আজ- ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ সোমবার  সকাল ৮:৩৩

চিকোনগুনিয়া ও ডেঙ্গুতে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ

 

দৃষ্টি নিউজ:

image_1903_291392চিকোনগুনিয়া জ্বর সম্পর্কে সতর্কতামূলক প্রচারপত্রবর্তমান সময়ে আলোচিত চিকোনগুনিয়া ও ডেঙ্গুজ্বর সম্পর্কে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, এ রোগ প্রতিরোধের টিকা নেই। তাই সচেতনতার মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমিত রোগটি প্রতিরোধ করতে হবে।
বৃহস্পতিবার(১৮ মে) রাজধানী মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে চিকোনগুনিয়া ও ডেঙ্গুজ্বর বিষয়ে সাংবাদিক অবহিতকরণ সভায় তারা এ পরামর্শ দেন।
সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক খান আবুল কালাম আজাদ, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক ডা. সামিয়া জামান উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বিশেষজ্ঞরা বলেন, চিকোনগুনিয়া একটি ভাইরাসজনিত জ্বর যা আক্রান্ত মশার কামড়ে মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়। এ রোগটি ডেঙ্গু, জিকার মতোই এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এ ছাড়া এডিস ইজিপ্টি, এডিস এলবোপিকটাস মশার মাধ্যমে ছাড়ায়। এসব মশার শরীরে ও পায়ে সাদা কালো ও ডোরাকাটা দাগ থাকে। সাধারণত ভোর, দিনের বেলা এবং সন্ধ্যায় এরা কামড়ায়। আর ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর মাধ্যমে ও ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার মাধ্যমে অসাবধানতাবশত এটি ছড়াতে পারে। এ ছাড়া হঠাৎ ভারী বর্ষণ ও বর্ষা মৌসুমে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু ও চিকোনগুনিয়া রোগের প্রকোপ বাড়তে পারে।
ডেঙ্গু ও চিকোনগুনিয়া রোগ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, ডেঙ্গুর লক্ষণ হলো এ সময় জ্বর ১০৪ থেকে ১০৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা হতে পারে। পাশাপাশি মাথা ব্যথা, মাংস পেশি, চোখের পিছনে ও হাড়ে ব্যথা, চামড়া লালচে র‌্যাশ দেখা দেয়। আর জ্বরের প্রথম দিনই ডেঙ্গু পরীক্ষা করা যায়। এন্টিজেন পরীক্ষা করেও ধরা পড়ে। আর হেমরজিক ডেঙ্গুজ্বরে ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হলে দাঁতের মাড়ি, নাক মুখ ও পায়খানার রাস্তায় রক্তপাত হতে পারে। ডেঙ্গুতে রক্তের প্লাটিলেট কমিয়ে রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে।
অন্যদিকে চিকোনগুনিয়া জ্বর প্রথমে অল্প থেকে বেশি হবে এমনকি ১০৫ ডিগ্রি থেকেও অধিক হতে পারে। শরীরের চামড়ায় বেশি পরিমাণে র‌্যাশ দেখা যাবে। তখন প্রথম ৫ দিন অন্তর পরীক্ষা করতে হবে। তবে এটি ডেঙ্গুজ্বরের মতো হলেও রক্তশূণ্যতা দেখা দেয় না। এ জ্বরে গোড়ালি থেকে পা ও হাঁটুতে প্রচ- ব্যথা হয়, যা কয়েক মাস পর্যন্ত থাকতে পারে। ফলে গিটের ব্যথার জন্য ঠান্ডা পানির সেক এবং হালকা ব্যায়াম উপকারী হতে পারে। চিকোনগুনিয়াতে রক্তের প্লাটিলেট কমবে না।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক খান আবুল কালাম আজাদ বলেন, এটি একটি নতুন রোগ বলে গ্রামপর্যায়ে অনেক চিকিৎসকই জানেন না। তবে সেখানে প্রচার করা হচ্ছে। চিকোনগুনিয়া টোগা ভাইরাস গোত্রের ভাইরাস। মশাবাহিত হবার কারণে একে আরবো ভাইরাসও বলা হয়। আর এক্ষেত্রে ডেঙ্গু জিকা ভাইরাস একই মশার মাধ্যমে ছড়ায়, এমনকি রোগের লক্ষণও একই রকম। এ রোগের উপসর্গ হলো হঠাৎ জ্বর আসা, প্রচন্ড গিটে গিটে ব্যথা, প্রচন্ড মাথা ব্যথা, শরীরে ঠান্ডা অনুভূতি, বমিবমি ভাব, চামড়ায় লালচে দানা ও মাংসপেশিতে ব্যথা অনুভূত হয়। চিকিৎসার বিষয়ে তিনি জানান, এ রোগের ভাইরাস সংক্রমণের চিকিৎসা মূলত উপসর্গভিত্তিক, এর কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। আক্রান্ত ব্যক্তিকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরলজাতীয় খাবার খেতে হবে। প্রয়োজনে জ্বর ও ব্যথার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। গিটের ব্যথায় সেক দেয়া যাবে। তবে জ্বর যদি ৫ দিনের মধ্যে ভালো না হয়। বমি হলে, রোগী বোধশূন্য হলে, ডায়াবেটিস আক্রান্ত বা গর্ভবতী হলে দ্রুত নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিতে হবে। আর এর বাইরে যদি স্বাভাবিক জ্বর হয়, তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, সাধারণত রোগটি এমনিতেই সেরে যায়, এর সুপ্তিকাল ৩ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত। আবার ২১ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। কখনো কখনো ব্যথা কয়েক মাস এমনকি কয়েক বছরের বেশি সময়ও থাকতে পারে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে রাজধানীর কলাবাগান, হাতিরপুল, গ্রীনরোড, কাঁঠালবাগান এলাকায় মোট ১৪৫ জন রোগী শনাক্ত করে আইইডিসিআরে নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এদের মধ্যে মাত্র ৩৫ জনের চিকোনগুনিয়া ভাইরাস ধরা পড়েছে। আর সারাদেশে এপ্রিল থেকে মে মাসের ১৮ তারিখ পর্যন্ত মোট ১৩৯ জন সন্দেহভাজন রোগীকে পরীক্ষা করে মোট ৮৬ জনকে চিকোনগুনিয়া পজিটিভ পাওয়া গেছে। তবে এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এটি জাতীয়ভাবে মোকাবেলা করতে হবে। এ রোগের উপসর্গ দেখা দিলে এক সপ্তাহের মধ্যে সেরোলজি এবং আরটি-পিসিআর টেস্ট করে শনাক্ত করা যায়। সরকারের সহযোগিতায় গত বছর রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট দেশের ৩ হাজার ৭০০ জন চিকিৎসককে এ বিষয়ে ট্রেনিং দেয়া হয়েছে। বর্তমানে উপজেলা পর্যায়ে প্রতি মাসে এবং বিভাগ জেলা পর্যায়ে সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হাসপাতালের সিভিল সার্জন চিকিৎসকদের সঙ্গে চলমান রোগ ব্যাধি নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। এ ছাড়াও অধিদপ্তরের ই-মেইলে তাদের জানান দেয়া হচ্ছে। চিকোনগুনিয়ার পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আইইডিসিআর গাইডলাইন দিচ্ছে। আগাম সচেতনতার জন্য মশার বংশ বিস্তার প্রতিরোধে সব স্টেকহোল্ডারের সমন্বয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। জনসচেতনায় মাইকিং ও প্রত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা (সিডিসি ও আইইডিসিআর) নিয়মিত ডেঙ্গু আক্রান্তদের তথ্য সংগ্রহ করতে বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে খোঁজ রাখছে।
উল্লেখ্য, চিকোনগুনিয়া রোগটি ১৯৫২ সালে আফ্রিকায় প্রথম দেখা যায়। পরবর্তী সময়ে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ভারত, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার এবং ইন্দোনেশিয়ায় এর বিস্তার লক্ষ করা যায়। বাংলাদেশে প্রথম ২০০৮ সালে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে রোগটি ধরা পড়ে। পরে ২০১১ সালে ঢাকার দোহার উপজেলায় এর প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। তবে এর পর দু-একটি বিচ্ছিন্ন রোগী ছাড়া বড় ধরনের বিস্তার দেশে লক্ষ করা যায়নি। আর বর্ষার পরপর মশার উপদ্রব বেশি হলে এটির বিস্তার দেখা যায়।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno