আজ- ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ রবিবার  রাত ৯:৩০

নানা নাটকীয়তায় বিএসএমএমইউতে অনশনরত লতিফ সিদ্দিকী

 

দৃষ্টি নিউজ:


নানা নাটকীয়তার পর চারদিন ধরে অনশনরত টাঙ্গাইল-৪(কালিহাতী) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরিবারের উদ্যোগে বুধবার(১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়(বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। বুধবার দুপুর দুই টার দিকে তাকে বহনকারী বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সটি ঢাকার দিকে রওয়ানা হয়। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন রাতুল, সোহাগ ও লিয়ন।
এর আগে অনশনের চতুর্থদিন লতিফ সিদ্দিকীর শারীরিক অবস্থা অবনতি মৃত্যুর আশঙ্কা হওয়ায় তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। বুধবার সকাল সোয়া ৯ টার দিকে মেডিকেল টিমের সদস্য হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ মোফাজ্জল হোসেনের তত্ত্বাবধায়নে তাকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরিবারের পক্ষ থেকে চিকিৎসকদের সাথে পরামর্শ করে ঢাকাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ সময় টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ মোফাজ্জল হোসেন জানান, লতিফ সিদ্দিকীর হৃদস্পন্দন কমে গেছে। রক্তচাপও বেড়েছে। ইতোপূর্বে তিনি ‘হার্ট অ্যাটাকে’ অক্রান্ত হয়েছিলেন। তার হার্টে দু’টি রিং পড়ানো রয়েছে। ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেয়ায় তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। এ কারণে তাকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। পরে তার কর্ম-সমর্থকরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পরিবারের সাথে শলা-পরামর্শ করে তাকে বিএসএমএমইউতে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে আনা হলে পুলিশ অ্যাম্বুলেন্সটি বাইরে যেতে বাধা দেয়। বাধ্য হয়ে অসুস্থাবস্থায় লতিফ সিদ্দিকী হেটে হাসাপাতাল গেটের কাছে চলে আসেন। এ সময় জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার কর্মকর্তারা সেখানে অপেক্ষারত একটি পুলিশের গাড়িতে উঠিয়ে প্রায় ২০ মিনিট বসিয়ে রাখে। পরে গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে লতিফ সিদ্দিকী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের দিকে এগিয়ে জেলা সদরের শামসুল হক তোরণের কাছে পৌঁছলে আবার পুলিশের গাড়িতে উঠিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে নেয়া হয়। এ সময় তিনি বেশি অসুস্থতা বোধ করলে দুপুর দুই টার দিকে পরিবারের উদ্যোগে একটি বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সযোগে তিনি ঢাকার দিকে রওয়ানা দেন।
লতিফ সিদ্দিকীর ভাতিজা মো. মোশারফ হোসেন সিদ্দিকী জানান, প্রাজ্ঞ রাজনীতিক লতিফ সিদ্দিকীকে নিয়ে পুলিশ বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নানা নাটকীয়তার জন্ম দিয়েছে- যা কোন ক্রমেই প্রত্যাশিত ছিলনা। মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম একজন সংগঠককে নিয়ে পুলিশের এমন তামাশা স্বাধীন দেশে পরাধীনতার সামিল।
এদিকে, মঙ্গলবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকালে লতিফ সিদ্দিকীর গাড়ি বহরে হামলার অভিযোগে চার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছেন, গোহালিয়াবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান হযরত আলী তালুকদারের ছেলে মো. সালাহউদ্দিন তালুকদার, একই এলাকার মৃত আব্দুস সাত্তার আকন্দের ছেলে মারুফ হোসেন আকন্দ, হাজী মো. ইমান আলী প্রামাণিকের ছেলে আব্দুল লতিফ প্রামাণিক ও আবুল হোসেন ড্রাইভারের ছেলে মো. জয়নাল আবেদীন।
প্রকাশ, রোববার(১৬ ডিসেম্বর) দুপুরে টাঙ্গাইলের কালিহাতীর গোহালিয়াবাড়ি ইউনিয়নের সরাতৈল-বল্লভবাড়ি এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর কর্মী-সমর্থকদের ওপর স্থানীয় সংসদ সদস্য হাছান ইমাম খানের কর্মী-সমর্থকরা হামলা ও গাড়ি ভাঙচুর করে। এতে লতিফ সিদ্দিকীর ব্যক্তিগত গাড়িসহ চারটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রতিবাদে রোববার দুপুর পৌনে তিনটার দিকে ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি নিয়ে এসে তিন দফা দাবিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন লতিফ সিদ্দিকী। দাবিগুলো হচ্ছে, কালিহাতী থানার ওসি মীর মোশারফ হোসেনকে প্রত্যাহার, অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও সরকার দলীয় প্রার্থীর নির্বাচন পর্যন্ত আর কোন সহিংসতামূলক কার্যকলাপ করবে না মর্মে রিটার্নিং অফিসারের কাছে মুচলেকা প্রদান।
উল্লেখ্য, টাঙ্গাইল-৪(কালিহাতী) আসনের আওয়ামীলীগ এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলো দৃঢ় সাংগঠনিক দক্ষতায় নিয়ন্ত্রণ করতেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য, এর পর ১৯৭৩, ১৯৯৬, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে টাঙ্গাইল-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁর স্ত্রী লায়লা সিদ্দিকী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ১৯৮৬ সালে এ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। লতিফ সিদ্দিকী এমপি হওয়ার পর সরকারের মন্ত্রী হিসেবে এলাকার বেশ উন্নয়ন করেন। লতিফ সিদ্দিকী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর মন্ত্রী হন। ২০১৪ সালে ধর্মীয় বিষয়ে নিউইয়র্কে একটি সভায় বেফাঁস বক্তৃতা দেয়ার পর তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ ও দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে তিনি সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। এতে আসনটি শূন্য হওয়ার পর ২০১৭ সালের ৩১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে হাসান ইমাম খান সাংসদ নির্বাচিত হন। হাসান ইমাম খান এবারও আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno