আজ- ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ রবিবার  রাত ১০:৩২

কালিহাতী থানায় আটক কর্মীদের ছাড়িয়ে নিলেন লতিফ সিদ্দিকী

 

বুলবুল মল্লিক:

বিনা পরোয়ানায় আটক কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে কালিহাতী থানার সামনে অবস্থানরত লতিফ সিদ্দিকী

টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের নির্বাচনী সহিংসতার মামলায় কর্মী-সমর্থকদের আটকের ঘটনায় মঙ্গলবার(৯ জানুয়ারি) টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে কালিহাতী থানার সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন, সদ্য নির্বাচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে কয়েক হাজার নেতাকর্মী এসে তার সঙ্গে যোগ দেয়। এ সময় টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মহাসড়কের উভয় পাশে প্রায় ১৬ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়।

আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর অবস্থান কর্মসূচির খবর পেয়ে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম ঘটনাস্থলে পৌঁছে থানায় গিয়ে পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দীর্ঘ এক ঘণ্টা বৈঠকের পর আটককৃত ছয় জনের মধ্যে চারজনকে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া হয় এবং সহিসংতার মামলার এজাহারে দুই জনের নাম থাকায় তাদেরকে দ্রুত আদালতে পাঠানো হয়। অবস্থানের তিন ঘণ্টা পর মঙ্গলবার বিকাল সোয়া তিনটার দিকে ছোট ভাই কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর অনুরোধে তিনি ওই অবরোধ প্রত্যাহার করেন।


পুলিশ সূত্র জানায়, রোববার(৭ জানুয়ারি) নির্বাচনের দিন বিকালে কালিহাতীর নাগবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল কাইয়ুম বিপ্লবের বাড়িতে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সোমবার(৮ জানুয়ারি) কালিহাতী থানায় মামলা হয়। সোমবার রাতে এ মামলার এজাহারভুক্ত দু’জনসহ ছয়জনকে আটক করে পুলিশ।

তারা হচ্ছেন- বাংড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হাসমত আলী নেতা, হৃদয়, রফিক, পিন্টু, লাট মিয়া ও মিজানুর রহমান। তাদের মধ্যে হাসমত আলী নেতা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লতিফ সিদ্দিকীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক, অন্যরা সবাই লতিফ সিদ্দিকীর কর্মী-সমর্থক।

অনুসারীদের আটকের খবর পেয়ে ঢাকা থেকে কালিহাতীতে এসে থানায় যান। তিনি আটক কর্মীদের ছেড়ে দিতে বলেন। পুলিশ তাদের ছেড়ে না দেওয়ায় লতিফ সিদ্দিকী মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১২ টার দিকে মুক্তির দাবিতে থানার সামনে বসে পড়েন। এ খবর কালিহাতীতে ছড়িয়ে পড়লে তার কর্মী-সমর্থকরা এসে তার সঙ্গে যোগ দেন। এ সময় টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কের দুই পাশে প্রায় ১৬ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে এ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।


এ ঘটনার খবর পেয়ে আওয়ামী লীগের মনোনীত পরাজিত প্রার্থী মোজাহারুল ইসলাম তালুকদার তার নেতাকর্মীদের নিয়ে থানার দিকে যেতে থাকেন। সংঘর্ষ এড়াতে পুলিশ দুই পক্ষের মধ্যে অবস্থান নিয়ে তাদেরকে অন্যত্র সরিয়ে দেয়।


মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরোত্তম অবস্থান ধর্মঘটস্থলে যান। তিনি লতিফ সিদ্দিকীর সঙ্গে কথা বলেন। পরে থানায় গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। পুলিশ আটক ছয়জনের মধ্য থেকে এজাহারে নাম না থাকা চারজনকে ছেড়ে দেয়।

তারা হচ্ছেন- হাসমত আলী নেতা, হৃদয়, পিন্টু ও রফিক। এজাহারভুক্ত মো. লাট মিয়া ও মিজানুর রহমান মিজান নামে দুজনকে আদালতে পাঠানো হয়।


পরে কাদের সিদ্দিকী বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকীকে অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানান। এদিন বেলা সোয়া তিনটার দিকে লতিফ সিদ্দিকী তার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে আঞ্চলিক মহাসড়ক ছেড়ে চলে যান। বিকাল সাড়ে তিনটা থেকে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।


লতিফ সিদ্দিকীর কর্মী ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব আলী, ইউপি চেয়ারম্যান আজাদ হোসেন, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ তোতা, কালিহাতী পৌরসভার প্যানেল মেয়র অজয় দে লিটন, মোশারফ হোসেন সিদ্দিকী, রুহুল আমিন, আবুল কাশেম, আবু বকর, তাপস পাল, আব্দুল করিম, আরশেদ আলী, আব্দুল বারেক, আল আমিন মিয়া, জাহাঙ্গীর, নারায়ন পোদ্দার, আবুল হাসেম সহ শতাধিক ব্যক্তি জানায়, নির্বাচনে জয়লাভ করার পর থেকে লতিফ সিদ্দিকীর কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে আওয়ামীলীগ-ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালাচ্ছে। হাট-বাজারে বের হলেই কর্মীদের মারপিট করা হচ্ছে।

এসব কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের নির্দেশে করা হলেও তিনি প্রকাশ্যে আসছেন না। তার কথা অনুযায়ী কালিহাতী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোজহারুল ইসলাম তালুকদারের নির্দেশে আওয়ামীলীগের কর্মীরা হামলা-ভাংচুরের ঘটনায় অংশ নিচ্ছে।

উপজেলার পালিমা কেন্দ্রে লতিফ সিদ্দিকীর ট্রাক প্রতীকের এজেণ্ট থাকার অপরাধে সোমবার(৮ জানুয়ারি) সকালে রিপন মিয়াকে ছুরিকাঘাত করা হয়। গুরুতর আহতাবস্থায় তিনি কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দিলেও পুলিশ মামলাটি গ্রহণ করেনি। ওই মামলাটি গ্রহণ করার অনুরোধ করতে যাওয়ায় বাংড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হাসমত আলী নেতা, হৃদয়, পিন্টু ও রফিককে থানার ওসি কামরুল ফারুক অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং আটক করেন।


দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৪ আসনে ট্রাক প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৭০ হাজার ৯৪০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন, টাঙ্গাইলে মহান মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার ইন চিফ আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী নৌকার প্রার্থী মোজাহারুল ইসলাম তালুকদার পান ৫৪ হাজার ৭৫ ভোট। লতিফ সিদ্দিকী এ আসন থেকে এর আগে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও প্রভাবশালী মন্ত্রী ছিলেন।


টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার (এসপি) সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, একজন ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। লতিফ সিদ্দিকীর মহাসড়ক অবরোধ প্রসঙ্গে এসপি বলেন, এই অবরোধের ফলে মহাসড়কের দুই পাশে কয়েক কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে অনুরোধ জানিয়েছেন। আইন নিজস্ব গতিতেই চলবে।


এ বিষয়ে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ও বঙ্গবীর কাদের সিদিকী আনুষ্ঠানিক কোন বক্তব্য দেন নি।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno