আজ- ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার  সকাল ৮:৪৯

আলোর পথযাত্রী আদিবাসী নারী পিউ ফিলোমিনা ম্রং

 

ধনবাড়ী সংবাদদাতা:

একজন বিজ্ঞান মনষ্ক শিক্ষিকা। দক্ষ সংগঠক। রাজপথের পরিক্ষিত নারী নেত্রী। কণ্ঠে যার জয় বাংলার ধ্বনি। একজন পুরস্কারপ্রাপ্ত শ্রেষ্ঠ জয়িতা। আদিবাসী নারী নেত্রী। একজন আদর্শ মা। মধুপুর লাল মাটির গড়াঞ্চলের সফল নারীনেত্রী ও জলছত্র কর্পোস খ্রীস্টি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মিসেস পিউ ফিলোমিনা ম্রং।

জানা যায়, মধুপুরের জলছত্র গ্রামটি ছায়া সুনিবিড় চারপাশে নির্জন নিরিবিলি পরিবেশ। পাশেই দেশের ঐতিহ্যবাহী মধুপুর শালবন। তিনি ১৯৬৬ সালের ২ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার জলছত্র সম্ভ্রান্ত গারো পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শালবনের প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশে তিনি বেড়ে ওঠেন। প্রকৃতির মতোই তার মন উদার। তার বাবা স্বর্গীয় যোগেশ জন মৃ, মা নিরদা সেলিনা ম্রং। তিন ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম কন্যা। শৈশবে সবার আদরের ছিলেন। করেছেন দুরন্তপনা। ছাত্র জীবনে তিনি শিক্ষকদের আদরের শিক্ষার্থী ছিলেন।

মিসেস পিউ ফিলোমিনা ম্রং জলছত্র মিশনারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে কর্পোস খ্রীস্টি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে নিম্নমাধ্যমিক পাস করেন। মধুপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৩ সালে এসএসসি ও ১৯৮৫ সালে মধুপুর কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ময়মনসিংহ নাসিরাবাদ কলেজ থেকে বিএসসি পাস করেন। ১৯৯১ সালে তার বাড়ির পাশে নিজে অধ্যয়ন করা বিদ্যালয় জলছত্র কর্পোস খ্রীস্টি উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। শিক্ষকতা চলাকালে ময়মনসিংহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে বিএড এবং এমএড কোর্স সম্পন্ন করেন। এসএসসি পাসের পরেই তার বিয়ে হয়। ছাত্র জীবনেই তিনি দুই সন্তানের মা হন। বিয়ে ও সন্তান মানুষ করা এবং সাংসারিক ঝামেলা তার পড়াশোনাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। অদম্য মেধা আর কঠোর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সফলতা অর্জন করেন। সংসার জীবনে তার দুই ছেলে। এক ছেলে কালবে চাকুরি করেন। আরএক জন কিডনী সমস্যার কারণে চাকুরি ছেড়ে বর্তমানে ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ নিয়ে তিনি কিছুটা চিন্তিত।

১৯৯৬ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। ওই বছরই তিনি সংরক্ষিত মহিলা আসনে মনোনয়ন ফরম জমা দেন। পরে মধুপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটিতে তাকে মহিলা বিষয়ক সম্পাদক পদে নির্বাচিত করা হয়। একই সালে মধুপুর উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। এরপর থেকে রাজনীতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। অল্প দিনেই তিনি নিজের শ্রম, ঘাম মেধা, শক্তি ও সাহস দিয়ে সবার মন জয় করতে সক্ষম হন। এভাবে তিনি পর পর তিন বার জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের জন্য দৌড়-ঝাঁপ করছেন।

মিসেস পিউ ফিলোমিনা ম্রং নারীদের ঐক্যবদ্ধ করার জন্য এবং রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। নারী বান্ধব হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছেন। তার নিজস্ব জাতি গোষ্ঠিদের জন্যও কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন কমিটিতে রয়েছেন। এছাড়াও তিনি কালব্, একটি বাড়ি একটি খামার, জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদ, আকুল, মনিকা সংঘ, ওয়াইএমসিএসহ নানা সংগঠনের সাথে যুক্ত রয়েছেন। অবসরে তিনি খবরের কাগজ ও বই পড়তে পছন্দ করেন। শিক্ষক হিসেবে তিনি শিক্ষার্থীদের অত্যন্ত প্রিয়। এত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি সমাজের বিয়ে-শ্রাদ্ধ থেকে শুরু করে সামাজিক বিরোধ নিষ্পত্তিতেও কাজ করে যাচ্ছেন। নারী উন্নয়নে তিনি বিভিন্ন ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ফুলের বাগান ও সবুজ প্রকৃতি তার খুব পছন্দ। এ জন্য তিনি বাড়িতে ফুলের বাগান, সবজি ও ফলের বাগান করতে পছন্দ করেন। তিনি মধুপুরে নারী সংগঠক হিসাবে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতার পুরস্কার পেয়েছেন।

মিসেস পিউ ফিলোমিনা ম্রং বলেন, আমার কাজ দেখে কেউ কেউ ঈর্ষা করে। আমি তারদেরকে বলি বসে না থেকে কাজ করুন। আমার সুনামকে নষ্ট করার জন্য একটি মহল অপচেষ্টা করে যাচ্ছে। আমি তাদের অপচেষ্টার প্রতিবাদ জানাই। আমি সমাজের জন্য কাজ করি। সমাজ ও দলের নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্খীদের ভালবাসা দিয়ে ও নিয়ে চলতে চাই। আমি স্বামী-সংসার নিয়ে সুখে-শান্তিতে সবাইকে নিয়ে ভালভাবে চলি। নিজের জনগোষ্ঠির শিশুরা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হবে- এটাই তার প্রত্যাশা। আগামি দিনে নারীরা এগিয়ে আসবে সমাজের নানা সৃজনশীল কাজে- এটাই তার ভাবনা।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno