আজ- ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শনিবার  রাত ১:৩৪

কালিহাতীর তৈরি মুড়ি যাচ্ছে দেশের ১০ জেলায়

 
হাতে মুড়ি ভাজা হচ্ছে

দৃষ্টি নিউজ:

পবিত্র রমজান মাসের ইফতারির রকমারি উপাদানের মধ্যে মুড়ি অত্যাবশকীয় হওয়ায় চাহিদা অনেক বেশি থাকায় টাঙ্গাইলের মুড়ি তৈরির কারিগর ও ব্যবসায়ীদের দম ফেলার ফুসরত নেই। টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার নারান্দিয়া থেকে দেশের ১০ জেলায় মুড়ি সরবরাহ হয়ে থাকে।
সরেজমিনে জানা যায়, কালিহাতী উপজেলার উৎপাদিত মুড়ির সুনাম দেশব্যাপী। মুড়ি উৎপাদনের সাথে নারান্দিয়ার মানুষ অনেক আগে থেকে জড়িত। এখানে দুইভাবে মুড়ি উৎপাদন করা হয়; হাতে ভেজে ও মেশিনের সাহায্যে। কালিহাতী উপজেলার নারান্দিয়ায় পাঁচটি মিলে মেশিনের সাহায্যে এবং শতাধিক বাড়িতে হাতে ভেজে মুড়ি উৎপাদন করা হয়। মেশিনের সাহায্যে মুড়ি উৎপাদন নতুন সংযোজন হলেও অনেক আগে থেকেই হাতে ভেজে মুড়ি তৈরি এবং বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন মোদক সম্প্রদায়।
কালিহাতী উপজেলার নারান্দিয়া, মাইস্তা, নগরবাড়ী, দৌলতপুর, লুহুরিয়া ও সিংহটিয়াসহ প্রায় পনেরটি গ্রামের কয়েক’শ পরিবার হাতে ভেজে মুড়ি তৈরি করে থাকে। এক ব্যক্তি এক দিনে এক থেকে দেড় মণ চালের মুড়ি ভাজতে পারেন। প্রতি মণ(৪০ কেজি) চালে ২২ থেকে ২৩ কেজি মুড়ি হয়। প্রতি কেজি মুড়ি পাইকারি ৫৫-৬৫ টাকা এবং খুচরা ৭০ থেকে ৯০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। মূলত গ্রামের মহিলারাই হাতে ভেজে গুণগত মানসম্মত মুড়ি তৈরি করেন।
নারান্দিয়া ইউনিয়নের নগরবাড়ীতে দুইটি, দৌলতপুরে দুইটি মোট ৪টি মিলে ৫টি মেশিনের সাহায্যে মুড়ি ভাজা হয়। সততা মুড়ির মিলের স্বত্বাধিকারী শংকর চন্দ্র মোদক বলেন, ৫০ কেজি চালের বস্তায় ৪৪-৪৫ কেজি মুড়ি হয়। প্রতি কেজি মুড়ি আমরা ৫৫ থেকে ৬০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করি। রমজান মাসে প্রতিদিন পাঁচটি মিলে ১৫০বস্তারও বেশি চালের মুড়ি উৎপাদন করা হচ্ছে। প্রতিদিন পাইকাররা মুড়ি কিনতে মিলে এসে অপেক্ষা করেন এবং মুড়ি নিয়ে মোকামে চলে যান। প্রায় চার লাখ টাকার মেশিনে ভাজা মুড়ি প্রতিদিন কেনাবেচা হয়।
এদিকে মেশিনের সাহায্যে বিপুল পরিমাণ মুড়ি উৎপাদিত হলেও হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা এখনও বেশি। মেশিনে ভাজা মুড়ি সাদা ও লম্বা করতে ক্ষতিকর রাসায়নিক ইউরিয়া কিংবা সোডা ব্যবহারের অভিযোগ থাকায় একশ্রেণির মানুষ সর্বদাই বিষমুক্ত হাতেভাজা মুড়ি খেয়ে থাকেন।

মেশিনে মুড়ি ভাজা হচ্ছে

দৌলতপুর গ্রামের মিনতি রাণী বলেন, আমরা বংশ পরম্পরায় এই মুড়ি ভাজা ও ব্যবসার সাথে জড়িত। ধান সিদ্ধ করে রোদে শুকানোর পর আবার সেই ধান মেশিনে মাড়াই করে মুড়ি ভাজার জন্যে চাল তৈরি করা হয়। পরে সেই চাল দিয়ে লবণ-জলের মিশ্রণে আগুনে তাপ সহ্য করে বিশুদ্ধ মুড়ি ভাজতে অনেক পরিশ্রম হয়। কিন্তু এবার বাজার দর অন্য বছরের চেয়ে একটু ভাল। অনেক সময় গ্রাহকদের চাহিদার তুলনায় হাতে ভাজা মুড়ি তৈরি এবং সরবারহ কম হয়।
তাদের দেয়া তথ্যমতে প্রতিদিন প্রায় দুই লাখ টাকার হাতে ভাজা মুড়ি উৎপাদন এবং কেনাবেচা হয়। তবে পরিশ্রমের লভ্যাংশের বেশির ভাগই চলে যায় মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে। রমজান মাসে দূর-দূরান্ত থেকে পাইকাররা পিকআপ, ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনে বস্তাভর্তি মুড়ি কিনে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় বিক্রি করেন। যাতায়াত ব্যবস্থা ভাল থাকায় টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, ঢাকা, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, বগুড়া, শেরপুর ও গাজীপুরে নারান্দিয়ার মুড়ি সরবরাহ করা হয়।
লোকনাথ মুড়ির মিলের স্বত্বাধিকারী সুনিল চন্দ্র মোদক বলেন, আমরা অনেক সময় মোবাইলেও মুড়ির অর্ডার নিয়ে সরবরাহ করে থাকি। তাছাড়া নির্দিষ্ট বাজারে স্থায়ী গ্রাহকরা মুড়ি ক্রয় করে থাকেন।
রমজানে ৬ লাখ টাকার মুড়ি প্রতিদিন মেশিনে ও হাতে ভেজে তৈরি হলেও বছরের অন্য সময়ে অর্ধেকে নেমে আসে। পাঁচটি মিলে ৪০জন শ্রমিক এবং শতাধিক পরিবার প্রত্যক্ষভাবে ও বিপুল সংখ্যক মানুষ পরোক্ষভাবে মুড়ি ব্যবসার সাথে জড়িত। ফলে রমজানে কাজের চাপে দম ফেলার সময়টুকু পায়না মুড়ি উৎপাদনকারীরা।
প্রযুক্তির সাথে পাল্লা দিয়ে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না হাতে ভাজা মুড়ি উৎপাদনকারীরা। মেশিনে মুড়ি ভাজতে সময় কম লাগে কিন্তু তুলনামূলকভাবে লাভ বেশি। অন্যদিকে, হাতে মুড়ি ভাজতে সময় বেশি লাগে কিন্তু লাভ কম। ফলে হাতে ভাজা মুড়ি উৎপাদনকারীরা দিনদিন এই কাজ ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। এই পেশাকে টিকিয়ে রাখতে উৎপাদনকারীরা সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
এফবিসিসিআই এর পরিচালক কালিহাতীর সন্তান আবু নাসের বলেন, নারান্দিয়ায় মুড়ি কেনাবেচার একটি নির্দিষ্ট বাজার স্থাপনের পরিকল্পনা আছে। সরকার থেকে হাতে ভাজা মুড়ি উৎপাদনকারী ব্যক্তি এবং পরিবারগুলোকে বিশেষ ঋণ সুবিধা দেয়া প্রয়োজন।
এ বিষয়ে কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত দেবনাথ বলেন, নারান্দিয়ার হাতে ভাজা বিশুদ্ধ মুড়ির চাহিদা দেশজুড়ে। তাদের টিকিয়ে রাখতে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সাবির্ক সহযোগিতা করা হবে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno