আজ- ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার  রাত ৯:৫০

টাঙ্গাইলের ‘স্কুল হেলথ ক্লিনিক’ নামে আছে কাজে নেই!

 

দৃষ্টি নিউজ:


টাঙ্গাইল মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রহিতকে ঠান্ডাজনিত কারণে তার বাবা সকাল ১১টার দিকে নিয়ে গেছেন টাঙ্গাইল স্কুল হেলথ ক্লিনিকে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখেন চিকিৎসক নেই। এর আগেও দু’দিন এসেছিলেন তারা। তখনও দেখা মেলেনি চিকিৎসকের। কর্তব্যরত অফিস সহায়ক প্রথমদিন জানিয়েছেন চিকিৎসক জরুরি কাজে বাইরে, দ্বিতীয় দিন বলেছেন আসতে দেরি হবে। আর সোমবার(১২ মার্চ) জানিয়েছেন সিভিল সার্জন অফিসে মিটিং-এ গেছেন। ফলে বাধ্য হয়ে তাদের যেতে হয়েছে বেসরকারি ক্লিনিকে।
রহিতের বাবা আব্দুর রহিম জানান, সরকারি এই ক্লিনিক, চিকিৎসক থেকে কি লাভ। জনগণের টাকায় বসে বসে বেতন নিচ্ছেন, অথচ কোন সেবাই তারা দিচ্ছেন না।
শুধু আব্দুর রহিম নয়, এমন বক্তব্য এখানে আসা অনেকের। চিকিৎসকসহ প্রয়োজনীয় সব লোকবল থাকার পরও কোন সেবা মেলে না এই প্রতিষ্ঠানে। ফলে সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি এখন নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, ছয় থেকে ১৫ বছর বয়সী স্কুলের শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দেয়ার উদ্দেশে টাঙ্গাইলসহ দেশের ২৩টি জেলা শহরে স্কুল হেলথ ক্লিনিক রয়েছে। প্রতিটি ক্লিনিকে দুজন চিকিৎসা কর্মকর্তা (এমবিবিএস ডাক্তার), একজন ফার্মাসিস্ট, একজন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ও দু’জন অফিস সহায়ক কর্মরত রয়েছেন। এদের দায়িত্ব সকাল আটটা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ক্লিনিকে আগত স্কুল শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করা। এছাড়া প্রতি সপ্তাহে দু-একটি স্কুল পরিদর্শন করে স্বাস্থ্য সেবা সম্পর্কে অবহিত করাও এদের কাজ।
কিন্তু সরেজমিন অন্তত দশদিন টাঙ্গাইল স্কুল হেলথ ক্লিনিকে গিয়ে একদিনও কর্তব্যরত চিকিৎসক পাওয়া যায়নি। দিনের বিভিন্ন সময় গিয়ে অধিকাংশ সময় দেখা গেছে কেউ আসেনি স্বাস্থ্য সেবা নিতে। তবে কর্তব্যরত ফার্মাসিস্ট রনজিত কুমার বণিক জানান, তাদের ক্লিনিকে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ জন শিক্ষার্থীকে স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হয়। তাছাড়া প্রতি সপ্তাহে এ ক্লিনিকের চিকিৎসকরা বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শনে যান।
টাঙ্গাইলের অন্তত দশটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়, তাদের প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে কোনদিন স্কুল হেলথ ক্লিনিক থেকে কেউ আসেননি। বিবেকানন্দ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আনন্দ মোহন দে জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানে কখনোই স্কুল হেলথ ক্লিনিকের কোন চিকিৎসক আসেননি। বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল করিম জানান, স্কুল হেলথ ক্লিনিকের কেউ আসেনি কখনো। কোন শিক্ষার্থীর চিকিৎসা সেবার প্রয়োজন হলে তাকে তারা ওই ক্লিনিকে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
স্বাস্থ্য বিভাগের নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা জানান, কোন কার্যক্রম না থাকায় স্কুল হেলথ ক্লিনিক এখন নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। যেসব চিকিৎসকদের প্রভাবশালী আত্মীয়স্বজন রয়েছে, তারা প্রভাব খাটিয়ে এখানে পদায়ন নেন। এটা স্বাস্থ্য বিভাগে এখন ‘প্রাইজ পোস্টিং’ হিসেবে পরিচিত। এখানে এলে নিয়মিত অফিস করতে হয় না। কোন কাজও করতে হয় না। বসে বসে বেতন পাওয়া যায়।
টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. শরীফ হোসেন খান জানান, টাঙ্গাইল স্কুল হেলথ ক্লিনিকে কর্মরত দুজন চিকিৎসকের মধ্যে একজন দীর্ঘ মেয়াদী ছুটিতে আছেন। বাকি একজনের নিয়মিত অফিসে থাকার কথা। তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।
কর্তব্যরত চিকিৎসক সঞ্চিতা মৈত্র জানান, তিনি নিয়মিতই অফিস করেন। তবে যখন সিভিল সার্জন অফিসে কোন মিটিং থাকে, স্কুল পরিদর্শনে যান সেই সময়টা তিনি থাকেন না।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno