আজ- ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার  সকাল ৯:৩৭

ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজের পেটে ছুরিকাঘাত! তদন্ত কমিটি গঠন

 

দৃষ্টি নিউজ:

আহত স্বার্থক

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহপাঠীদের ফাঁসাতে নিজের পেটে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এখন চাউর। ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।
জানাগেছে, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মো. তুহিন ইসলাম স্বার্থক গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিকালে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। স্বার্থক অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা নিবিড় পালের সমর্থকরা হামলা করে তাকে আহত করেছে। ঘটনার পর বিষয়টি নিয়ে কেউ কথা না বললেও প্রত্যক্ষদর্শীসহ অনেকেই এখন ঘটনার বর্ণনা দিতে শুরু করেছেন। নিবিড় পাল ও সাইদুর রহমান গ্রুপের সমর্থকদের মধ্যে অনেকদিন থেকেই দ্বন্দ্ব চলছিল। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজের শরীরে ছুরি দিয়ে কেটে ওই অভিযোগ সাজানো হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে, লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইফ সায়েন্স অনুষদের ডিন ও এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. এএসএম সাইফুল্লাকে আহ্বায়ক ও বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. নাজমুল ইসলামকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হচ্ছেন, বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. একেএম মহিউদ্দিন, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মাদ মতিউর রহমান এবং টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ও শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মো. ইকবাল মাহমুদ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে শান্তির মডেল প্রস্তাব করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে গত ২৩ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল করে ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরা। মিছিলে নিবিড় পাল সমর্থক বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের দুই শিক্ষার্থী না আসায় ছাত্রলীগ নেতা সাইদুরের সমর্থক তুহিন ইসলাম স্বার্থক তাদেরকে গালি-গালাজ করে এবং মেরে ফেলার হুমকি দেয়। একই সাথে বঙ্গবন্ধু হলে নিজ কক্ষে দেখা করতে বলেন। কিন্তু তারা রুমে না গিয়ে নিবিড় সমর্থক হিসেবে পরিচিত তাদের সিনিয়র ভাইদের বিষয়টি জানায়। পরে গত ২৫ সেপ্টেম্বর(সোমবার) বিকালে তারা স্বার্থকের সাথে ফোনে যোগাযোগ করেন। এ সময় স্বার্থক তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে যাওয়ার জন্য বলেন। তারা প্রধান ফটকের সামনে গেলে স্বার্থকের সাথে বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতি হয়। এ সময় উপস্থিত লোকজন উভয় পক্ষকে শান্ত করেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী প্রধান ফটকের চায়ের দোকানদার মিঠু বলেন, ঘটনাটি আমার দোকানের সামনেই ঘটেছে। দুই-এক কথায় হঠাৎ করেই তাদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভবিক হয়ে যায়। এরপর সম্পূর্ণ সুস্থ-স্বাভাবিক ভাবে স্বার্থক তার মোটরসাইকেল নিয়ে তীব্র বেগে ক্যাম্পাসের ভিতরের দিকে যায়। প্রধান ফটক লাগানো থাকায় কর্তব্যরত নিরাপত্তা কর্মীকে গালি-গালাজ করে গেট খুলতে বলেন। সেখানে হাতাহাতির সময় কাউকে ছুরিকাঘাত করার কোন ঘটনা ঘটেনি। এসময় সাইদুর নিজেও সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলে মিঠু জানান।
এ ব্যাপারে পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী নিপু ভৌমিক বলেন, দ্রুত বেগে মোটরসাইকেলে আসা স্বার্থক অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করতে করতে বঙ্গবন্ধু হলে প্রবেশ করে। একটু পরেই আবার বের হয়ে যায়। এ সময় তার বাম হাতে একটি ছুরি দেখা গেছে। মোটরবাইকে উঠার আগে ছুরিটি কাপড়ে গুজে নেয় স্বার্থক। যাওয়ার সময় আরও একটি ছেলেকে বাইকের পিছনে বসিয়ে দ্রুত বেগে চলে যায়। হলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও সিকিউরিটি গার্ডের বক্তব্য নিলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে বলে জানান নিপু।
স্বার্থকের উচ্চস্বরে গালি-গালাজের শব্দ শুনে রুম থেকে অনেকেই বেরিয়ে আসেন এবং একই ঘটনা দেখতে পান বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক শিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সৌরভ বলেন, আমি হলের রিডিং রুমে পড়ছিলাম। হঠাৎ উচ্চস্বরে গালি-গালাজের শব্দ শুনে রুম থেকে বের হয়ে হলের গেটের দিকে আসি। তখন দেখি, স্বার্থকের বাম হাতে একটি ছুরি। পরে একটি ছেলেকে সাথে নিয়ে তীব্র বেগে মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যায়।
বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থী মুজিবুল্লাহ বলেন, পরীক্ষা শেষ হওয়ায় ক্যাম্পাসে ঘোরাঘুরি করতে ছিলাম। শহীদ মিনারের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ করে পেছন থেকে তীব্র বেগে একটি মোটরসাইকেলে আমাকে পাশ কাটিয়ে বঙ্গবন্ধু হলের দিকে যায় স্বার্থক। একটুর জন্য আমার শরীরে লাগেনি। তিনি বলেন, আমি ‘স্বপ্নচত্তর’-এ বসতে বসতেই একই মোটরসাইকেল তীব্র বেগে আরও একজনসহ স্বার্থক ফিরে এসে মেডিকেল সেন্টারের পিছনে লিচু গাছের নিচে গিয়ে থামে। সেখানে সাইদুর গ্রুপের আরও ৮-১০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। একটু পর সেখান থেকে আমরা চিৎকার শুনতে পাই। এরপর সেখানে থাকা ৪-৫ শিক্ষার্থী একজনকে কাঁধে ভর করে ভোকেশনালের বারান্দা দিয়ে মান্নান হলের দিকে নিয়ে যায়। তার কিছুক্ষণ পরেই প্রশাসনিক ভবনের দিক থেকে আসা প্রক্টর স্যারের গাড়ি দ্রুত বেগে মাঠের মধ্য দিয়ে মান্নান হলের দিকে যায়। এর পরেই যায় অ্যাম্বুলেন্স। মান্নান হল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে একজনকে হাসপাতালে নিয়ে যায় বলেন মুজিবুল্লাহ।
ঘটনা তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইফ সায়েন্স অনুষদের ডিন ও এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. এএসএম সাইফুল্লা জানান, তারা ঘটনার পূর্বাপর পরিস্থিতি সহ সার্বিক বিষয় খতিয়ে দেখছেন। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাবেনা।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno