আজ- ৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বুধবার  সকাল ১১:১৫

মধুপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ ও মন্ত্রীর দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে!

 

বুলবুল মল্লিক:

অওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ডক্টর মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপির নির্বাচনী এলাকা টাঙ্গাইল-১(মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনের মধুপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে।

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মধুপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরোয়ার আলম খান আবু দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশি হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে মঙ্গলবার(২৬ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত ‘বিশেষ বর্ধিত’ সভার মধ্য দিয়ে আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে মধুপুর আওয়ামী লীগের বিভক্তি। ওই সভায় মন্ত্রীর অনুসারীরা উপস্থিত থাকলেও দলের উপজেলা শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অধিকাংশ নেতা অনুপস্থিত ছিলেন।


জানাগেছে, মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত টাঙ্গাইল-১ আসনে ২০০১ সালে ডক্টর মো. আব্দুর রাজ্জাক আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে তিনি সংসদ সদস্য হন। নির্বাচিত হয়ে তিনি প্রথমে খাদ্যমন্ত্রী ও পরে কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।


মধুপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সরোয়ার আলম খান আবু উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়নের তৃণমূল নেতাকর্মীদের আস্থা অর্জনের প্রয়াস পান। এ সুবাদে মন্ত্রী ডক্টর মো. আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি হয়। এক সময় সরোয়ার আলম খান আবু দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে মে মাসে ঘোষণা দেন। গণমাধ্যমে কৃষিমন্ত্রীকে কটূক্তি করে বক্তব্য দেন।


উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা জানায়, মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার আলম খান আবু চলতি বছরের মে মাসে টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ঘোষণার পর থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভক্তি প্রকাশ হতে থাকে। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাকের অনুসারীরা সরোয়ার আলম খানের প্রার্থীতাকে ভালোভাবে নেননি।


তারা জানায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খন্দকার শফি উদ্দিন মনি ও সরোয়ার আলম খান আবু গত ২৩ জুন দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনে সমাবেশের আয়োজন করেন। ওই সমাবেশকে কেন্দ্র করে ডক্টর মো. আব্দুর রাজ্জাকের অনুসারীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। কৃষিমন্ত্রীর অনুসারীরা হামলা চালিয়ে সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার আলম খান আবুর গাড়ি ভাংচুর করে।

এ সময় তারা আওয়ামীলীগ কার্যালয় ও বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আসা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ৫০-৬০টি মোটরসাইকেলও ভাংচুর করে। ১৫ আগস্ট জাতির পিতার শাহাদৎ বার্ষিকীর অনুষ্ঠানেও বাধা দেয়। এরপর তারা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদ অনুষ্ঠানে মঞ্চ ভাংচুর, নেতাকর্মীদের মারধর ও ১০-১২টি মোটর সাইকেল ভাংচুর করে। এরপর থেকে দুই পক্ষের ‘মুখ দেখাদেখি’ বন্ধ হয়ে যায়।


মধুপুর অডিটরিয়ামে আয়োজিত গত ২৬ সেপ্টেম্বর কৃষিমন্ত্রী ডক্টর মো. আব্দুর রাজ্জাকের অনুসারী হিসেবে পরিচিত উপজেলা আওয়ামী লীগের ১ নম্বর সহ-সভাপতি ইয়াকুব আলী, পৌর মেয়র সিদ্দিক হোসেন খান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মীর ফরহাদুল ইসলাম ও সাদিকুল ইসলামের নেতৃত্বে বিশেষ বর্ধিত সভা ডাকা হয়। ওই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন- কৃষিমন্ত্রী ডক্টর মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপি। সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও তাদের অনুসারীরা অংশ নেননি।


সভায় অংশ না নেওয়া নেতারা জানান, তাদের জানামতে টাঙ্গাইল জেলার ৮টি সংসদীয় আসনের মধ্যে টাঙ্গাইল-১ আসনের সংসদ সদস্য ডক্টর মো. আব্দুর রাজ্জাকের জনপ্রিয়তা তলানীতে। মধুপুরে আদিবাসী সহ অধিকাংশ মানুষ তাঁর নানাবিধ কর্মকান্ডে নাখোশ। তারা এ আসনে সংসদ সদস্য পদে মন্ত্রীর পরিবর্তন চায়।


মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার আলম খান জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগের নামে ‘বিশেষ বর্ধিত’ সভা ডাকার এখতিয়ার শুধুমাত্র সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের। কিন্তু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। যারা ওই সভা ডেকেছেন- তারা সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের জানানো হবে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরোয়ার আলম খান আবু আরও জানান, অনেক নেতাদের ভয় ও লোভ দেখিয়ে বর্ধিত সভায় নেওয়া হয়েছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আলোচনা করে খুব শিগগিরই উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা ডাকা হবে।


ওই বিশেষ বর্ধিত সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের ১ নম্বর সহ-সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান ইয়াকুব আলী সভাপতিত্ব করেন। তিনি জানান, তাদের ডাকা বিশেষ বর্ধিত সভা সফল হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এবং ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দু-একজন অনুসারী ছাড়া সব নেতাকর্মী কৃষিমন্ত্রী ডক্টর মো. আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল।


মধুপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার শফি উদ্দিন মনি জানান, মধুপুরের আওয়ামী রাজনীতিতে দ্বন্দ্ব-সংঘাত শুরু হয়েছে। যে যার মতো করে কথা বলছেন। মন্ত্রীর অনুসারীরা খেয়াল-খুশি মতো বর্ধিত সভা করেছে- যা কখনোই কাম্য নয়। তিনি এরচেয়ে বেশি কিছু বলতে চান না।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno