আজ- ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ সোমবার  দুপুর ১:১১

যমুনা-ধলেশ্বরীর পানি কমলেও অভ্যন্তরীন জনপদে বাড়ছে

 

দৃষ্টি নিউজ:

টাঙ্গাইলের যমুনা, ধলেশ্বরী ও ঝিনাই নদীর পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। তবে পানি কমলেও যমুনা নদীর পানি ভূঞাপুরের টেপিবাড়ি পয়েন্টে এখনো বিপদসীমার ৫১ সেমি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধারাবাহিকভাবে জেলার অপর দুটি বৃহৎ নদী ধলেশ্বরীর পানি ১২সেমি. কমে ১২৯ সেমি. এবং ঝিনাই নদীর পানি ২০ সেমি. কমে বিপদসীমার ৫৫ সেমি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টাঙ্গাইলের বড় তিনটি নদীর পানি কমলেও জেলার নিম্নাঞ্চলের জনপদে পানি বাড়ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, পানি গড়িয়ে ভাটির দিকে নামার কারণে নিম্নাঞ্চলের জনপদে পানি কিছুটা বাড়ছে- এটা পানির স্বাভাবিক গতি। দু-একদিনের মধ্যে নিম্নাঞ্চলেও পানি কমতে শুরু করবে।

জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে ৯টি উপজেলার চার লাখ ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলি জমি, পাকা ও গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে জেলার সখীপুর, মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলায় এবারের বন্যা হানা দেয়নি। বড় নদীগুলোর পানি কমার ফলে জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও নতুন করে বাসাইল উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। বন্যা কবলিত আর পানিবন্দি হয়ে জেলার ৫টি উপজেলা টাঙ্গাইল সদর, ভূঞাপুর, নাগরপুর, দেলদুয়ার ও বাসাইলের ১৩৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এছাড়া জেলার ৯টি উপজেলার ৪৪টি ইউনিয়নের প্রায় ৪০০ গ্রামের বন্যার্তদের মাঝে চরম খাদ্যাভাব, ওষুধ ও বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সরকারি হিসেবে জেলার ৯টি উপজেলার ৪৪ ইউনিয়নের প্রায় ৪০০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যা কবলিত উপজেলাগুলো হচ্ছে- টাঙ্গাইল সদর, গোপালপুর, ভূঞাপুর, কালিহাতী, ঘাটাইল, নাগরপুর, দেলদুয়ার, বাসাইল ও মির্জাপুর। নদী ভাঙনে ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে প্রায় এক হাজার ৩৩০টি পরিবারের মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। বন্যায় ২১ হাজার ৯৭৪টি পরিবারের ঘরবাড়ি আংশিক বিলীন হয়েছে। এছাড়া ভূঞাপুর উপজেলার ১৬টি আশ্রয় কেন্দ্রে দুই হাজার ৪০০ বানভাসী মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় জেলার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা মিলিয়ে অন্তত ১৩৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বন্যায় ২৮ কিমি. কাঁচা সড়ক সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৪৫ কিমি. কাঁচা ও এক কিমি. পাকা সড়কসহ ৪টি ব্রিজ- কালভার্ট আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া যমুনার প্রবলস্রোতে ভূঞাপুর-তারাকান্দি বাঁধ ভেঙে অর্জুনা ইউনিয়নের তারাই অংশে ১০০ ফুট ও ভূঞাপুর পৌরসভার অংশে ১০০ফুট পাকা সড়ক সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে সেনাবাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে ওই অংশ মেরামত করা হচ্ছে। বন্যা কবলিত গ্রামগুলোতে স্বাস্থ্য সেবায় স্বাস্থ বিভাগের ৩৯টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী, বন্যায় ৬ হাজার ৬৪৯ হেক্টর ফসলি জমি এবং সবজি পানির নিচে নিমজ্জিত রয়েছে। এর মধ্যে ৪ হাজার ২০ হেক্টর বোনা আমন জমি, ৩০৫ হেক্টর রোপা আমন (বীজতলা), ১৩৫ হেক্টর রোপা আমন (আবাদ), এক হাজার ২৮৩ হেক্টর আউশ, ৬৩৯ হেক্টর বিভিন্ন ধরনের সবজি ও ২৬৭ হেক্টর জমির পাট পানিতে ডুবে গেছে।
জেলায় বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ সহায়তার জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দ এসেছে ৯০০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১৮ লাখ টাকা। তবে ইতোমধ্যে বরাদ্দপ্রাপ্ত ওই চালের ৬৩৫ মেট্রিক টন ও নগদ ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানাগেছে।

টাঙ্গাইলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিজ্ঞান শাখার উপ-সহকারী প্রকৌশলী রেজাউল করিম জানান, যমুনা নদীর পানি কমলেও বিপদসীমার ৫১ সেমি., ধলেশ্বরী নদীর দেলদুয়ার উপজেলার এলাসিন ব্রিজের ওখানে বিপদসীমার ১২৯ সেমি. এবং ঝিনাই নদীর কালিহাতী উপজেলার জোকারচর এলাকায় বিপদসীমার ৫৫ সেমি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া পুংলী ও বংশাই নদীর পানি বিপদসীমার নিচে রয়েছে। আগামি ২৪ ঘণ্টায় নদীগুলোতে আরো পানি কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno