আজ- ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার  সকাল ৮:৪৯

ঘাটাইলে বনের ভিতরে ১৮০ করাতকল চলছে! প্রশাসন নির্বিকার

 

দৃষ্টি নিউজ:


টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায় বনের ভিতরে লাইসেন্স ছাড়াই বনকর্মকর্তাদের মৌখিক অনুমতিতে ১২০ করাত কল এবং বন ঘেষে দেড় কিলোমিটারের মধ্যে গড়ে উঠেছে আরও ৬০ করাতকল।
এসব অবৈধ করাত কলে বৈধ গাছ ছাড়াও প্রতিদিন বনের গাছ চিড়াই করে গোপনে কাঠ পাচার করায় বনাঞ্চল ছাড়াও সংরক্ষিত বন দিন দিন উজাড় হয়ে যাচ্ছে। বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করায় একদিকে উজার হচ্ছে বন অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঘাটাইল উপজেলার ধলাপাড়া রেঞ্চের আওতাধীন ৮৮.৪৫ বর্গকিলোমিটার বনাঞ্চলের বটতলী, ঝড়কা, চৌড়াসা, দেওপাড়া, ধলাপাড়া ও সাগরদিঘী এ ছয়টি বিটের ৪৯টি মৌজায় বনভূমি ও সংরক্ষিত বনভূমির পরিমাণ ২৯ হাজার ১০৬.৭৬ একর। এই বিশাল বন ভূমিতে রয়েছে আকাশমণি, মেনজিয়াম, ইউক্যালিপ্টাস, সেগুন ও শাল-গজারি বন সহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ-গাছালী। শালবনের ভিতরে ডিজেল মেশিন দিয়ে স্থাপন করা হয়েছে ১২০ করাত কল। এসব করাতকল ও অতিরিক্ত গাছ চুরির কারণে প্রতি বছর সরকারের কোটি কোটি টাকার বাগান ধংস হয়ে যাচ্ছে। করাতকলের বিরুদ্ধে অভিযান না থাকায় সংরক্ষিতগুলো বাগান বিরান ভূমিতে পরিণত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বন বিভাগের নিয়মানুযায়ী বনাঞ্চলের ১০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে করাতকল স্থাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তারপরও বন কর্মকর্তাদের এককালিন মোটা টাকা সেলামী ও মাসোহারার বিনিময়ে মালিকরা এসব করাতকল চালাচ্ছেন। রেঞ্চ অফিস ও বিট অফিসের নাকের ডগায় মালিকরা করাতকল স্থাপন করে দিনরাত চোরাই কাঠ চিড়াই করছে। সংশ্লিষ্ট রেঞ্চ কর্মকর্তা, বিট কর্মকর্তা ও ফরেষ্ট গার্ডদের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় দিনের পর দিন এসব করাতকল চালু রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৮০ করাত কলের প্রায় অর্ধেকই গত দুই বছরে স্থাপন করা হয়েছে। বনাঞ্চল সহ পরিবেশ রক্ষার্থে উপজেলায় বন ও পরিবেশ কমিটি থাকলেও এ কমিটির কার্যক্রম চলছে শুধু কাগজে কলমে।
বনের ভিতরে কুশারিয়া, মাকড়াই, দেওজানা, নলমা, গাঞ্জানা, ছনখোলা, চাপড়ি, মুন্সিগঞ্জ, মানিকপুর, বোয়ালীহাটবাড়ী, ধলাপাড়া, পেঁচারআটা, শহরগোপিনপুর, সাগরদিঘী, জোড়দিঘী, মুরাইদ, আবেদ আলী, লক্ষিন্দর, সিংহেরচালা, গারোবাজার, দেওপাড়া, শিবেরপাড়া, মালেঙ্গা, মমিনপুর, বগা, ফকিরচালা সহ বিভিন্ন স্থানে ডিজেল মেশিন দিয়ে গড়ে উঠেছে ১২০টি করাতকল। একই সাথে বন ঘেষে আমতলা, দেউলাবাড়ী, পাকুটিয়া, পোড়াবাড়ী, কাইতকাই, ঝড়কা, বানিয়াপাড়া, মাইধারচালা, দেলুটিয়ায় লাইসেন্স ছাড়া কর্মকর্তাদের মৌখিক অনুমতিতে চলছে আরও ৬০টি করাতকল। রসুলপুর ইউনিয়নে মুরাইদ দক্ষিণ পাড়া বনের ভিতরে গড়ে উঠেছে কয়লা উৎপাদনের মিল। প্রতিদিন বনের গাছ কেটে এ সব কয়লা উৎপাদন করা হচ্ছে। যত্রতত্র করাত কল স্থাপন অব্যাহত থাকায় বনাঞ্চল ছাড়াও সংরক্ষিত বন হুমকির মুখে পড়েছে।
এসব অবৈধ করাত কলের বিষয়ে পৌর করাতকল মালিক সমিতির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আ. হালিম জানান, ঘাটাইল উপজেলায় দুই শতাধিক করাতকল লাইসেন্স বিহীন চলছে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে বার বার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলার পর ২০১৭ সালের ২ আগস্ট অভিযান চালানোর নটক মঞ্চায়ন করা হয়। পরে কর্তৃৃপক্ষ টাকার বিনিময়ে জব্দকৃত করাতকল মালিকদের ফেরত দিয়ে দেয়।
করাতকল মলিক ও এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, বনের ভিতরে এসব করাতকলের ৯০ভাগের মালিক কাঠ ব্যবসায়ীরা। কাঠ চোরদের সাথে করাতকল মালিকদের দহরম সর্ম্পক রয়েছে। যারা গাছ চুরির সাথে জড়িত তাদের মধ্যেও অনেকে সঙ্গবদ্ধ হয়ে করাতকল স্থাপন করে অবাধে বনের গাছ নিধন করছে।
অবৈধ করাত কল কিভাবে চলে জানতে চাইলে দেউলাবাড়ী ইউনিয়ন করাতকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক জানান, দশজনের মতো করে কর্তৃৃপক্ষের সাথে মিলে-মিশেই করাতকল চালাতে হয়।
বটতলী বিট কর্মকর্তা সোলায়মান হোসেন বলেন, কিভাবে স্থাপন করা হয় তা আমি জানিনা তবে আমি কোন টাকা-পয়সা নেইনা।
ঘাটাইলের ধলাপাড়া রেঞ্চ কর্মকর্তা রেজাউল করিম মোবাইল ফোনে বলেন, এসব করাতকল কিভাবে চলে আমি নিজেও জানিনা। তবে করাতকল স্থাপনের সাথে আমি কিংবা আমার বিট অফিসারের কোন সম্পৃক্ততা নাই। তাহলে কিভাবে এইসব করাতকল স্থাপিত হয় বা চলে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, এ বিষয়ে মোবাইলে কথা বলা যাবেনা। সাক্ষাতে কথা বলব- অফিসে চলে আসুন বলেই সংযোগ বিচ্ছন্ন করে দেন।
করাতকল বন্ধ করার বিষয়ে ঘাটাইল উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা বন ও পরিবেশ কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম খান বলেন, উপজেলা মাসিক মিটিং চলাকালে অবৈধ করাতকল বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনেকবার বলা হয়েছে। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন থেকে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তিনি আরও বলেন, যারা রক্ষক তারাই যদি ভক্ষন করেন- তাহলে বন রক্ষা হবে কীভাবে?
ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল কাশেম মোহাম্মদ শাহীন জানান, বনের বিষয়গুলো বন বিভাগের কর্মকর্তারা দেখভাল করেন। ২০১৭ সালের অগস্টে পাঁচটি নয় ১৬-১৭টি করাতকল জব্দ করা হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে সে সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন। জব্দ করাতকলগুলোর বিষয়ে বন বিভাগ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করেছে। এ বিষয়ে মামলা চলমান রয়েছে এবং করাতকলগুলো জব্দ তালিকা অনুযায়ী সংরক্ষণ করা আছে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno