আজ- ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার  রাত ১১:৩২

এলজিইডির ‘বীর নিবাস’র ভবন পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা বেজায় খুশি!

 

বুলবুল মল্লিক:

dristy-pic-56
টাঙ্গাইলে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ‘বীর নিবাস’ প্রকল্পের মাধ্যমে বিনামূল্যে একতলা ভবন পেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন জেলার ভূমিহীন ও অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধারা। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের(এলজিইডি) আওতায় চলমান ‘ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বাসস্থান নির্মাণ প্রকল্প’র বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি করেছেন তারা।
টাঙ্গাইল এলজিইডি সূত্রে প্রকাশ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের(এলজিইডি’র) তত্ত্বাবধানে জেলার ১২টি উপজেলায় প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ১৪৬টি বাসস্থান নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১১২টি ‘বীর নিবাস’ নির্মাণ করে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকী ৩৪টির নির্মাণ কাজ চলছে।
সূত্রমতে, জেলার ১২ টি উপজেলার মধ্যে সদর উপজেলায় ২৫টির মধ্যে ২৪টি হস্তান্তর করা হয়েছে এবং ১টির নির্মাণ কাজ চলছে। ভূঞাপুরে ১০টির মধ্যে ৭টি হস্তান্তর ও ৩টির কাজ চলছে। গোপালপুরে ৭টির মধ্যে সবক’টি হস্তান্তর করা হয়েছে। ঘাটাইলে ২১টির মধ্যে ১৮টি হস্তান্তর ও ৩টির কাজ চলমান রয়েছে। মির্জাপুরে ১৩টির মধ্যে ১১টি হস্তান্তর ও ২টির কাজ চলছে। নাগরপুরে ১২টির মধ্যে ৯টি ভবন হস্তান্তর ও ৩টির নির্মাণ কাজ চলছে। কালিহাতীর ১৪টির মধ্যে ৬টি হস্তান্তর ও ৮টির নির্মাণ কাজ চলছে। সখীপুরের ১৪টির মধ্যে ৯টি হস্তান্তর ও ৫টির কাজ চলছে। বাসাইলে ১৪টির মধ্যে ১১টি হস্তান্তর ও ৩টির নির্মাণ কাজ চলছে। দেলদুয়ারে ১৩টির মধ্যে ১২টি হস্তান্তর ও ১টি নির্মাণ করা হচ্ছে। ধনবাড়ীতে ২ টির মধ্যে ২টিই হস্তান্তর এবং মধুপুরের ১টির মধ্যে ১টিই হস্তান্তর করা হয়েছে।dristy-pic-55
সরেজমিনে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বিশ্বাস বেতকার অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবুল খায়ের মুন্সী, ঘারিন্দা ইউনিয়নের গোসাই জোয়াইর গ্রামের মো. আহসান উদ্দিন, ছিলিমপুর ইউনিয়নের পাকুল্যা গ্রামের মো. আ. রহমান খান, চৌবাড়িয়া গ্রামের মো. হুরমুজ আলী; ঘাটাইলের সাঘরদীঘি ইউনিয়নের আকন্দেরবাইদ গ্রামের মো. দানেছ আলী, বেতবাড়ী গ্রামের আ. মান্নান, ধলাপাড়া ইউনিয়নের মো. আলীফ হোসেন, দেওপাড়া ইউনিয়নের ফুলবাড়ী গ্রামের মো. আব্বাছ আলী, বাসাইল উপজেলার হাবলা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল কাইয়ুম খান সহ ভবন পাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধারা নিজের সৌভাগ্যবান মনে করছেন। তাদের কারোরই ভাল টিনের ঘরও ছিলনা। প্রায় প্রত্যেকেই ৩-৬জন ছেলে-মেয়ে নিয়ে ছনের ঘর বা ছাপড়া ঘরে গাদাগাদি করে অতিকষ্টে বসবাস করতেন। অনেকেরই টিনের ঘরে বসবাস করা ছিল স্বপ্নে মতো। তারা জানান, কখনো তারা কল্পনাও করতে পারেন নি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য তারা পাকা ভবন পাবেন। ভাল কোন টিনের ঘরে ঘুমানোর শুধু আশাই করেছেন, বাস্তবে পারেন নি। সরকার তাদেরকে পাকা ভবন নির্মাণ করে দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তারা।
অগোপ্লুত হয়ে তারা জানান, কোনদিন ভাবেননি ছেলে-মেয়েদের নিয়ে পাকা ভবনে বসবাস করতে পারবেন। সন্তানদের আগামীদিনের জন্য পাকা বাসস্থান নির্মাণ করে দিতে পারবেন।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার গালা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত আবুল কালামের স্ত্রী আছিয়া বেগম। স্বামী মারা গেছে ৭-৮বছর আগে তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে অতিকষ্টে একটি টিনের ছাপড়া ঘরে থাকতেন। বড় মেয়েটিকে বিয়ে দিয়েছেন, ছেলে কলেজে প্রথম বর্ষে ও ছোট মেয়ে ৭ম শ্রেণিতে পড়ালেখা করে। সংসারের যাবতীয় খরচ চালিয়ে ভাল টিনের ঘর তৈরি করার স্বপ্নই দেখেছেন, তৈরি করতে পারেন নি। সরকারি পাকা ভবন পেয়ে আনন্দে আতœহারা তিনি। ঘাটাইলের সাগরদিঘী ইউনিয়নের গুপ্তবৃন্দাবন গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত চান মাহমুদের স্ত্রী ফাতেমা বেওয়া ৫ ছেলে-মেয়ের জননী। বাড়ি ছিলনা, সরকার খাস জমি বন্দোবস্ত দিয়েছে। সেখানে মাটি ভরাট করে ছন ও বনের ডালপালা কেটে ঘর তৈরি করে বসবাস করতেন। সরকার পাকা ভবন নির্মাণ করে দেয়ায় তিনি বেজায় খুশি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মঙ্গল কামনা করে তিনি প্রতি জুম্মায় মসজিদে শিন্নি দেন। ঘাটাইলের করিমপুরের কান্দুলিয়া গ্রামের মৃত ফজলুল করিম খানের স্ত্রী নাছরিন সুলতানা তিন সন্তানের জননী। ছেলে-মেয়েরা সংসারী হয়ে অন্যত্র থাকে। স্বামীর ভিটায় ঘর না থাকায় বাবার বাড়িতে থাকতেন। সরকার পাকা ভবন নির্মাণ করে দেওয়ায় তিনি উচ্ছ্বসিত। প্রতি পার্বণে ছেলে-মেয়েদের দাওয়াত খাওয়াতে পারার আনন্দে তার মিষ্টি হাসিটা চোখ ছুঁয়ে যায়। dristy-pic-57
টাঙ্গাইল এলজিইডি’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও মুক্তিযোদ্ধাদের ভবন নির্মাণ প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক এসএম আব্দুল আব্দুল মান্নান বলেন, অসচ্ছল প্রত্যেক বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে ২৪ফুট ঢ ২০ফুট ১০ইঞ্চি পরিমাপের পাকা ভবন নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে। ভবনে ২টি থাকার রুম, ১টি বাথরুম, ডাইনিং, কিচেন ও ওয়াশ রুম থাকছে। এছাড়া পৃথকভাবে গরু রাখার ঘর(গোয়াল ঘর), মুরগী রাখার ঘর(খোয়ার), টিউবওয়েল স্থাপন করে দেয়া হচ্ছে। প্রতিটি পরিবারের জন্য খরচ হচ্ছে গড়ে ৮ লাখ ৫৬ হাজার টাকা।
টাঙ্গাইল এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক প্রকল্পটিকে এলজিইডি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে নিয়ে দ্রুত বাস্তবায়ন করছে। টাঙ্গাইল জেলার ১২টি উপজেলায় ১৪৬টি ভবনের মধ্যে ১১২টির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে অসচ্ছল বীরমুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকী ৩৪টির নির্মাণ কাজও দ্রুত সম্পন্ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় বীর মুক্তিযোদ্ধদের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এটি এক অনন্য প্রকল্প।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno