আজ- ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার  রাত ১২:২৫

দেশে করোনা টিকা প্রয়োগ শুরু :: নার্স রুনু প্রথম করোনা টিকা নেন

 

দৃষ্টি ডেস্ক:

দেশে করোনা টিকা প্রয়োগ শুরু করা হয়েছে। প্রথম কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তার শরীরে বুধবার বিকাল ৪টা ৮ মিনিটে টিকা পুশ করার মাধ্যমে করোনা (কোভিড-১৯) টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু করা হয়।

বুধবার (২৭ জানুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৩টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিকা কার্যক্রম উদ্বোধনের পরই তিনি প্রথম টিকা নেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রথম টিকা নেন হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা।

এরপর পর্যায়ক্রমে চিকিৎসক হিসেবে প্রথম টিকা নেন মেডিসিন কনসালটেন্ট ডা. আহমেদ লুৎফর মবিন, তারপর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা, ট্রাফিক পুলিশের সদস্য দিদারুল ইসলাম এবং সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরান হামিদ।

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল আহমদ বলেন, প্রথম একজন নার্সের শরীরে টিকা প্রয়োগের মধ্যদিয়ে দেশে কোভিড-১৯ টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা সাংবাদিকদের বলেন, ভ্যাকসিন নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলছেন। তবে দেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্যে আমি ভ্যাকসিন নেব।

অনেকেই ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা বলছেন। কিন্তু এটাও বুঝতে হবে- এই ভ্যাকসিনটি কিন্তু তৈরি করা হয়েছে একটি ভালো উদ্দেশ্যেই।

তিনি বলেন, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে যদি কেউ ভ্যাকসিন না নেয়, তবে সেটা ভুল হবে। কারণ অনেক ওষুধেও কিন্তু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। আবার অনেকের শরীরে অনেক ধরনের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। যদি আমার শরীরে অন্যান্য রোগ বেশি মাত্রায় না থাকে, তবে ভ্যাকসিন নেওয়ার ক্ষেত্রে তো কোনো সমস্যা নেই।

২০১৩ সাল থেকে রুনু ভেরোনিকা কস্তা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে নার্সিংয়ের ওপর প্রশিক্ষণ নেওয়া কস্তা আগে ইউনাইটেড হাসপাতালে কাজ করতেন।

টিকাদান কর্মসূচি শুরুর মাধ্যমে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। একই সঙ্গে টিকার মাধ্যমে করোনা মহামারি মোকাবিলার বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় যুক্ত হলো বাংলাদেশ।

আগামিকাল বৃহস্পতিবার(২৮ জানুয়ারি) রাজধানীর পাঁচটি হাসপাতালে প্রথম সারির পাঁচ শতাধিক স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যকর্মীদের টিকা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল।

আগামি ৭ ফেব্রুয়ারি ৬৪ জেলায় ব্যাপকভিত্তিক টিকাদান শুরু হবে। করোনার টিকাদান কত দিন চলবে, তা এখনো কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি।

টিকার সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে।
উদ্বোধনের পর দেশের মানুষকে টিকা পেতে অনলাইনে নিবন্ধনের জন্য অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে। যাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তাঁরাও টিকাদানকেন্দ্রে যোগাযোগ করে তালিকাভুক্ত হতে পারবেন।

করোনার টিকা নিতে আগ্রহী ব্যক্তিদের নিবন্ধন করতে হবে ‘সুরক্ষা’ নামক ওয়েব পোর্টালে (www.surokkha.gov.bd)। অ্যান্ড্রয়েড বা অ্যাপল প্লে স্টোর থেকে সুরক্ষা মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করেও করা যাবে নিবন্ধন।

দেশে সংক্রমণ পরিস্থিতি যখন অনেকটাই কমে এসেছে, তখন টিকা দেওয়া শুরু হলো। তবে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব এখনো করোনা মহামারি পরিস্থিতির মধ্যেই আছে। কোনো কোনো দেশে পুনরায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে।

কিছু দেশে বাধ্যতামূলকভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে লকডাউন দেওয়া হচ্ছে। কোনো কোনো দেশে করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেইনের (ধরন) বিস্তার দেখা যাচ্ছে।

এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের মানুষকে টিকার আওতায় আনা তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।

দেশের বেশির ভাগ মানুষ করোনার টিকা নিতে আগ্রহী। তবে বড় অংশ এখনই নয়, কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস অপেক্ষার পর টিকা নিতে চায়। করোনার টিকা নিয়ে মানুষের এই মনোভাব উঠে এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের এক জরিপে।

এতে বলা হয়, ৮৪ শতাংশ মানুষ টিকা নেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। এখনই পেলে টিকা নেবেন ৩২ শতাংশ, অপেক্ষার পর নিতে চান ৫২ শতাংশ, আর কখনোই টিকা নেবেন না ১৬ শতাংশ মানুষ। জরিপের এই ফলাফল গতকাল মঙ্গলবার এক ওয়েবিনারে প্রকাশ করা হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, টিকা প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষের জীবন রক্ষা করে। দেশের সব মানুষেরই টিকা নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এবিএম আবদুল্লাহ।

তিনি বলেন, ‘করোনা প্রতিহত করার পরীক্ষিত বৈজ্ঞানিক অস্ত্র হচ্ছে টিকা। আমি নিঃসংকোচে এই টিকা নেব।’

বাংলাদেশ সরকার, বেক্সিমকো ফার্মা ও সেরাম ইনস্টিটিউটের মধ্যকার চুক্তি অনুযায়ী সরকার তিন কোটি টিকা কিনছে সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে। বেক্সিমকো এই টিকা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে।

গত সোমবার এই টিকার প্রথম চালান দেশে আসে। প্রথম চালানে এসেছে ৫০ লাখ টিকা। এভাবে আরও পাঁচটি চালান আসার কথা। তার আগে গত বৃহস্পতিবার ভারতের উপহার হিসেবে দেশে ২০ লাখ টিকা আসে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno