আজ- ৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বুধবার  রাত ১:৫৯

টাঙ্গাইলের তিন নদীতে পানি বেড়ে সোয়া লাখ মানুষ বন্দি

 

বুলবুল মল্লিক:

টাঙ্গাইলে টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে যমুনা, ধলেশ্বরী ও ঝিনাই নদীর পানি দ্বিতীয় দফায় বাড়ছে।

ফলে জেলার ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল সদর, দেলদুয়ার, গোপালপুর, কালিহাতী ও নাগরপুর উপজেলার ২৪টি ইউনিয়নের ১৩৭টি গ্রামের প্রায় সোয়া লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

টাঙ্গাইল জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, মঙ্গলবার(১৪ জুলাই) টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর পানি জোকারচর পয়েন্টে ৩২ সেণ্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৩৫ সেণ্টিমিটার উপর দিয়ে এবং ধলেশ্বরী নদীর পানি ২৩ সেণ্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৬৭ সেণ্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

অপরদিকে, ঝিনাই নদীর পানি ১৬ সেণ্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৭ সেণ্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সূত্রমতে, মানুষ প্রথম দফায় বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে না উঠতেই গত রোববার(১২ জুলাই) বিকাল থেকে দ্বিতীয় দফায় নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার বন্যা পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিচ্ছে।

প্রথম দফা বন্যার পর পানি কমতে থাকায় চরাঞ্চলের যেসব মানুষ বাড়িতে ফিরছিলেন তারা আবার নিরাপদ আশ্রয়ে খুঁজছেন।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্র জানায়, জেলায় এ পর্যন্ত টাঙ্গাইল সদর, নাগরপুর, দেলদুয়ার, ভূঞাপুর, কালিহাতী এবং গোপালপুর এ ছয়টি উপজেলার ১৬২ বর্গকিলোমিটার এলাকায় পানি ঢুকে ২৪টি ইউনিয়নের ন্যূনতম ১৩৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

অপরদিকে, জেলার উপ-শহর খ্যাত এলেঙ্গা পৌরসভার আংশিক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ফলে ২১ হাজার ১৭৮টি পরিবারের প্রায় সোয়া লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

অন্যদিকে, এক লাখ ৩২ হাজার ৩৯৯ জন মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। পানি বাড়ার সাথে ভাঙনের শিকার হয়ে ৫৮৬টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ও এক হাজার ৭৫টি ঘরবাড়ি আংশিক নদীতে বিলীন হয়েছে।

এছাড়া নাগরপুরে একটি স্কুল ভবন সম্পূর্ণ নদীতে ধসে পড়েছে এবং দুইটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সূত্রমতে, জেলায় এ পর্যন্ত ৫২ কিমি. কাঁচা সড়ক আংশিক এবং ৭ কিমি. পাকা সড়ক আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া তিনটি ব্রিজের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। পাঁচটি টিউবওবেল সহ আড়াই কিলোমিটার নদীর বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, জেলায় এ পর্যন্ত ৪০০ মে.টন জিআর চাল, নগদ ৮ লাখ টাকা, শিশু খাদ্যের জন্য দুই লাখ টাকা এবং গো-খাদ্যের জন্য দুই লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। বরাদ্দ পাওয়া জিআর চাল ও টাকা বন্যার্তদের মাঝে পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হচ্ছে।

এছাড়া বন্যা কবলিত উপজেলায় বরাদ্দকৃত দুই হাজার প্যাকেটজাত শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আরো দুই হাজার প্যাকেটজাত শুকনা খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, নতুন করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফসলী জমি নিমজ্জিত হওয়ার পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে। মঙ্গলবার(১৪ জুলাই) পর্যন্ত ৫ হাজার ৯২৮ হেক্টর ফসলী জমি বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।

এরমধ্যে বোনা আমন ২৩ হেক্টর, রোপা আমন (বীজতলা) ৩ হেক্টর, পাট ৭৬৫ হেক্টর, আউশ ৮৯৬ হেক্টর, সবজি ২৮৫ হেক্টর, তিল এক হাজার ৬৫২ হেক্টর পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আহসানুল বাশার জানান, ফসলী জমিগুলোতে পানি স্থিতিশীল থাকায় ৫০ ভাগ ফসল সম্পূর্ণ ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বাকি ৫০ ভাগ ফসলের কোন ক্ষতি হবে না। জেলা কৃষি বিভাগ বন্যার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে থেকে সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছে।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ফের জেলার নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। দ্বিতীয় দফায় নদীতে পানি বাড়ায় বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে।

তিনি আরো জানান, যেসব নদীর তীর ভাঙনের শিকার হচ্ছে তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno