আজ- ১০ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৭শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার  রাত ১:৫৭

২৬ মৃত ব্যক্তির নামে বয়স্ক ভাতা তোলা হচ্ছে!

 
প্রতীকী ছবি

দৃষ্টি নিউজ:

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার বিরাহিমপুর গ্রামের আজাহের এবং নার্গিছ বেওয়া মারা গেছেন দুই বছর আগে। মারা গেলেও তাদের নামে নিয়মিত বয়স্ক ভাতার টাকা তোলা হচ্ছে। মৃত ব্যক্তির নামে টাকা উঠছে, টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ২নং ঘাটাইল ইউনিয়নের বয়স্ক ভাতার তালিকা এমন কথা বলছে। শুধু আজাহের এবং নার্গিস নয়, তাদের মত এ তালিকায় আরো ২৬ জনের নাম রয়েছে।

মৃতদের পরিবারের দাবি ভাতার টাকার বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না। তাদের নামে সরকারের বরাদ্দকৃত এ টাকা কে নেয়? এমন প্রশ্ন ভুক্তভোগী পরিবারের। আজাহেরের ছেলে হাফেজ মনির হোসেন জানান, তার বাবা মারা যাওয়ার পর ভাতার কার্ড কে নিয়ে গেছে কোথায় আছে- তারা কিছুই জানেন না। তবে তারা জানতে চান তার বাবার নামে আসা এ টাকা ব্যাংক থেকে কে তুলেন।

নার্গিছ বেওয়ার বোন খোদেজা বলেন, ‘খলিল মেম্বার আইয়া কার্ড নিয়া গেছে, তারপর আর কিছুই জানি না’। ওই ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার খলিল বলেন, ‘আজাহের মারা গেছেন আমি মেম্বার হওয়ার আগেই, ওই কার্ডের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে নার্গিছ বেওয়ার কার্ড আমার কাছে আছে’।

মনির এবং খোদেজার মত অনেকেই জানতে চায় মৃত ব্যক্তির নামে বরাদ্দকৃত টাকায় ভারি হচ্ছে কার পকেট?

ঘাটাইল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ওই ইউনিয়নের ভাতাপ্রাপ্তদের চূড়ান্ত তালিকায় সাক্ষর করেন। এতে মোট বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ৬৩৩ জন। ব্যাংক গত বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) থেকে এ ভাতার টাকা দেয়া শুরু করেছে।

ভাতাভোগীদের তালিকা ধরে ওই ইউনিয়নের ২০টি গ্রামে অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে ভাতা প্রদানে নানা অসঙ্গতির তথ্য। মৃত ব্যক্তির নামে ভাতা উত্তোলন, একই পরিবারে স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই তালিকায় আছেন, বয়স হয়নি তবুও মিলেছে বয়স্ক ভাতার কার্ড। শাহপুর গ্রামের আমিনা মারা গেছেন পাঁচ বছর আগে। তার ছেলে জুলহাস বলেন, মা যে বয়স্ক ভাতা পেতেন তাই তো জানি না।

ঘাটাইল ইউনিয়নে দীর্ঘদিন কারিগরী প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী নাসরিন সুলতানা বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা মৃত্যু সনদ প্রদানের মাধ্যমে তাদের হাত হয়েই ভাতাপ্রাপ্ত মৃত ব্যক্তির কার্ড আমাদের হাতে আসে। প্রতিস্থাপনের তালিকাও ওনারাই দিয়ে থাকেন’।

ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম জিএম বলেন, ‘বয়স্কভাতা যাচাই-বাছাই কার্যক্রমে ঘাটাইল ইউনিয়নের উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি আমি। এ কাজে চেয়ারম্যান হায়দার আলী আমাকে সঙ্গে রাখেন না। ভাতাভোগী কেউ মারা গেলে সেই কার্ড চেয়ারম্যান নিয়ে নেন এবং সেই টাকা তিনি নিজেই ভোগ করেন’।

ঘাটাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হায়দার আলী বলেন, ‘মৃত ব্যক্তিদের নামে বয়স্কভাতার টাকা উঠানো হয় এমন তথ্য আমার জানা নেই। আপনারা ওই লোকদের একটা তালিকা নিয়ে আমার কাছে আসেন’।

অগ্রণী ব্যাংক ঘাটাইল শাখার ম্যানেজার মো. শামছুল হক জানান, যারা স্বশরীরে ভাতা বই নিয়ে উপস্থিত হয় তারা তাদের ভাতা দিয়ে থাকেন। অন্যথায় কেউ জীবিত আছে কিন্তু অসুস্থ- এক্ষেত্রে ইউপি চেয়ারম্যান প্রত্যয়ন দিলে তারা সেই লোকের ভাতার টাকা দিয়ে দেন।

ঘাটাইল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আসাদুল ইসলাম বলেন, যতক্ষণ না চেয়ারম্যান আমাদের মৃত ব্যক্তির তথ্য ও বই ফেরত দেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি না। মৃত্যু সনদ দেন চেয়ারম্যান। আর ভাতা উত্তোলনের ক্ষেত্রে ভাতাপ্রাপ্তদের সনাক্ত করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। প্রতিটি ইউনিয়নে সব ধরণের ভাতার সভাপতি থাকেন ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার সরকার বলেন, যদি এমন কিছু হয়ে থাকে তবে তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno