প্রথম পাতা / ছবি /
বাঙালির মহানায়কের জন্মদিন আজ
By দৃষ্টি টিভি on ১৭ মার্চ, ২০২৩ ৩:৩৭ পূর্বাহ্ন / no comments
দৃষ্টি নিউজ:
আজ ১৭ মার্চ। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস। ‘স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শিশুদের চোখ সমৃদ্ধির স্বপ্নে রঙিন’- এই প্রতিপাদ্যে দিবসটি পালিত হবে। জাতি আজ নানা আয়োজনে মহাকালের মহানায়ক বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করবে।
বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে, তর্জনির গর্জনে পরাধীনতার আগল ভেঙে জাতিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করা মহাকালের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। শেখ লুৎফর রহমান ও সায়েরা খাতুন দম্পতির তৃতীয় সন্তান ছিলেন তিনি।
সেদিনের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্ম নেওয়া ‘খোকা’ নামের শিশুটি পরবর্তী সময়ে হয়ে উঠেন নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালি জাতির মুক্তির দিশারী। গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, আত্মত্যাগ ও জনগণের প্রতি অসাধারণ মমত্ববোধের কারণে পরিণত বয়সে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে স্বীকৃত হন তিনি।
শেখ মুজিব শৈশব থেকেই ছিলেন মানবিক, সাহসী ও দানশীল। গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুলে পড়াকালীন শের-ই-বাংলা একে ফজলুল হক বিদ্যালয় পরিদর্শনে এলে কিশোর শেখ মুজিব তার পথ আগলে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ সংস্কার ও ছাত্রছাত্রীদের থাকার হোস্টেল কত দিনের মধ্যে নির্মাণ করা হবে?’ মূলতঃ বঙ্গবন্ধু স্কুলজীবনেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
কৈশোরে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র থাকাবস্থায় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় প্রথমবারের মতো কারাবরণ করেন। ম্যাট্রিক পাসের পর কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে অধ্যয়নকালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেরে-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হকসহ তৎকালীন প্রথম সারির রাজনৈতিক নেতাদের সান্নিধ্যে আসেন। ওই সময় থেকে নিজেকে ছাত্র-যুব নেতা হিসেবে রাজনীতির অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করেন।
বাঙালির জাতীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ সব আন্দোলনে অসামান্য অবদান রাখেন বঙ্গবন্ধু। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, আটান্নর আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন ও বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনসহ পাকিস্তানি সামরিক শাসনবিরোধী সব আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু। বাঙালির অধিকার আদায়ের এসব আন্দোলনের কারণে বার বার তাকে কারাবরণ করতে হয়েছে। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হন বঙ্গবন্ধু। আওয়ামী লীগ প্রধান হিসেবে ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন তথা ‘বাঙালির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ছয় দফা’ ঘোষণা করেন। পাকিস্তানের স্বৈরশাসক জেনারেল আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুসহ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নামে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করে তাদের কারাগারে পাঠান।
উনসত্তরের ঐতিহাসিক গণঅভু্যত্থানের মধ্য দিয়ে বাঙালি শেখ মুজিবকে কারামুক্ত করে ‘বঙ্গবন্ধু’ মর্যাদায় অভিষিক্ত করে। বাঙালি জাতি ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর ৬ দফার পক্ষে অকুণ্ঠ সমর্থন জানায়। পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের ম্যান্ডেট লাভ করে আওয়ামী লীগ; কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালির এ বিজয়কে মেনে নেয়নি। এরপর বঙ্গবন্ধু স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনকে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে প্রথমে স্বাধিকার আন্দোলন এবং চূড়ান্ত পর্বে স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ দেন।
আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু আহ্বানে ১৯৭১ সালের মার্চে নজিরবিহীন অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসমুদ্রে ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এ ভাষণে সেদিন স্বাধীনতার ডাক দিয়ে ঐক্যবদ্ধ বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা সংগ্রামের দিকনির্দেশনা দেন।
একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ শুরু করলে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাসভবন থেকে ওয়্যারলেসে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এরপর বঙ্গবন্ধুকে তার বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান এবং ৪ লাখ মা-বোনের ত্যাগের বিনিময়ে বীর বাঙালি একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে আনে। অভু্যদয় ঘটে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাধীন দেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধু। সদ্য স্বাধীন দেশের পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন কাজে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু বাকশাল গঠন ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে জাতীয় কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ১৫ আগস্টের কালরাতে নিজ বাসভবনে ঘাতকদের হাতে সপরিবারে নিহত হন।
স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সাম্য ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অবিস্মরণীয় ভূমিকার জন্য বঙ্গবন্ধু সারা বিশ্বে সমাদৃত। এসব ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ‘জুলিও কুরি’ পদকে ভূষিত হন তিনি। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ওই ভাষণ এখন বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। এ ছাড়া বিবিসির এক জরিপে বঙ্গবন্ধু সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হন।
বাংলাদেশ আজ গভীর শ্রদ্ধা ও অবনত মস্তকে স্মরণ করবে সেই মহামানবকে। যার হাত ধরে এই ভূখন্ডে রচিত হয়েছে বিস্ময়কর এক ইতিহাস। হাজার বছরের পরাধীনতার নাগপাশ ছিন্ন করে বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে নিয়েছে নতুন এক রাষ্ট্র। বাঙালি পেয়েছে জাতিসত্তার পরিচয় ও অধিকার।
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস
সর্বশেষ আপডেট
-
ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেনের সময়সূচি ও ভাড়ার তালিকা
-
ট্রান্স-এশিয়ান রেলপথ নেটওয়ার্কে যুক্ত হচ্ছে দেশ
-
ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মলিকুলার বেসিস অফ ডিজিস : বায়োকেমিক্যাল পার্সপেক্টিভ’ শীর্ষক সেমিনার
-
কালিহাতীতে কাভার্ডভ্যান-ট্রাক সংঘর্ষে ট্রাকচালক নিহত
-
টাঙ্গাইলে ধান ক্ষেত থেকে কঙ্কাল উদ্ধার
-
ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনোভেশন প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত
-
তিন দিন কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে বজ্রপাত-শিলাবৃষ্টির শঙ্কা
-
পথ-ঘাট-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রক্ত রঙের ছড়াছড়ি!
-
ভূঞাপুর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি বহিষ্কার