আজ- ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার  রাত ৮:৪৩

টাঙ্গাইল-৪ আসনে কোন্দলে জর্জরিত আ’লীগ-বিএনপি

 

দৃষ্টি নিউজ:


একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে টাঙ্গাইল-৪(কালিহাতী) আসনে আওয়ামীলীগ-বিএনপির একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী আগাম গণসংযোগ করছেন। তবে ১৩টি ইউনিয়ন ও দুইটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত টাঙ্গাইল-৪(কালিহাতী) আসনে সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির গলার কাঁটা হিসেবে দেখছেন নির্বাচন বোদ্ধারা।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সব দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা বেশ আগে থেকে গণসংযোগ করছেন। বড় দুই দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময়, নির্বাচনী এলাকায় পোস্টার ও লিফলেট সেঁটে জনগণের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। আর তৃণমূল নেতাদের সমর্থন ও কেন্দ্রের সবুজ সংকেত পেতে লবিংও চালাচ্ছেন প্রার্থীরা।
টাঙ্গাইল-৪(কালিহাতী) আসনটি বরাবরই ভিআইপি আসন হিসেবে চিহ্নিত। এ আসনের চির প্রতিদ্বন্দ্বী মহান স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠক ও সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান সিরাজ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে টাঙ্গাইলের সংগঠক আবদুল লতিফ সিদ্দিকী উভয়েই রাজনীতির মাঠ থেকে ছিটকে পড়েছেন। এদের মধ্যে শাহজাহান সিরাজ অসুস্থতা জনিত করণে রাজনীতিতে নীরব এবং আবদুল লতিফ সিদ্দিকী নিউইয়র্কে হজ্ব ও তাবলীগ জামাত নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্যের কারণে মন্ত্রীত্ব হারান, দল থেকে বহিস্কৃত হন এবং সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। বস্তুত: শাহজাহান সিরাজ রাজনীতি থেকে বিচ্যূত হলেও আবদুল লতিফ সিদ্দিকী মনে করেন তিনি সাচ্চা আওয়ামীলীগার, আওয়ামীলীগ থেকে কেউ তাকে সরাতে পারবেনা। তিনি এখনও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর আস্থাশীল। আগামি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন এমন আভাস তাঁর কাছের লোকজনের। গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগের পর থেকে তিনি নিয়মিত এলাকায় আসছেন। কাছের লোকদের নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। তিনি নির্বাচনী মাঠে থাকলে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি উভয় দলের জন্যই বড় বাঁধা বলে মনে করেন উভয় দলের নেতাকর্মীরা।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানাগেছে, ১৯৭৩ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ৩ বার, বিএনপি প্রার্থী ৩ বার, জাতীয় পার্টির প্রার্থী একবার, জাসদ (সিরাজ) প্রার্থী একবার এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী একবার জয়লাভ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার টাঙ্গাইলের কালিহাতী থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য, এর পর ১৯৭৩, ১৯৯৬, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ আসনে যিনি এমপি নির্বাচিত হয়েছেন তাঁর দলই সরকার গঠন করেছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
সরেজমিনে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, ২০০৮ সালে শাহজাহান সিরাজ জেল-হাজতে থাকায় এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন দেয়া হয় কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শিল্পপতি লুৎফর রহমান মতিনকে। তিনি আওয়ামী লীগের আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর কাছে পরাজিত হন। লতিফ সিদ্দিকী এমপি হওয়ার পর সরকারের মন্ত্রী হিসেবে এলাকার বেশ উন্নয়ন করেন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে পুনরায় আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। এ আসনে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর জনপ্রিয়তা এখনও ঈর্ষনীয়।
টাঙ্গাইল-৪(কালিহাতী) আসনে শাসকদল আওয়ামীলীগ ও বিএনপির অন্ত:কোন্দল সীমাহীন। এ আসনের আওয়ামীলীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো দৃঢ় সাংগঠনিক দক্ষতায় নিয়ন্ত্রণ করতেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। তাঁর অনুপস্থিতিতে দলের সর্বেসর্বা এখন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজহারুল ইসলাম তালুকদার। এদিকে, আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর পদত্যাগের পর উপ-নির্বাচনে এমপি হয়েছেন হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারি। স্থানীয় সাংসদ হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারির সাথে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সভাপতি মোজহারুল ইসলামের দূরত্ব এখন যোজন যোজন। উভয়ের মধ্যকার সম্পর্ক সাপে-নেউলে। কেউ কাউকে সহ্য করেন না। সভা-সমাবেশে একত্রে বসলেও চেয়ার থাকে দূরত্বে। পারত পক্ষে উভয়ই উভয়কে এড়িয়ে চলেন। মোজহারুল ইসলাম তালুকদারের অভিযোগ, এমপি সোহেল হাজারি বিএনপি-জামায়াতের লোক নিয়ে চলাফেরা করেন, আ’লীগের নেতাকর্মীদের গুরুত্ব দেন না। আর এমপি সোহেল হাজারির বক্তব্য হচ্ছে, উপজেলা আ’লীগের সভাপতি তাঁকে দলীয় কাজে ডাকেন না, যথাযথ মূল্যায়নও করেন না। সাংগঠনিক কোন কর্মকান্ডের খবর পেলে তিনি নিজেই উপস্থিত হন।
বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারি আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হবেন। দলীয় মনোনয়নও তিনিই পাবেন এমন বিশ্বাস তাঁর কর্মী-সমর্থকদের। সোহেল হাজারি প্রতি সপ্তাহের অন্তত: ৪-৫দিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত এলাকার মানুষের খোঁজখবর নেন। সময়-অসময়ে দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়িতে গিয়ে হাজির হন, কুশল বিনিময় করেন। মাথায় টুকরি নিয়ে নিজেই উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করেন, নেতা-কর্মীদের সাথে একজন সাধারণ মানুষের মতো মাছ ধরেন। এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সভাপতি মোজহারুল ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু, ইঞ্জিনিয়ার লিয়াকত আলী, এফবিসিসিআই’র পরিচালক আবু নাসের গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। ইঞ্জিনিয়ার লিয়াকত আলী বিভিন্ন এলাকায় দু’হাতে দান-খয়রাতও করছেন। বিশেষ করে, এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে তিনি প্রায় সব সময় ছিলেন- ব্যক্তি উদ্যোগে উল্লেখযোগ্য ত্রাণ বিতরণও করেছেন। এছাড়া, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন, তাঁর সহধর্মিনী সাবেক সাংসদ বেগম লায়লা সিদ্দিকীও মনোনয়ন চাইবেন।
টাঙ্গাইল-৪(কালিহাতী) আসনে বিএনপির অন্ত:কোন্দলও চরমে। স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠক শাহজাহান সিরাজের স্ত্রী বেগম রাবেয়া সিরাজ, লুৎফর রহমান মতিন, মো. শাফি খান ও বেনজীর আহম্মেদ টিটুর রয়েছে নিজ নিজ গ্রুপ। ২০০৮ সালে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন পেয়ে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শিল্পপতি লুৎফর রহমান মতিন পরাজিত হলেও ভোট পান ৮৬ হাজার ৯১২টি। কিন্তু নির্বাচনের পরই তিনি দলীয় কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। সরকার বিরোধী কোন কর্মকান্ডে দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে পাশে পায়নি। ফলে আন্দোলন-সংগ্রামে মামলা হামলার শিকার নেতাকর্মীরা এলেঙ্গা পৌরসভার মেয়র মো. শাফি খানের দিকে ঝুঁকে পড়ে। এতে জেলা বিএনপি নেতা মো. শাফি খান তৃণমূলের নেতাকর্মীদের প্রিয়পাত্র। এলেঙ্গা পৌরসভার মেয়র থাকার সুবাদে মো. শাফি খান স্থানীয় নেতাকর্মীদের পাশে থাকছেন। একই সঙ্গে আত্মীয়তার সূত্রে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। মো. শাফি খান দলীয় মনোনয়ন পাবেন এমনটাই মনে করেন তার ঘনিষ্ঠ কর্মী-সমর্থকরা। তাছাড়া আগে থেকেই দলীয় মনোনয়ন নিয়ে কালিহাতী উপজেলা বিএনপির সভাপতি শিল্পপতি লুৎফর রহমান মতিনের সঙ্গে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠক সাবেক মন্ত্রী শাহজাহান সিরাজের সহধর্মিনী বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য বেগম রাবেয়া সিরাজের দ্বন্দ্ব রয়েছে। আগামি নির্বাচনে বেগম রাবেয়া সিরাজ বা ছেলে রাজিব আহমেদ(অপু সিরাজ) দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। উপজেলা বিএনপির একটি অংশ মনে করে, শিল্পপতি লুৎফর রহমান মতিন ব্যবসায়ী হলেও কালিহাতী বিএনপির রাজনীতিতে তার প্রয়োজন রয়েছে, তিনিই বিএনপি দলীয় প্রার্থী। এছাড়া মালয়েশিয়া বিএনপির সভাপতি প্রকৌশলী বাদলুর রহমান খান বাদল, সাবেক ছাত্র নেতা বেনজীর আহম্মেদ টিটু, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল হালিম, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র দলের সাবেক সভাপতি কৃষিবিদ এসএমএ খালিদ দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় এলাকায় গণসংযোগ করছেন। এ আসনে জেলা জাতীয় পার্টির অর্থবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোস্তাক আহম্মেদ রতন দলীয় প্রার্থী।
টাঙ্গাইল-৪ সংসদীয় আসনের ১৩ ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভায় মোট ভোটার দুই লাখ ৯০ হাজার ৫৫জন। এরমধ্যে নারী ভোটার এক লাখ ৪৬ হাজার ৮০০ এবং পুরুষ ভোটার এক লাখ ৪৩ হাজার ২৫৫জন।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno