আজ- ১১ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শনিবার  রাত ৩:১৪

বাঁশির সুরে জীবন-জীবিকা

 

দৃষ্টি নিউজ:


‘মন মাঝি তোর বৈঠা নেরে আমি আর বাইতে পারলাম না’ কিংবা ‘মোর প্রিয়া হবে এসো গো রাণী, দেব খোঁপায় তারার ফুল’ এমনিতর নানা গানের সুর বাঁশিতে তুলে যাচ্ছেন হাফিজ। নানা গানের সুমধুর সুর বাঁশিতে বাজিয়েই চলছে তার সংসার। তার বাঁশির সুর যেন সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। বাঁশিতে তার সুরের মূর্ছনায় মোহিত হন সবাই। সবুজ ছায়ায় ঘেরা গ্রামীণ জনপদ, বাজার বা অনুষ্ঠানে বাঁশিতে সুর তোলেন হাফিজ উদ্দিন। সুর বা গান প্রেমিরা মোহিত হয়ে ৫-১০টাকা দিতে চান, কেউ কেউ সন্তুষ্ট হয়ে ১০০-২০০টাকাও দেন- কিন্তু তিনি সুর বিক্রি করেন না। বাঁশি কিনলেই তিনি খুশি- এতেই আলো জ্বলে হাফিজের সংসারে। ৩৫ বছর বয়সী হাফিজ উদ্দিন একজন বাঁশিপ্রেমিক। শখের বসে শিখেছেন বাঁশি বাজানো। আর বর্তমানে বাঁশির সুরেই তার জীবন চলে।
বাঁশি প্রেমিক হাফিজের বাড়ি টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কালিয়া ঘোণারচালা গ্রামে। বাবা বারেক একজন কৃষক। পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছ্বলতা মাথায় নিয়েই জন্ম নিয়েছেন হাফিজ। দারিদ্র্যতার কারণে লেখাপড়া করার সুযোগ হয়নি। পরিবারিক অভাব-অনটনের জন্য ছোটকাল থেকেই বিভিন্ন কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। এরপরও পরিবারের দারিদ্র্যতা ঘোচেনি।
হাফিজ ছোটবেলা থেকেই বাঁশির প্রতি দুর্বল ছিল। কেউ বাঁশি বাজালে মনোযোগ দিয়ে শুনতেন। প্রতিটি ক্ষণে যেন তার হৃদয়ে বেজে ওঠে বাঁশি। বেড়ে ওঠার পর থেকেই বাঁশি বাজানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে গ্রামের একটি যাত্রাপালা গানের ওস্তাদের কাছে বাঁশি বাজানো শেখেন হাফিজ।
সেই শখের বসে শেখা বাঁশি ঘিরেই চলে তার জীবন। পাড়ার আড্ডা, চায়ের দোকান, বিয়ে বাড়ি বা যেকোনো অনুষ্ঠানে মধুর সুরে বাঁশি বাজান হাফিজ। বিশেষ করে তাকে বেশি বাঁশি বাজাতে দেখা যায় পৌরসভার বিভিন্ন অলিগলিতে। বাঁশি বাজিয়ে তিনি বাঁশি বিক্রি করেন। এতে তার আয়ও হয় বেশ। পৌরসভাসহ সখীপুর উপজেলার বিভিন্ন বাজারে বাঁশি বাজিয়ে তিনি বাঁশি বিক্রি করেন। গ্রামীণ মেলা বা উৎসবে তার উপস্থিতি যেন অবশ্যম্ভাবী। এ ছাড়া বিভিন্ন সংগীত দলের হয়েও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাঁশির অমীয় সুর তোলেন তিনি। এ জন্য কিছু পারিশ্রমিক নেন।
অন্য পেশায় জীবিকা নির্বাহ করতে গেলে ‘বংশীবাদক’ হিসেবে কদর থাকে না। এ জন্য বাঁশিকেই বেছে নেন জীবিকা নির্বাহরে পথ হিসেবে। বিভিন্ন ধরনের বাঁশি মেলে তার ভ্রাম্যমাণ দোকানে। হাফিজের ভ্রাম্যমাণ বাঁশির দোকানে ভিড় করেন ক্রেতারা। এ সময় বাঁশিতে সুর তোলার চেষ্টা করেন। আবার ক্রেতাশূন্য দোকানে বসে বাঁশিতে ঠোঁট রাখেন তিনি, ক্রেতা টানতে বাঁশিতে সুর তোলেন। তার বাঁশির সুর বাতাসে আলো ছড়িয়ে মুখরিত করে চারপাশ। তিনি প্রায় অর্ধশত প্রকারের সুর তুলতে পারেন বলে জানান হাফিজ।
বাঁশিপ্রেমিক হাফজ উদ্দিন জানান, প্রতিদিন তার ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা রোজগার হয়। এই টাকাতেই মা-বাবা এবং স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বেশ সুখেই চলছে সংসার।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno