প্রথম পাতা / টাঙ্গাইল / কালিহাতী /
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ মাথা উঁচু করে বিজয়ের বার্তা বহন করছে
By দৃষ্টি টিভি on ১২ ডিসেম্বর, ২০২০ ৭:৩৭ অপরাহ্ন / no comments
বুলবুল মল্লিক:
মহান মুক্তিযুদ্ধে টাঙ্গাইলের নাম এক অবিস্মরণীয় অনন্য স্বাতন্ত্রে চিহ্নিত। টাঙ্গাইলের মুক্তিযোদ্ধারা বিশেষ করে কাদেরিয়া বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা সীমান্তের অপরপারে নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে নয় বরং দেশের অভ্যন্তরে অবস্থান করে দিন দিন মুক্তাঞ্চল বৃদ্ধি করেছে, অসম সাহসিকতায় হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করেছে।
চারদিকে শত্রুবেষ্ঠিত অধিকৃত এলাকায় মুক্তিকামী তরুণ আব্দুল কাদের সিদ্দিকী সাংগঠনিক ক্ষমতা, আত্মবিশ্বাস, অভুতপূর্ব রণনীতি ও রণকৌশল এবং বিরল সামরিক প্রতিভা বলে ১৭ হাজার সুদক্ষ মুক্তিযোদ্ধা ও ৭০ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের এক বিশাল বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন।
কাদের সিদ্দিকী স্বীয় প্রতিভা ও অনন্য রণকৌশলের গুণে হানাদার বাহিনীর কাছে ‘টাইগার সিদ্দিকী’ এক আতঙ্কের ব্যক্তিতে পরিণত হন। কাদেরিয়া বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় সখীপুরের গহীন পাহাড়িয়া এলাকা ‘মুক্তাঞ্চল’ হিসেবে নিজেদের দখলে রাখে। তাঁর বীরত্বগাঁথা নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে ‘বাঘা সিদ্দিকী’ নামে একটি চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়।
মুজিবনগর সরকার মুক্তিযুদ্ধকে সুসংগঠিত ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য যে ১১ টি সেক্টর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল, তাছাড়া অতিরিক্ত একটি সেক্টর বেসামরিক প্রক্রিয়ায় কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে গড়ে উঠে। টাঙ্গাইল জেলা (আরিচা নগরবাড়ী থেকে ফুলছড়ি বাহাদুরাবাদ পর্যন্ত নদীর সর্বত্র), জামালপুর, নেত্রকোণার অংশ বিশেষ, ময়মনসিংহ, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ জেলার ব্যাপক অংশ এবং গাজীপুর ও ঢাকা জেলার উত্তরাঞ্চল এই বাহিনীর যুদ্ধাঞ্চল ছিল।
কাদের সিদ্দিকী ছাড়াও টাঙ্গাইলের দক্ষিণাঞ্চলে খন্দকার আব্দুল বাতেনের নেতৃত্বে ‘বাতেন বাহিনী’ নামেও একটি গণবাহিনী গঠিত হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাতেন বাহিনীর বীরত্বও অবিস্বরণীয়। খন্দকার আব্দুল বাতেন (৭১-এ সরকারি সা’দত কলেজের ছাত্রসংসদের সহ-সভাপতি)- এর নেতৃত্বে দক্ষিণ টাঙ্গাইলে ঢাকা জেলার কিছু অংশ, গাজীপুর, পাবনা, মানিকগঞ্জ জেলার কিছু অংশ ও সিরাজগঞ্জ জেলার ব্যাপক অংশে যুদ্ধ পরিচালনা করা হয়েছে।
বাতেন বাহিনীতে সাড়ে তিন হাজার সশস্ত্র যোদ্ধা ছিল। ২১টি কোম্পানির সমন্বয়ে বাতেন বাহিনী গঠিত হয়। এই বাহিনীতে ৬৩টি প্লাটুন এবং ১০০টি সেকশন ও তিনটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল।
স্থানীয় ইতিহাসবিদ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জেলা পরিষদ, মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ও গণপূর্ত অধিপ্তর সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল জেলায় স্থানীয় রাজাকার, আলবদর, আলশামস্ ও শান্তি কমিটি গঠন করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ক্যাম্প স্থাপন করে ব্যাপক অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ, নারীদের সম্ভ্রম লুট ও গণহত্যা চালায়।
অগনিত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী সাধারণ নারী-পুরুষ-শিশুকে হত্যা করে। টাঙ্গাইলে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের অসামান্য অবদানকে ধরে রাখতে জেলার বিভিন্ন স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে।
১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন পুলিশ প্যারেড ময়দান বর্তমানে শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে টাঙ্গাইল জেলায় প্রথম মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে শে^ত পাথরের প্রস্তর ফলক উদ্বোধন করেন।
ওই সময় তাঁর সাথে ছিলেন, কাদেরিয়া বাহিনীর সর্বাধিনায়ক বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। পরে শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যান সংস্কারের নামে বিগত চার দলীয় জোট সরকারের সময় সে প্রস্তর ফলকটি মাটিচাপা পড়ে যায়। সে সময় স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের সহযোগিতায় ফলকটি কোন রকমে রক্ষা করা হয়।
আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় এলে শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যান পুনরায় সংস্কার করা হয়। এ সময় শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি রক্ষায় স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ ও ৭ শহীদ বীরশ্রেষ্ঠর অবয়বের ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়।
ভাস্কর শিল্পী অজিত পালের ডিজাইনে ২০১২ সালের ১৩ মে টাঙ্গাইল পৌরসভার উদ্যোগে শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে মুক্তমঞ্চের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক এম বজলুল করিম চৌধুরী। সে সময় পৌর মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি সহ কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।
২০১৬ সালের ২৪ মার্চ পৌর মেয়র জামিলুর রহমান মিরনের সভাপতিত্বে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দৃষ্টি নন্দন মুক্তমঞ্চটির উদ্বোধন করেন। সে সময় জেলা পরিষদের প্রশাসক ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান ফারুক উপস্থিত ছিলেন।
পরে মুক্তমঞ্চের পাশে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আ’লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান ফারুক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ জাতীয় চার নেতার মূর্যাল নির্মাণ করেন।
ময়মনসিংহ জেলার টাঙ্গাইল মহকুমা প্রতিষ্ঠার ১০০বছর পর অর্থাৎ ১৯৬৯ সালের ১ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ভাইস-অ্যাডমিরাল সৈয়দ মুহাম্মদ আহসান টাঙ্গাইলকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ১৯তম জেলা হিসেবে উদ্বোধন করেন।
ফলকটি জেলা সদরের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের পূর্বপাশের খোলা জায়গায় স্থাপন করা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করার পর ফলকটি ভেঙ্গে ফেলা হয়। পরে সেখানে টাঙ্গাইল সদরের ১৮৩জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম সম্বলিত স্মৃতি ফলক নির্মাণ করা হয়।
২০০৪ সালের ৮ জুলাই তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক বেগম কওছার জহুরা স্মৃতি ফলকটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। দীর্ঘদিন অযতœ-অবহেলায় স্মৃতি ফলকটির আশপাশে জঙ্গলে পরিপূর্ণ হয়ে পড়ে এবং শহীদদের নামগুলোর অধিকাংশ অস্পস্ট হয়ে যায়।
এ সময় স্মৃতি ফলকটি সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও পত্র-পত্রিকায় লেখালেখির ফলে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে স্মৃতিফলকটি সংস্কার ও আধুনিকায়ন করা হয়।
এ সংস্কারে শহীদদের নাম বাদ দিয়ে লাল-সাদা রংয়ে(জাপানের পতাকার আদলে) স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। স্মৃতিস্তম্ভটির ডিজাইন করেন, টাঙ্গাইলের চিত্রশিল্পী শরাফত খান। ২০১৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম স্মৃতিস্তম্ভটির উদ্বোধন করেন। স্মৃতিস্তম্ভে শহীদদের নাম যুক্ত না করায় স্থানীয়দের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ে প্রবেশ করলেই সকলের দৃষ্টি আকর্ষন করে ‘প্রত্যয়-৭১’ নামের ভাস্কর্য। ভাস্কর্য শিল্পী মৃণাল হক ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেন। ২০১২ সালের শেষ দিকে নির্মিত ভাস্কর্যটি ভূমি থেকে চার ফুট উঁচু একটি বৃত্তাকার বেদীর উপর স্থাপিত। ভাস্কর্যের মূল অংশে একজন নারী সহ ছয় বীরমুক্তিযোদ্ধার বীরত্বপূর্ণ ভঙ্গিমা রয়েছে- যা মহান মুক্তিযুদ্ধে নারী-পুরুষের সমন্বিত অংশগ্রহনকে ইঙ্গিত করে। এ ছয় বীরসন্তানের প্রতিকৃতি যেন সকল মুক্তিযোদ্ধার প্রতিনিধিত্ব করছে।
প্রতিকৃতিতে মুষ্ঠিবদ্ধ হাত প্রতিবাদের মূর্ত প্রতীক। অস্ত্র শোভিত প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধাই বিজয়ের মন্ত্রে দীক্ষিত। ভাস্কর্যের পেছনে ১৭ফুট উঁচু দুটি স্তম্ভের মাঝ বরাবর লাল বৃত্ত স্বাধীনতার সূর্যোদয়কে নির্দেশ করে। পেছনের দীর্ঘাকার স্তম্ভ দুটি যুদ্ধকালীন সময়কে বুঝিয়ে দেয়। কষ্টার্জিত মহান স্বাধীনতা ও শান্তির প্রতীকী অর্থ বহন করতে স্তম্ভের গায়ে দুই জোড়া কবুতর শোভিত।
টাঙ্গাইল জেলা মহান মুক্তিযুদ্ধের চারণভূমি হওয়ায় নানা স্থানে মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি রক্ষায় স্মৃতিস্তম্ভ, স্মৃতি ফলক, নাম ফলক, মূর্যাল, ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে। সারা বছর না হলেও নির্দিষ্ট দিনগুলো এসব স্মৃতি চিহ্নের পাশে দাঁড়িয়ে সংশ্লিষ্টরা তাদের আত্মীয়-স্বজন-সুহৃদদের স্মরণ করে থাকে।
১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর ভূঞাপুর হাইস্কুল মাঠে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নির্দেশে তৎকালীন সরিষাবাড়ী থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাকিম একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেন- যা ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। এটাকে টাঙ্গাইল জেলার ইতিহাসে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রথম স্মৃতিসৌধ হিসেবে দাবি করা হয়।
২০০১ সালে চার দলীয় জোট সরকার ক্ষমতাসীন হলে স্কুলমাঠে মাটি ভরাটের নামে স্মৃতিসৌধটি ভেঙে ফেলে। বর্তমানে তার কোন অস্তিত্ব নেই।
উপরোল্লেখিতগুলো ছাড়াও স্মৃতি চিহ্নগুলোর মধ্যে ভূঞাপুর লোকমান ফকির মহিলা ডিগ্রি কলেজ প্রাঙ্গণের ৫২-৭১ স্মৃতিসৌধ, নিকরাইল ইউনিয়নে বঙ্গবন্ধুর মূর্যাল, ঘাটাইল উপজেলা সদরে ‘বিজয়-৭১’ নামে স্মরকস্তম্ভ, সখীপুরের বহেড়াতৈলে কাদেরিয়া বাহিনীর শপথস্তম্ভ, সখীপুর স্মৃতিসৌধ, বাসাইল উপজেলা সদরের শহীদ মিনার ও স্মৃতিস্তম্ভ, কাশিল
ইউনিয়নে ঝিনাই নদীর তীরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নির্মিত কামুটিয়া স্মৃতিস্বম্ভ, কালিহাতীর বাঘুটিয়ায় বঙ্গবন্ধু টেক্সটাইল কলেজ প্রাঙ্গণে স্থাপতি ‘বিজয় একাত্তুর’, নাগরপুর উপজেলা সদরে ‘মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ’, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া ইউনিয়নের নগর জালফৈ এলাকায় নির্মিত মূর্যাল অন্যতম।
এছাড়া মহান মুক্তিযুদ্ধে টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ১৫৭জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবর গণপূর্ত অধিদপ্তরের উদ্যোগে বাধাই করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, টাঙ্গাইল জেলায় সরকারি পর্যায়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রহশালা বা জাদুঘর প্রতিষ্ঠার দাবি থাকলেও এখনও তা গড়ে উঠেনি। তবে বেসরকারি পর্যায়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে কাদেরিয়া বাহিনীর বেসামরিক প্রধান সাবে সচিব ও রাষ্ট্রদূত আনোয়ারুল আলম শহীদ টাঙ্গাইল শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন তাঁর ‘ইছাপুরী লজ’- এ ‘মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’ প্রতিষ্ঠা করেছেন। আনোয়ারুল আলম শহীদ ২০০৬ সালে অবসর গ্রহণের পর পৈতৃক ভিটায় দোতলা ভবন নির্মাণ করেন।
এই ভবনের নিচতলায় গড়ে তুলেছেন জাদুঘর। ২০১০ সালে ওই জাদুঘরটি উদ্বোধন করা হয়। তরুণ প্রজন্ম আগ্রহ নিয়ে প্রতিদিনই ‘জাদুঘর’টি দেখতে আসেন। দেশ-বিদেশের অনেক বিশিষ্টজনও জাদুঘরটি পরিদর্শন করেছেন। টাঙ্গাইলে উপস্থিত থাকলে বিলুপ্ত রক্ষী বাহিনীর সাবেক ডেপুটি কমান্ডার(প্রশাসন) আনোয়ারুল আলম শহীদ জাদুঘরের বিভিন্ন স্মারক ও ছবি দেখিয়ে যুদ্ধদিনের ইতিহাস বর্ণনা করেন ও দর্শনার্থীদের ঘুরে দেখান।
জাদুঘরে মহান স্বাধীনতার পূর্বে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত একুশের সংকলন, আন্দোলন-সংগ্রামে দিকনির্দেশনা দিয়ে জেলার নেতাদের কাছে লেখা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের চিঠি, মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি থেকে শুরু করে পাকিস্তানি বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনের চিত্র, মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধকালীন বীরত্ব ও পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ এবং বিজয় অর্জনের পর বঙ্গবন্ধুর কাছে অস্ত্র জমা দেওয়ার বিভিন্ন ধরণের আলোকচিত্র স্থান পেয়েছে।
এছাড়া যুদ্ধ চলাকালীন ও বিজয়ের পর দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংবাদপত্রের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিবেদনের ছবি, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুক্তাঞ্চল থেকে তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘রণাঙ্গন’ পত্রিকার কপি, মুক্তাঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত প্রশাসনিক কর্মকান্ডের বিভিন্ন দলিল, টাঙ্গাইল অঞ্চলে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে শহীদ হওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা, ভারতীয় বাহিনীর প্যারাসুট, মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে বিধ্বস্ত পাকিস্তানি জাহাজ ‘এসইউ ইঞ্জিনিয়ার্স এলসি-৩ ও এসটি- রাজন’- এর অংশবিশেষসহ অন্যান্য স্মারক জাদুঘরে স্থান পেয়েছে।
টাঙ্গাইল মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আবুল কালাম আজাদ বীরবিক্রম জানান, বছরে নির্দিষ্ট দিন বা মাসে স্মৃতিস্তম্ভগুলো পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। সারা বছরই অযতœ-অবহেলায় পড়ে থাকে- যা কারোই কাম্য নয়। তিনি সারা বছর স্মৃতিস্তম্ভগুলো স্ব স্ব স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রক্ষণাবেক্ষণ করার দাবি জানান।
টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র জামিলুর রহমান মিরন জানান, শহরের শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানের স্মৃতিস্তম্ভ আধুনিকায়ন করা হয়েছে। এটা আরও উন্নয়ন ও দৃষ্টি নন্দন করা হবে। ১৯৭১ সালের ২৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্বোধন করা স্মৃতিফলকটির লেখা সময়ের বিবর্তনে মুছে গেছে।
স্মৃতিফলকটির সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকায়নে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনান্তে দ্রুত প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, টাঙ্গাইলে সরকারি পর্যায়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের জাদুঘর প্রতিষ্ঠার বিষয়ে জেলা প্রশাসনের সাথে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বর্ষেই জাদুঘর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহন করা হবে।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক মো. আতাউল গণি জানান, জেলা সদরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের পাশে নির্মিত শহীদদের নাম সম্বলিত স্মৃতিফলকটি সংস্কার করা হয়েছে।
শহীদদের নামের তালিকা নিয়ে কিছুটা বিতর্ক থাকায় সংস্কারকৃত স্মৃতিফলকে নামের তালিকা রাখা হয়নি। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে শহীদদের নাম যাচাই-বাছাই শেষে শুদ্ধ বানানে নাম সংযুক্ত করা হবে।
তিনি আরও জানান, টাঙ্গাইল পানির ট্যাঙ্ক বধ্যভূমির দক্ষিণ পাশে খোলা জায়গায় ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কেন্দ্র’ নির্মাণ করা হবে। এজন্য স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে স্মৃতি কেন্দ্রটি বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনকে বাস্তবায়নের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস
সর্বশেষ আপডেট
-
ঢাকা-কক্সবাজার ট্রেনের সময়সূচি ও ভাড়ার তালিকা
-
ট্রান্স-এশিয়ান রেলপথ নেটওয়ার্কে যুক্ত হচ্ছে দেশ
-
ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মলিকুলার বেসিস অফ ডিজিস : বায়োকেমিক্যাল পার্সপেক্টিভ’ শীর্ষক সেমিনার
-
কালিহাতীতে কাভার্ডভ্যান-ট্রাক সংঘর্ষে ট্রাকচালক নিহত
-
টাঙ্গাইলে ধান ক্ষেত থেকে কঙ্কাল উদ্ধার
-
ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনোভেশন প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত
-
তিন দিন কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে বজ্রপাত-শিলাবৃষ্টির শঙ্কা
-
পথ-ঘাট-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রক্ত রঙের ছড়াছড়ি!
-
ভূঞাপুর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি বহিষ্কার