আজ- ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার  সন্ধ্যা ৭:৫৫

রসুলপুরের তিন দিনের জামাই মেলা শেষ হচ্ছে কাল

 

দৃষ্টি নিউজ:

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার গালা ইউনিয়নের রসুলপুরে তিন দিনব্যাপী ‘জামাই মেলা’র সমাপনী হচ্ছে আগামিকাল বৃহস্পতিবার(২৭ এপ্রিল)। রসুলপুর বাছিরন নেছা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) তিনদিনব্যাপী জামাই মেলার উদ্বোধন করা হয়।

মেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের অন্তত ৩০ গ্রামের জামাইরা স্ত্রী-সন্তান নিয়ে শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে এসেছেন। ঈদের আনন্দের পাশাপাশি মেলাকে ঘিরে স্কুল মাঠে মানুষের ঢল নেমেছে- এলাকায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।


স্থানীয়রা জানায়, প্রতিবছরের ১১, ১২ ও ১৩ বৈশাখ (সনাতন পঞ্জিকা অনুসারে) রসুলপুরে মেলা বসে। এই মেলাকে কেন্দ্র করে আশেপাশের অন্তত ৩০ গ্রামের জামাইরা স্ত্রী-সন্তান নিয়ে শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে আসেন। তারাই মেলার মূল আকর্ষণ। এছাড়াও মেলার দিন শাশুড়িরা মেয়ের জামাইয়ের হাতে কিছু টাকা দেন। সেই টাকা দিয়ে জামাই বাজার করে এনে শ্বশুরবাড়ির লোকদের খাওয়ান। এটাই জামাই মেলার মূল আকর্ষন। এ কারণেই মেলাটি ‘জামাই মেলা’ হিসেবে পরিচিত। এ মেলার তিন দিনে রসুলপুরসহ আশপাশের গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে থাকে।


সরেজমিনে দেখা যায়, মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ধরনের খেলনা, প্রসাধনী, খাবারের দোকানসহ ছোট-বড় দেড় শতাধিক দোকান নিয়ে বসেছেন। মেলায় মিষ্টিজাতীয় পণ্যের দোকানও রয়েছে। এছাড়া এ মেলায় অর্ধশত ফার্নিচারের দোকান বসেছে। বড়দের পাশাপাশি ছোট ছেলেমেয়েরা এই মেলা উপভোগ করছেন।


রসুলপুর গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি হারেজ মিয়া জানান, তারা যখন ছোট ছিলেন, তখনও দাদার কাছে এই মেলার কথা শুনেছেন। বাড়ির মেয়ের জামাইরা মেলাকে কেন্দ্র করে বাড়ি আসায় ও মহাসড়কের পাশে হওয়ায় মেলাটি প্রতি বছরের ন্যায় জমজমাট হয়ে ওঠেছে। এই মেলাটি জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যাবাহী বলে জানান তিনি।


আশ্রাফ আলী, শুকুমার সাহা, প্রদীপ সাহা, মোবারক আলী সহ একাধিক জামাই জানান, প্রতিবছরই তারা শ্বশুরবাড়ি থেকে মেলায় আসার দাওয়াত পান। এই মেলা তাদের কাছে খুব আকর্ষনীয়। মেলাকে কেন্দ্র করে অনেক আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা হয়। তাদের সঙ্গে ভাব মিনিময় হয়। সব মিলিয়ে তারা মেলায় আনন্দে মেতে ওঠেন।


রসুলপুরের কথা সাহিত্যিক রাশেদ রহমান জানান, এই মেলার বয়স দেড় শতাধিক বছর হবে। এ এলাকার মানুষের কাছে ঈদ বা পূজা-পার্বণের মতোই এই মেলা উৎসবের। মেলাটি বৈশাখী মেলা হিসেবে ব্রিটিশ শাসনামলে শুরু হলেও এটা এখন ‘জামাই মেলা’ হিসেবে পরিচিত।

মেলা সামনে রেখে রসুলপুর ও এর আশপাশের বিবাহিত মেয়েরা তাদের স্বামীকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসেন। আর জামাইকে মেলা উপলক্ষে বরণ করে নেওয়ার জন্য শ্বশুর-শাশুড়িরা বেশ আগে থেকেই নানা প্রস্তুতি নেন। মেলার পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে রসুলপুরসহ আশপাশের গ্রামের যুবকদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী করা হয়েছে।


রসুলপুরের পাশের গ্রাম বড় বাসালিয়ার আকড়ি ব্যবসায়ী ফরহাদ হোসেন জানান, এমনিতে তিনি রডমিস্ত্রির কাজ করেন। মেলা এলে একটু বাড়তি লাভের আশায় কয়েক বছর ধরে আকড়ি বিক্রি করছেন। বর্তমানে ১৬০-১৭০ টাকা কেজি দরে আকড়ি বিক্রি হচ্ছে। সব মিলিয়ে ব্যবসা ভালোই হচ্ছে। অন্যান্য মেলার চেয়ে এই মেলা অনেক নিরাপদ।


নারী ব্যবসায়ী ফরিদা বেগম জানান, এটা টাঙ্গাইল জেলার একটি ঐতিহ্যবাহী মেলা। দুপুরে থেকে নারী –পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ মেলায় ভিড় করে। তারা বিভিন্নভাবে মেলা উপভোগ করে থাকেন।


মেলা কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসেম জানান, মেলায় দুই শতাধিক দোকান বসেছে। এ মেলায় মিষ্টি জাতীয় খাবার সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। মেলার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করছে। মেলায় খাবার আইটেম, খেলনাসহ বিভিন্ন ফার্নিচারও পাওয়া যায়।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno