্যৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হবে।
নৌবহরে সাবমেরিন, ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী যুগের শুরু:
১২ মার্চ নৌবাহিনীতে প্রথম সাবমেরিন ‘নবযাত্রা’ ও ‘জয়যাত্রা’র কমিশনিং করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীতে সাবমেরিন সংযোজনের ঘটনা এটাই প্রথম। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং সমর শক্তির সক্ষমতায় মাইলফলক রচিত হয়। সাবমেরিন দুটি চীন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
দুঃসহ যন্ত্রণা চিনিয়ে যায় চিকুনগুনিয়া:
২০১৭ সালের এপ্রিল-মে মাসে রাজধানীতে অনেকেই জ্বরে আক্রান্ত হন। শুরুতে সাধারণ ভাইরাস জ্বর কিংবা ডেঙ্গু মনে করা হলেও হাতে-পায়ের গিটে প্রচন্ড ব্যাথা এবং দীর্ঘদিন দুর্বল করা এই জ্বরের নাম চিকুনগুনিয়া। আগে থেকেই দেশে এডিস মশাবাহিত ভাইরাসে এই জ্বর সনাক্ত হলেও এবারই এত বেশি মানুষ চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়। সামাজিক মাধ্যমে-গণমাধ্যমে সবচেয়ে আলোচিত শব্দ হয়ে যায় চিকুনগুনিয়া। এই মশা তাড়াতে ব্যর্থতার অভিযোগে রাজধানীবাসী দুই মেয়রকে লালকার্ড দেখানোর মতো কর্মসূচি পালন করে।
বনানী রেইনট্রি হোটেলে তরুণী ধর্ষণ:
বছরজুড়ে আলোচনার শীর্ষে ছিল বনানীতে জন্মদিনের পার্টিতে আমন্ত্রণ জানিয়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনা, যা দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করে। প্রভাব খাটিয়ে অপরাধ লুকানোর চেষ্টা করেও পার পায়নি অভিযুক্তরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। তবে অনেক জল ঘোলা করে আসামিরা এখন বিচারের কাঠগড়ায়।
বনানীর এই ধর্ষণকান্ডের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ছিল বনানীর হোটেল দ্য রেইনট্রি ও আপন জুয়েলার্স। কারণ ধর্ষণের ঘটনাস্থল ছিল হোটেল দ্য রেইনট্রি। অন্যদিকে, ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত প্রধান আসামি সাফাত আহমেদ হচ্ছেন আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিমের ছেলে। ধর্ষণের মামলার সঙ্গে হোটেল রেইনট্রি ও আপন জুয়েলার্সের সার্বিক কার্যক্রমও কাঠগড়ায় ওঠে। অভিযোগ ওঠে, অনুমোদন না নিয়েই কার্যক্রম শুরু করেছিল ঝালকাঠির সংসদ সদস্য বি এম হারুনের বড় ছেলে আদনান হারুনের মালিকানাধীন হোটেল দ্য রেইনট্রি। পরে হোটেলটি থেকে অবৈধভাবে রাখা ১০ বোতল মদও জব্দ করে শুল্ক গোয়েন্দারা।
হোটেলটির বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করা হয়। একাধিক চিঠি দিয়েও শুল্ক গোয়েন্দা দপ্তরে হাজির করা যাচ্ছিল না হোটেল মালিকপক্ষকে। শেষে আদালতের নির্দেশে মালিকপক্ষকে বাধ্য করা হয়।
অন্যদিকে, মালিকের ছেলে সাফাতের ধর্ষণকান্ড প্রকাশ্যে আসার পর আপন জুয়েলার্সের স্বর্ণ চোরাচালানের তথ্যও সামনে চলে আসে। একযোগে আপন জুয়েলার্সের পাঁচটি শোরুম সিলগালা করা হয়। জব্দ করা হয় সাড়ে পাঁচশ কেজিরও বেশি সোনা ও আধা কেজি ডায়মন্ড। শুল্ক গোয়েন্দা কার্যালয়ে ডাকা হয় আপন জুয়েলার্সের তিন মালিক গুলজার আহমেদ, দিলদার আহমেদ সেলিম ও আজাদ আহমেদকে।
দীর্ঘ তদন্তের পর শুল্ক আইনে কর ফাঁকির অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। তাদের মধ্যে দিলদার আহমেদ সেলিমের বিরুদ্ধে তিনটি এবং বাকি দুজনের বিরুদ্ধে একটি করে মামলা হয়। এরপর প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে শুল্ক গোয়েন্দা ও দুদক। নানা আইনি প্রক্রিয়ার পর আপন জুয়েলার্সের তিন মালিক এখন কারাগারে।
গুমের আশঙ্কা জাগিয়ে তাদের ফিরে আসা:
৩ জুলাই ভোর সাড়ে ৫টায় নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন আলোচিত-সমালোচিত কলামিস্ট ফরহাদ মজহার। নিখোঁজের পর তাকে অপহরণের অভিযোগ করে তার পরিবার। তবে ওই রাতে ফরহাদ মজহারকে খুলনার হানিফ পরিবহনের একটি বাস থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
উদ্ধারের পর শুরু হয় নানা বিতর্ক। দীর্ঘ ১০ দিন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তদন্তেরর একপর্যায়ে পুলিশ জানায়, ফরহাদ মজহার স্বেচ্ছায় ঘর ছেড়েছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক এ ঘটনাকে ‘নাটক’, ‘মিথ্যাচার’, ‘সাজানো গল্প’ বলে উল্লেখ করেন। আইজিপি দাবি করেন, ‘ফরহাদ মজহার স্বেচ্ছায় ঘর ছেড়েছেন, সরকারকে বিব্রত করার জন্য। আর ‘মিথ্যা নাটক’ সাজানোর দায়ে সম্প্রতি ফরহাদ মজহার দম্পতির বিরুদ্ধে মামলার অনুমতি দিয়েছেন ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত।
১০ অক্টোবর ধানমন্ডির স্টার কাবাবের সামনে থেকে একদল দুর্বৃত্ত পেছন থেকে চোখ বেঁধে অপহরণ করে নিয়ে যায় পূর্ব-পশ্চিম বিডি ডট নিউজের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার উৎপল দাসকে। সেই থেকে নিখোঁজ ছিলেন এই তরুণ সাংবাদিক উৎপল।
দীর্ঘ ২ মাস ১০ দিন নিখোঁজ থাকার পর বাড়ি ফিরে আসেন সাংবাদিক উৎপল দাস। ২০ ডিসেম্বর ভোর ৫টায় তিনি নরসিংদীর রায়পুরার থানাহাটি গ্রামে নিজ বাড়িতে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে ফিরে এসেছেন। তবে কী কারণে তাকে অপহরণ করা হয়েছিল এ ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। উৎপলের দাবি, টাকার জন্যই তাকে অপহরণ করা হয়।
৭ নভেম্বর রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বেগম রোকেয়া সরণি থেকে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মুবাশ্বার হাসান সিজার। তাকে খুঁজে বের করার দাবিতে প্রতিবাদে সরব হয় পরিবার, সহপাঠী ও সহকর্মী-শুভানুধ্যায়ীরা।
এর ১ মাস ১৪ দিন পর সাংবাদিক উৎপল দাসের মতো তাকে এয়ারপোর্ট রোডে ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা। ফিরে এসে সিজার বলেন, কে বা কারা আমাকে অজ্ঞান করে নিয়ে যায়। প্রায় চুয়াল্লিশ দিন অন্ধকার ঘরে আমাকে আটকে রাখে। চলিস্নশ দিন পর আলোর মুখ দেখলাম। গতকাল রাতে হাত বাঁধা অবস্থায় আমাকে এয়ারপোর্ট রোডে ফেলে রেখে যায়। আমাকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে বলে, পেছনে তাকাবি না। তাকালে মেরে ফেলব। আমি একটা সিএনজি নিয়ে বাড়ি রওনা হই। রাস্তায় থাকতে সিএনজিওয়ালার মোবাইল দিয়ে বাবাকে ফোন দেই। বাবা সিএনজি ভাড়া দিয়ে দেয়। কয়েক দিন আগে ফিরে আসা সাংবাদিক উৎপলের মতো তার কাছেও অপহরণকারীরা টাকা চাইত বলে তিনি জানান।
ঢাকায় এলো রোবট সোফিয়া:
প্রযুক্তি পাড়ার খবরে এ বছর সবচেয়ে বেশি আলোড়ন তুলেছিল হিউম্যানয়েড সোফিয়া। সৌদি নাগরিকত্ব পাওয়া নারী অবয়বের রোবটটি বাংলাদেশে আসছে এমন প্রচারণায় ব্যাপক সাড়া পড়ে। সোফিয়া ঢাকায় আসে ৪ ডিসেম্বর। ৬ ডিসেম্বর বিআইসিসিতে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৭-এর উদ্বোধন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগ দেয় রোবটমানবী সোফিয়া। পরে তাকে সঙ্গে নিয়েই এ তথ্যপ্রযুক্তি মেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সময় শেখ হাসিনা কিছু কথাও বলেন সোফিয়ার সঙ্গে।
এরপরই সোফিয়াকে একনজর দেখতে দর্শনার্থীর ঢল নামে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। দু’হাজার দর্শক সোফিয়াকে দেখার কথা থাকলেও হল অব ফেমে সেদিন জড়ো হয় এর কয়েক গুণ দর্শক। সম্মেলন কেন্দ্রের বাইরে তখন আরও কয়েক হাজার মানুষ সোফিয়াকে দেখতে রীতিমতো ধাক্কাধাক্কি-ভাংচুর শুরু করে। বছরব্যাপী এসব আলোচিত ঘটনার মধ্যে বিনোদন এবং ক্রিকেট জগতেও ছিল সাড়া ফেলার মতো ঘটনা।
শাকিব-অপু জুটি ঘিরে জল্পনা:
বছরের সবচাইতে আলোচিত বিচ্ছেদ ছিল শাকিব খান এবং অপু বিশ্বাসের বিচ্ছেদ। একটি টিভি চ্যানেলে এ বছর ১০ এপ্রিল উপস্থিত হয়ে শাকিবের সঙ্গে নিজের গোপন বিয়ের ঘোষণা দেন অপু বিশ্বাস। আট বছর আগের সেই বিয়ের খবর জানার কিছু দিন পরেই ২২ নভেম্বর আইনজীবীর মাধ্যমে অপুর কাছে তালাকের নোটিশ পাঠান শাকিব খান। শাকিব-অপুর বিচ্ছেদের বিষয়টি অবশ্য এখনো অমিমাংশিত।
না ফেরার দেশে নায়ক রাজ:
বাংলাদেশের জন্য আগস্ট মাসকে নক্ষত্র হারানোর মাস বলা যায়। এ বছরের ২১ আগস্ট সন্ধ্যায় বাংলা চলচ্চিত্রের সোনালি অধ্যায়ের নায়কদের রাজা রাজ্জাক দেশকে শোকে ভাসিয়ে চিরবিদায় নেন। ২২ আগস্ট নায়করাজকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হয়।
থেমে যায় আনিসুল হকের জীবন গাড়ি:
৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত ১০:২৩ মিনিটে লন্ডনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সবসময় হাসিমুখের মানুষ ঢাকা উত্তরকে মাত্র দুই বছরে সাধ্যমতো বদলে দেয়া মেয়র আনিসুল হক। নাতির জন্ম উপলক্ষে গত ২৯ জুলাই ব্যক্তিগত সফরে সপরিবারে লন্ডনে যান ৬৫ বছর বয়সী আনিসুল হক। ৪ আগস্ট তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে লন্ডনের একটি হাসপাতালে ভর্তি করার পর তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছিল। তিনি সেরিব্রাল ভাসকুলাইটিসে (মস্তিষ্কের রক্তনালীর প্রদাহ) আক্রান্ত হয়েছিলেন।
গণমাধ্যমে, ব্যবসায় এবং সর্বশেষ জনসেবায় কাজ করা মানুষটির চিরবিদায়ে শোক নেমে আসে দেশজুড়ে। সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের নিউজফিড ভারি করে দেয় আনিসুল হকের হাস্যোজ্জ্বল মুখের ছবির সঙ্গে তাকে নিয়ে বড়-ছোট লেখাগুলো। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, ক্ষমতাসীন দল ও অন্যান্য দলের নেতারা জানান শোক।
প্রাপ্তির ঝুলিতে বড় অর্জনও ছিল ২০১৭ সালে। দেশের জন্য গর্বের দুই অর্জন এসেছে এ বছর।
ঐতিহ্য তালিকায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ:
৩১ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য (ওয়ার্ল্ডস ডকুমেন্টারি হেরিটেজ) হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো। মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড-বঙ্গবন্ধু-৭ মার্চ জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থাটি ঐতিহাসিক এই ভাষণকে ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারের মেমোরিতে অন্তর্ভুক্ত করে। গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য ঐতিহ্যগুলোকে ইউনেস্কো এভাবে সংরক্ষণ করে থাকে। ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা প্যারিসে সংস্থাটির সদর দপ্তরে জাতির জনকের ভাষণকে ওয়ার্ল্ড’স ডকুমেন্টারি হেরিটেজ হিসেবে সংরক্ষণের ঘোষণা দেন।
সেরা বাংলাদেশের কিশোরীরা:
সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবলের পুরো টুর্নামেন্টে অসাধারণ কারুকার্য ছড়িয়ে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা বাংলাদেশ। শামসুন নাহারের একমাত্র গোল ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়ে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে বাংলাদেশ।
বিজয়ের মাসে বাংলার বাঘিনীর এই অর্জন বছরের শেষ মাসে নিয়ে এসেছে শুভ বার্তা, আশার আলো। কারণ কথায় আছে, শেষ ভালো যার, সব ভালো তার।
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস
সর্বশেষ আপডেট
-
ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেনের সময়সূচি ও ভাড়ার তালিকা
-
তিন দিন কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে বজ্রপাত-শিলাবৃষ্টির শঙ্কা
-
পথ-ঘাট-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রক্ত রঙের ছড়াছড়ি!
-
ভূঞাপুর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি বহিষ্কার
-
ঘাটাইলে বজ্রপাতে হোটেল শ্রমিকের মৃত্যু
-
মধুপুরে বারোয়ারী মন্দির ও বনে অগ্নিকাণ্ডে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ!
-
ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
-
মির্জাপুরে গভীর রাতে কৃষি শ্রমিককে কুপিয়ে হত্যা
-
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস :: তথ্য প্রাপ্তির সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে- বেড়েছে হয়রানিও