আজ- ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার  রাত ১২:৩৯

টাঙ্গাইলে বন্যায় ভাঙছে সেতু ও তীর রক্ষা বাঁধ ॥ বিচ্ছিন্ন হচ্ছে জনপদ

 

বুলবুল মল্লিক:

টাঙ্গাইলে বন্যার পানির তীব্র স্রোতে একের পর এক সেতু ও নদীর তীর রক্ষা বাঁধ ভেঙে জনপদ বিচ্ছন্ন হয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

বন্যার্তদের মাঝে সীমিত পরিসরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হলেও পানি বাহিত রোগের ওষুধ, শিশু ও গো-খাদ্যর সঙ্কট তীব্রতর হচ্ছে।

জানাগেছে, দ্বিতীয় দফা বন্যায় জেলার ভূঞাপুর, গোপালপুর, কালিহাতী, টাঙ্গাইল সদর, বাসাইল, মির্জাপুর, দেলদুয়ার ও নাগরপুর উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়নে বন্যার পানি ঢুকে দুই শতাধিক গ্রামের প্রায় তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

বন্যার সাথে সাম্প্রতিক বৃষ্টি যোগ হয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে টাঙ্গাইল শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ব্যতিত নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কাশিল ইউনিয়নে ঝিনাই নদীর উপর নির্মিত দাপনাজোর সেতু সোমবার(২০ জুলাই) বিকালে বন্যার পানির তীব্র স্রোতে নদীতে ভেঙে পড়ে। এতে জেলা সদরের সাথে বাসাইল ও কালিহাতী উপজেলার দেউলি, আইসড়া, ফুলকী সহ ২০টি গ্রামের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

ফলে অতি প্রয়োজনে ১০ কিলোমিটার ঘুরে স্থানীয়দের যাতায়াত করতে হচ্ছে। বাসাইল উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বলছে ১৯৯৮-৯৯ সালে নির্মিত সেতুটি ২০১৯ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়।

উপজেলা প্রকৌশলী রোজদিদ আহম্মেদ জানান, ওই স্থানে ২৮২ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতু নির্মাণে টেন্ডার সম্পন্ন করা হয়েছে। পানি কমলেই কাজ শুরু করা হবে।

চৌহালী-আরিচা সড়কে নাগরপুর উপজেলার সলিমাবাদ ইউনিয়নের তেবাড়িয়ায় বেইলী সেতুটি গত ১৭ জুলাই(শুক্রবার) সন্ধ্যায় বন্যার পানির স্রোতে ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

এছাড়া নাগরপুর শাহাজানী সড়কের বনগ্রামে পাকা রাস্তায় পানি উঠে পাশের চৌহালী উপজেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

বাসাইল উপজেলার ছনকাপাড়া সেতু গত ১৬জুলাই(বৃহস্পতিবার) বিকালে বন্যার পানির তোড়ে ভেসে যায়। ফলে বাসাইল উপজেলা সদর থেকে কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সড়কটিতে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়।

বাসাইল ও মির্জাপুর উপজেলার কাঞ্চনপুর দক্ষিণপাড়া, ছনকাপাড়া, কাজিরাপাড়া, কোদালিয়াপাড়া, ফতেপুর, পাটদিঘীসহ প্রায় ৩০ গ্রামের মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন।

বাসাইল এলজিইডি’র উপসহকারী প্রকৌশলী সাজেদুল আলম জানান, ১৯৯২-৯৩ সালে ‘কেয়ার বাংলাদেশ’-এর আওতায় সাড়ে ১১ মিটার সেতুটি নির্মাণ করা হয়।

ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় পানির তীব্র স্রোতে ভেঙে পড়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ইতোমধ্যে নতুন সেতু নির্মাণের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।

অপরদিকে, যমুনার পানির চাপে ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়কে কয়েকটি স্থানে লিকেজ দেখা দিয়েছে। ভূঞাপুর উপজেলার নলীন বাজার থেকে তারাই-বলরামপুর পর্যন্ত ২১০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৬-১৭ অর্থ বছর থেকে ২১টি প্যাকেজে নির্মাণাধীন পানি উন্নয়ন বোর্ডের(পাউবো) বেড়িবাঁধের তারাই এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পাউবো বেড়িবাঁধ রক্ষায় জিওব্যাগ ফেলে প্রাথমিকভাবে সংস্কার করছে। এছাড়া নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করায় বেশ কিছু এলাকার কাঁচা-পাঁকা সড়ক ভেঙে গেছে। ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী-ভালকুটিয়া রাস্তার চার অংশে ভেঙে যাওয়ায় পাশের কয়েক গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে।

বঙ্গবন্ধুসেতুর দক্ষিণে কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়নের বেলটিয়া উত্তরপাড়ার বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব রক্ষাবাঁধ এলাকার বাসেক(বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ) নির্মিত দ্বিতীয় গাইডবাঁধ গত ৪ জুলাই(শনিবার) রাতে ভেঙে ২৯টি ঘরবাড়ি যমুনার পেটে চলে যায়। ভাঙা অংশ দিয়ে পানি ঢুকে ওই এলাকা প্লাবিত হয়।

টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ধলেশ্বরী নদীর ঘোনাপাড়া পয়েণ্টে ১৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সদ্য নির্মিত স্থায়ী প্রতিরক্ষা প্রকল্পের তিনটি স্থান ধসে ৪ জুলাই(শনিবার) বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়।

টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের(সওজ) উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রহমান জানান, তারা সওজ নির্মিত সেতু ও সড়ক প্রতিনিয়ত পরিদর্শন করছেন। যেসব স্থান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা দ্রুত সংস্কারের চেষ্টা করা হচ্ছে।

জরুরিভাবে যাতায়াত ব্যবস্থা চালু রাখতে তারা প্রাণপন চেষ্টা চালাচ্ছেন। এছাড়া ধসে যাওয়া সেতু ও সড়কের স্থায়ী নির্মাণ পানি কমার পর করা হবে।

টাঙ্গাইল এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. গোলাম আজম জানান, বন্যায় সড়ক ও সেতুর ক্ষতিগ্রস্তের পরিমাণ নিরূপন করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সেগুলো সংস্কার ও পুননির্মাণ করা হবে।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের(পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, বন্যার পানির চাপে ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়কে কয়েক স্থানে লিকেজ দেখা দিয়েছে। একই সাথে নলীন বাজার থেকে তারাই-বলরামপুর বেড়িবাঁধের তারাই অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বেড়িবাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশে প্রাথমিকভাবে জিওব্যাগ ফেলে সংস্কার করা হচ্ছে। ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়কে লিকেজ খুঁজে বের করে সংস্কার করা হচ্ছে।

এছাড়াও পানি না কমলে নাগরপুর উপজেলার ধলেশ্বরী নদীর ঘোনাপাড়া পয়েণ্টে স্থায়ী প্রতিরক্ষা প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত সম্ভব নয়।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno