আজ- ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ সোমবার  ভোর ৫:৫৮

টাঙ্গাইলের স্কুলে স্কুলে অভিভাবকদের জিম্মি করে টাকা আদায়!

 

বুলবুল মল্লিক:

টাঙ্গাইলের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে নানা কৌশলে অভিভাবকদের জিম্মি করে টাকা আদায় করা হচ্ছে। পরীক্ষার ফি, অ্যাসাইনমেন্ট, মাসিক বেতনসহ নানা অজুহাতে ওই টাকা আদায় করা হচ্ছে।

জেলা শিক্ষা অফিস থেকে টাকা না নেওয়ার নির্দেশনা দিলেও মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকরা তা তোয়াক্কাই করছেন না। ফলে অভিভাবকরা বিপাকে পড়েছেন এবং শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, বৈশি^ক মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে দেশে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে সরকার ১৭মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে। এরপর থেকে প্রায় ৮ মাস ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। করোনাভাইরাসে কারণে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অটো পাস দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

টাঙ্গাইল জেলায় ৫০৪টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। কিন্তু টাঙ্গাইলের বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অভিভাবকদের জিম্মি করে পরীক্ষার ফি, অ্যাসাইনমেন্ট, মাসিক বেতনসহ নানা অজুহাতে টাকা আদায় করা হচ্ছে। টাকা দিতে অস্বীকার করলে শিক্ষার্থীদের শাস্তি দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানায়, অনলাইনে ক্লাস হলেও হতদরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন না থাকায় তারা অনলাইন ক্লাস থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তবুও হতদরিদ্র শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক(এক প্রকার চাপ দিয়ে) টাকা আদায় করা হচ্ছে।

তবে মুখ চেনা প্রভাবশালী ও জেলা-উপজেলার শীর্ষ কর্তা ব্যক্তিদের কাছ থেকে কম টাকা নেয়া হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টাঙ্গাইল শিবনাথ উচ্চ বিদ্যালয়, টাঙ্গাইল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, চৌধুরী মালঞ্চ অগ্রনী উচ্চ বিদ্যালয়, শহীদ মিজান উচ্চ বিদ্যালয়, ধরেরবাড়ী মুসলিম হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, গালা আহসান উচ্চ বিদ্যালয়, রসুলপুর বাছিরন নেছা উচ্চ বিদ্যালয়, কাবিলাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, কালিহাতীর সল্লা সমবায় উচ্চ বিদ্যালয়, শহীদ

জামাল উচ্চ বিদ্যালয়, বল্লা করোনেশন হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নরদহি উচ্চ বিদ্যালয়, গোপালপুর হোমল্যান্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী উচ্চ বিদ্যালয়, ঘাটাইলেরর মমিনপুর উচ্চ বিদ্যালয়, হাসান পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়, দেওপাড়া গণ উচ্চ

বিদ্যালয়, ভূঞাপুরের গোবিন্দাসী উচ্চ বিদ্যালয়, মাটিকাটা উচ্চ বিদ্যালয়, ফলদা রামসুন্দর উচ্চ বিদ্যালয়, মধুপুরের রামজীবনপুর উচ্চ বিদ্যালয়, চাপড়ী উচ্চ বিদ্যালয়, ধনবাড়ীর পাইস্কা উচ্চ বিদ্যালয়, দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়,

মির্জাপুরের বরাটী উচ্চ বিদ্যালয়, নাগরপুরের নয়ান খান মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়, মামুদ নগর উচ্চ বিদ্যালয়, গয়হাটা উদয় তারা উচ্চ বিদ্যালয়, সখীপুরের কেজিকে উচ্চ

বিদ্যালয়, বহেরাতৈল উচ্চ বিদ্যালয়, বাসাইলের ময়থা জনতা উচ্চ বিদ্যালয়, আইসড়া উচ্চ বিদ্যালয় সহ জেলার বেশিরভাগ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রতি শিক্ষার্থীর জন্য দেড় থেকে তিন হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।

টাঙ্গাইল সদরের শহীদ জাহাঙ্গীর উচ্চ বিদ্যালয়ের এক অভিভাবক মো. শামীম বলেন, স্কুল বন্ধ থাকলেও শিক্ষকরা নানা কৌশলে চাপ দিয়ে অভিভাবকদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছেন।

শিক্ষকরা বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে দেড় হাজার থেকে শুরু করে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত টাকা আদায় করেছেন। টাকা না দিতে চাইলে তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন।

অভিভাবক আবুল কালাম, মাজেদ মন্ডল সহ আরও কয়েকজন জানান, সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিক্ষকরা টাকা আদায় করছেন। মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষকরা যদি এমন করেন তাহলে অন্যরা তাদের কাছ থেকে কী শিক্ষা নেবে।

ধরেরবাড়ী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের আনিছুর রহমান নামে এক অভিভাবক জানান, এটা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীদের হাতে স্মার্টফোন নেই। তাই তারা অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পারে না।

অথচ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাসিক বেতন, পরীক্ষার ফি, অ্যাসাইনমেন্টের টাকা নেওয়া হচ্ছে। টাকা দিতে দেরি হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থীকে মাঠের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে।

কাবিলাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা খুবই গরিব পরিবারের সন্তান। করোনায় স্কুল বন্ধ। তারপরও এসএসসি’র ফরম পূরণের টাকার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। সংসারে অনেক সময় খাবারই থাকেনা, এ মুহূর্তে টাকা জোগাড় করা খুবই কষ্টকর।

দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানান, আগামি বুধবারের মধ্যে পরীক্ষার ফি, সারা বছরের বেতন নিয়ে স্কুলে যেতে বলা হয়েছে।

শহীদ মিজান উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানান, এর আগেও পরীক্ষার জন্য ৩০০ টাকা করে আদায় করা হয়েছে। এখন আবার অ্যাসাইনমেন্ট ও মাসিক বেতনের জন্য চাপ দিচ্ছে। স্কুল বন্ধ থাকলেও শিক্ষকরা সারা বছরের টাকা দাবি করছে।

গোপালপুর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষার্থী জানান, তাদের বিদ্যালয়টি এখনও নিবন্ধিত হয়নি। তারপরও তার কাছ থেকে তিন হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। তার মতো আরও অনেকের কাছ থেকে এ রকম টাকা নেওয়া হচ্ছে। আবার পরীক্ষার জন্য আরও ৫০০ টাকা করছেন শিক্ষকরা।

ধরেরবাড়ী হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মো. শহীদুল ইসলাম, শহীদ জাহাঙ্গীর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুল আলম সহ বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে

মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে কেউ সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোন কেটে দেন, কেউ রিসিভ করেন না। কারো কারো সঙ্গে স্বশরীরে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজি হননি।

তবে গোপালপুর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আশরাফুজ্জামান রাসেল জানান, বিদ্যালয়ের নিবন্ধন প্রক্রিয়া চলমান। টাকার জন্য শিক্ষার্থীদের চাপ দেওয়া হচ্ছে না। যে যা দিচ্ছে তাই নেওয়া হচ্ছে।

টাঙ্গাইল জেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি শামীম আল মামুন জুয়েল জানান, বিভিন্ন বিদ্যালয়ে অর্ধেক মাসের বেতন নেওয়া হচ্ছে সে বিষয়টি তিনি জানেন। পরীক্ষার ফি ও অ্যাসাইনমেন্টের জন্য কোনো টাকা নেওয়া হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।

টাঙ্গাইল জেলা শিক্ষা অফিসার লায়লা খানম বলেন, ‘করোনার মধ্যে পরীক্ষার ফি, অ্যাসাইমেন্ট ও মাসিক বেতন নেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। কেউ যদি নিয়ে থাকে তাহলে তারা ঠিক করছেন না।

কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। উপর মহলের নির্দেশনা আসার পর থেকে মাসিক বেতন নেওয়া যাবে।’

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno