আজ- ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার  দুপুর ১:০৪

টাঙ্গাইল হাসপাতালে দরপত্র গ্রহণে নয়ছয় করার অভিযোগ!

 

*উচ্চ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষিত *কয়েক কোটি টাকা গচ্চার শঙ্কা

বুলবুল মল্লিক:

টাঙ্গাইলের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এমএসআর (মেডিক্যাল ও সার্জিক্যাল রিইকুইজিট) দরপত্রে নয়ছয় করার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিকারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উচ্চ আদালতের পুনঃমূল্যায়নের নির্দেশনা উপেক্ষা করে সর্বনিম্ন দরদাতার পরিবর্তে উচ্চ দরদাতাকে বরাদ্দ দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করায় সরকারের কয়েক কোটি টাকা গচ্চা যাওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এসবের প্রতিকার চেয়ে নিম্ন দরদাতা রোববার(৩১ ডিসেম্বর) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেছেন।


হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত ১৫ অক্টোবর শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের এমএসআর(মেডিক্যাল ও সার্জিক্যাল রিইকুইজিট) সামগ্রী ক্রয় করতে ওষুধপত্র, লিলেন, সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি, গজ-ব্যান্ডেজ কটন, কেমিক্যাল রি-এজেন্ট এবং আসবাবপত্র সরবরাহের জন্য ৬টি গ্রুপে দরপত্র আহ্বান করে।

দরপত্রে টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। দরপত্র খোলার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে দরপত্র মূল্যায়নে সর্বনিম্ন দরদাতাদের পরিবর্তে উচ্চ দরদাতাদের কার্যাদেশ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। ওই অনিয়মের অভিযোগে গত ৭ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে গেলে কর্তৃপক্ষ গ্রহণ না করায় ডাকযোগে অভিযোগ পাঠানো হয়।

অভিযোগের বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় আমিনুর রহমান ও আবু সাঈদ চৌধুরী নামক দুই ঠিকাদার দরপত্র পুনঃমূল্যায়নের জন্য গত ১২ ডিসেম্বর হাইকোর্টে রিট মামলা দায়ের করেন।

হাইকোর্টের বিচারক নাঈমা হায়দার ও বিচারক কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ শুনানী নিয়ে চার সপ্তাহের মধ্যে জবাব চেয়ে ৬ মাসের জন্য দরপত্র প্রক্রিয়া বন্ধ রাখতে রুল জারি করেন।


টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু অডিটরিয়ামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সর্বনি¤œ দরদাতা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত¡াধিকারী আমিনুর রহমান ও আবু সাঈদ চৌধুরী লিখিত বক্তব্যে জানান, হাসপাতালের ৬টি প্যাকেজের দরপত্রে তাদের মেসার্স শামসুল হক ফার্মেসী, মেসার্স শামসুল হক এন্টারপাইজ, মেসার্স সাঈদ মেডিকেল হল নামীয় তিনটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। শিডিউলে উল্লেখিত সকল শর্তাবলী পূরণ করে ওই তিন প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। দাখিলের পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দরপত্রগুলো অনলাইনে (ইজিপি) ওপেনিং শিট প্রকাশ করে।


ইজিপি প্রকাশিত শিটে দেখা যায়, নন ইডিসিয়েল মেডিসিন গ্রুপে ছয়টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। ছয়টি দরপত্রের মধ্যে মেসার্স সাঈদ মেডিকেল হল এক কোটি ১৭ লাখ ৯১ হাজার ২৬৪ টাকা দর উল্লেখ করে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে প্রথম হয়। মেডিকেল যন্ত্রপাতি গ্রুপে পাঁচটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। এরমধ্যে মেসার্স শামসুল হক ফার্মেসী এক কোটি ৬৫ লাখ ৬৯ হাজার ৫৯০ টাকা দর উল্লেখ করায় সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে প্রথম হয় এবং দুই কোটি ২২ লাখ ৭০ হাজার ৪৪৭ টাকা দর উল্লেখ করায় দ্বিতীয় নিম্ন দরদাতা হয় মেসার্স শামসুল হক এন্টারপ্রাইজ।


গজ-ব্যান্ডেজ কটন গ্রুপে ছয়টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। এরমধ্যে মেসার্স শামসুল হক ফার্মেসী ৭০ লাখ ৩৪ হাজার ৮৭১ টাকা দর উল্লেখ করায় সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে প্রথম হয় এবং এক কোটি ৩৪ লাখ ৭১ হাজার ৪৭৩ টাকা দর উল্লেখ করায় দ্বিতীয় নিম্ন দরদাতা হয় মেসার্স শামসুল হক এন্টারপ্রাইজ।


হাসপাতালের দরপত্রের লিলেন গ্রুপে ছয়টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। এরমধ্যে ৬৬ লাখ ২১ হাজার ৯৫৩ টাকা দর উল্লেখ করায় মেসার্স শামসুল হক ফার্মেসী সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে প্রথম এবং এক কোটি ৩৫ লাখ ৪১ হাজার ৭৫৯ টাকা দর উল্লেখ করে দ্বিতীয় হয় মেসার্স শামসুল হক এন্টারপ্রাইজ।

আসবাবপত্র সরবরাহের গ্রæপে ছয়টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। এরমধ্যে ৬৪ লাখ ১২ হাজার ৭৩২ টাকা দর উল্লেখ করায় মেসার্স শামসুল হক ফার্মেসী সর্বনি¤œ দরদাতা হিসেবে প্রথম হয়।


সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তারা অভিযোগ করেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিয়মনীতি না মেনে ব্যক্তিগতভাবে সুবিধা নিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড না দিয়ে উচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে দরপত্রের বিপরীতে নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে।

এরমধ্যে মেডিসিন গ্রুপে এক কোটি ৪৭ লাখ ৩৫১ টাকা দর উল্লেখ করা দ্বিতীয় দরদাতা প্রতিষ্ঠান ফরচুন করপোরেশনকে স্বীকৃতি (নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড) দেওয়া হয়েছে। ইকুইপমেন্ট গ্রুপে দুই কোটি ৩১ লাখ ৩৮ হাজার ৯২৬ টাকা দর উল্লেখ করা তৃতীয় স্থানে থাকা প্রতিষ্ঠান জোয়াইরা ইন্টারন্যাশনালকে স্বীকৃতি (নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড) দেওয়া হয়েছে।

আসবাবপত্র সরবরাহ গ্রুপে ৭১ লাখ নয় হাজার ৩১৩ টাকা দর উল্লেখ করা তৃতীয় স্থান অর্জনকারী প্রতিষ্ঠান মেডিস্কয়ারকে স্বীকৃতি (নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড) দেওয়া হয়েছে। গজ ব্যান্ডিজ গ্রুপে এক কোটি ৩৫ লাখ এক ১৬৭ টাকা দর উল্লেখ করে তৃতীয় স্থান অর্জনকারী মেডিস্কয়াকে স্বীকৃতি (নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড) দেওয়া হয়েছে।


ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স শামসুল হক ফার্মেসী, মেসার্স শামসুল হক এন্টারপ্রাইজ এবং মেসার্স সাঈদ মেডিকেল হল যথাযথ নিয়মে দরপত্রের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে নির্বাচিত হয়। শিডিউলে উল্লেখিত শর্তাবলী পূরণ করার যোগ্যতা ও অঙ্গিকারও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো করেছে। কিন্তু সম্প্রতি অজ্ঞাত কারণে ওই তিন প্রতিষ্ঠানের দরপত্র বাতিল করে দরপত্র যাচাই-বাছাই কমিটি।


ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী আমিনুর রহমান ও আবু সাঈদ চৌধুরী লিখিত বক্তব্যে জানান, তাদের কাগজপত্র সঠিক ও সর্বনিম্ন দরদাতা হওয়া সত্বেও দরপত্র কমিটির চাহিদা অনুযায়ী উৎকোচ না দেওয়ায় তাদের কাজ দেওয়া হয়নি। পরে এ বিষয়ে তারা পুনঃমূল্যায়নের জন্য লিখিত অভিযোগ করে কোন প্রতিকার পাননি।

বাধ্য হয়ে পুনঃমূল্যায়নের জন্য উচ্চ আদালতের শরনাপন্ন হয়েছেন- উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করেছেন। রিট পিটিশন দায়ের করায় ক্ষুব্ধ হয়ে হাসপাতালের পরিচালক তাদেরকে সরকারি কাজে বাঁধা দেওয়ায় কেন তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে না উল্লেখ করে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন।


তারা আরও জানান, কর্তৃপক্ষ উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করেছেন। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন-২০০৮ এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা-২০০৬ বিধি ভঙ্গ করে পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়ার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে।

কোটি টাকা উৎকোচ নিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে কাজ না দিয়ে উচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হলে সরকারের কয়েক কোটি টাকা গচ্চা যাওয়ার সমুহ অঅশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।


টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. আব্দুল কদ্দুছ জানান, তিনি ওমরাহ হজ্জ করার জন্য কাগজপত্র ঠিক করতে ঢাকায় অবস্থান করছেন। যেহেতু ওমরাহ হজ্জ পালনে যাচ্ছেন- তাই এসব বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে চান না।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno