আজ- ৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বুধবার  রাত ১১:০৮

আ’লীগ নেতা ফরিদ হত্যায় উত্তাল ভূঞাপুর ॥ চার আসামির জবানিতে অর্ধশত নেতাকর্মী এলাকাছাড়া

 

বুলবুল মল্লিক:

dristy-d-20
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম ফরিদের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেছে উপজেলা আওয়ামীলীগ। উত্তাল হয়ে ওঠেছে ভূঞাপুর উপজেলা সদর। উপজেলা সদরে দফায় দফায় বিক্ষোভ, মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ করা হচ্ছে। চা দোকানী থেকে শুরু করে ভিন্ন মতাদর্শের রাজনৈতিক ব্যক্তিরাও ফরিদ হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে একাট্টা হয়েছেন। ওই ঘটনায় বিচারিক আদালতে গ্রেপ্তারকৃত চার আসামির স্বীকারোক্তিতে দলীয় তিন নেতার জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে আসায় তাঁরা সহ তাদের অনুসারী স্থানীয় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আত্মগোপণে চলে গেছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ অশোক কুমার সিংহ বলেন, ভূঞাপুরের আওয়ামীলীগ নেতা রকিবুল ইসলাম ফরিদ হত্যা মামলা তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর পর্যায়ক্রমে কিশোর মাইনুল ইসলাম মাসুদ, শওকত রেজা সৈকত, মো. মকবুল হোসেন ও নাসির উদ্দিন রানাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা চারজনই টাঙ্গাইলের বিচারিক হাকিম আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম রুপন কুমার দাসের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে তাদেরকে জেল-হাজতে পাঠানো হয়। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা জবানবন্দিতে রকিবুল ইসলাম ফরিদকে কেন, কোথায়, কিভাবে হত্যা করেছে, কিভাবে হত্যার আলামত নষ্ট করেছে, হত্যার ঘটনায় কে অর্থ দিয়েছে, কে অর্থদাতাদের সঙ্গে কিলারদের সমন্বয় করেছে, কার কার কি কি লাভ হয়েছে ইত্যাদি সব বিষয়ে ঘটনার পূর্বাপর বর্ণনা দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, এই হত্যাকান্ডে ভূঞাপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও জেলা পরিষদের সদস্য আব্দুল হামিদ মিয়া ভোলা, উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক তাহেরুল ইসলাম তোতা ও অলোয়া ইউনিয়নের চেয়াম্যান নূরুল ইসলামের নাম ওঠে আসায় তারা সহ তাদের অনুসারী অর্ধশতাধিক ব্যক্তি এলাকা ছেড়ে আত্মগোপণে চলে গেছেন। মামলার সব খুঁটিনাটি বিষয় পর্যালোচনা করা হচ্ছে। অচিরেই আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

নিহত আ'লীগ নেতা ফরিদ

নিহত আ’লীগ নেতা ফরিদ

চার আসামির স্বীকারোক্তি:
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম ফরিদ হত্যাকান্ডের ঘটনায় গোয়েন্দা পুলিশ গত ২২ জানুয়ারি এ মামলায় ভূঞাপুরের ভাড়ই মধ্যপাড়া থেকে ঘাটাইলের আনন্দপাড়ার শামছুল হকের ছেলে মাইনুল ইসলাম মাসুদকে(১৬) প্রথম গ্রেপ্তার করে। মাসুদ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গত ২৩ জানুয়ারি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মাসুদ জানায়, কিছু নেতার সঙ্গে মতবিরোধ এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকান্ড ঘটে। তারমতে, পাঁচ দিন আগে চূড়ান্ত পরিকল্পনা করা হয়। সেদিন খুনিরা শপথ করে যে হত্যার পর পুলিশের কাছে কেউ গ্রেপ্তার হলে অন্যদের নাম প্রকাশ করবে না। এ সময় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা ও জনপ্রতিনিধির নামও তিনি বলেন।
এরপর গত ৩ ফেব্রুয়ারি এজাহারভুক্ত আসামী ভূঞাপুর উপজেলার অলোয়া ইউনিয়নের ওয়াজেদ আলীর ছেলে শওকত রেজা সৈকতকে(২৩) গ্রেপ্তার করা হয়। ৪ ফেব্রুয়ারি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তিনি জানান, দলীয় কিছু নেতার সাথে মতবিরোধ ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। আসামি শওকত রেজা সৈকত তার স্বীকারোক্তিতে হত্যাকান্ডে অংশ নেয়া আরো কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেন। সৈকত বলেন, ঘটনার মাসখানেক আগে উপজেলা আওয়ামী লীগের তিনজন নেতা ফরিদকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এ হত্যাকান্ডে অংশ নেওয়া সৈকত ও তাঁর সঙ্গীদের দুই লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন ওই তিন নেতা। তাঁরা এক লাখ টাকা হত্যাকান্ডের আগে অগ্রিম প্রদান করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী সৈকতসহ ছয়জন ঘটনার পাঁচ দিন আগে বৈঠক করেন। তাঁরা শপথ নেন যে কেউ ধরা পড়লে অন্য কারও নাম প্রকাশ করবেন না। ঘটনার দিন সৈকত নিজ হাতে ফরিদকে গলা কেটে হত্যা করেন। পরে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি, ফরিদের মোবাইল ফোনসহ সব আলামত ভাড়ই গ্রামে অবস্থিত এটিবি নামক ইটভাটায় পুড়িয়ে ফেলেন।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি ওই ঘটনায় ভারই দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত আ. হামিদ তরফদারের ছেলে ও অলোয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. মকবুল হোসেন তরফদারকে(৩৫) গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ১২ ফেব্রুয়ারি বিকালে টাঙ্গাইলের বিচারিক হাকিম আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম রুপন কুমার দাসের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ইউপি সদস্য মো. মকবুল হোসেন তরফদার জানান, তিনি আওয়ামী লীগের নেতা রকিবুল ইসলাম ফরিদ হত্যাকান্ডে উপজেলা আওয়ামী লীগের তিন নেতা ও ঘাতকদের মধ্যে সমন্বয় করেন। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যার পরিকল্পনাকারী, অর্থ জোগানদাতা ও ঘাতকদের সহ জড়িত সবার নামও বলেন মকবুল।
এই হত্যা মামলায় গত ১২ ফেব্রুয়ারি নাসির উদ্দিন রানাকে(২০) ভূঞাপুরের কাগমারীপাড়া বাজার থেকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। নাসিরউদ্দিন রানা ভূঞাপুরের ভারই মধ্যপাড়ার আবুল কাশেমের ছেলে ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। নাসির উদ্দিন রানা(২০) গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা রকিবুল ইসলাম ফরিদকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয় আওয়ামী লীগের এক নেতার বাসায়। টাঙ্গাইলের বিচারিক হাকিম আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম রূপন কুমার দাস উল্লেখিত চার আসামির জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন। পরে তাদেরকে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
প্রকাশ, গত বছরের ৬ ডিসেম্বর সকালে ভূঞাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম ফরিদের গলা কাটা লাশ তাঁর নিজ গ্রাম ভাড়ই মধ্যপাড়ার একটি পুকুরপাড় থেকে উদ্ধার করা হয়। আগের দিন রাত সাড়ে নয়টার পর তিনি নিখোঁজ হন।
৬ ডিসেম্বর ফরিদের ভাই ফজলুল করিম বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে ভূঞাপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে ফজলুল করিম বাদী হয়ে ১৫ ডিসেম্বর টাঙ্গাইলের বিচারিক হাকিম আদালতে একটি সম্পূরক মামলা দায়ের করেন। সে মামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক তাহেরুল ইসলাম তোতা, অপর যুগ্ম-আহ্বায়ক ও জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত সদস্য আবদুল হামিদ মিয়া ভোলা, অলোয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম সরকারসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করা হয়। বিচারিক আদালত থানা ও আদালতে দায়ের করা মামলা দুটি একসঙ্গে তদন্তের আদেশ দেন। পরে মামলাটি জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno