আজ- ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার  দুপুর ১২:০৯

মধুপুরে রূপা ধর্ষণ ও হত্যা : চার জনের ফাঁসির আদেশ

 

দৃষ্টি নিউজ:

টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে কলেজছাত্রী জাকিয়া সুলতানা রূপাকে গণধর্ষণ ও হত্যা মামলায় চারজনের ফাঁসি ও একজনকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। সোমবার(১২ ফেব্রুয়ারি) সকাল সোয়া ১১টায় টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক এবং অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক আবুল মনসুর মিয়া এ রায় ঘোষণা করেন। এ সময় আদালতে মামলার আসামিরা উপস্থিত ছিলেন। ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হচ্ছেন, ছোঁয়া পরিবহন বাসের হেলপার শামীম(২৬), আকরাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীর (১৯) এবং চালক হাবিবুর (৪৫)। এছাড়া ওই বাসের সুপারভাইজার সফর আলীকে (৫৫) সাত বছরের কারাদন্ডের পাশাপাশি এক লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেয়া হয়েছে। রায়ে একই সঙ্গে মামলার অপরাধ সংঘটনের কাজে নিরাপদ ছোঁয়া পরিবহনের (রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৩৯৬৩)বাসটি ব্যবহৃত হওয়ায় ফৌজদারী কার্যবিধির ৫১৭ ধারানুসারে গাড়িটি সম্পূর্ণ নির্দায় অবস্থায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে নিহত রূপার পরিবারকে দেয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এর আগে ৫ ফেব্রুয়ারি আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার এ দিন ধার্য করেন বিচারক।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন, বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট একেএম নাছিমুল আক্তার নাসিম। তার সহায়তায় ছিলেন, মানবাধিকার কমিশনের আইনজীবী এস আকবর খান, মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট এমএ করিম মিয়া ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান আজাদ। আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট শামীম চৌধুরী দয়াল ও ঢাকা থেকে আসেন অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক এবং অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক আবুল মনসুর মিয়া সংক্ষিপ্ত রায়ে ঘোষণা করেন, ঘটনার ১৭৩ দিন আর মামলার ১৭১ দিনের মাথায় আলোচিত এ মামলার রায় হলো। মোট ৭৩ পৃষ্ঠার রায় ঘোষণা করেন আদালত। দুই পৃষ্ঠার সংক্ষিপ্ত রায়ে বলা হয়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০(২০০০ সনের ৮নং আইন)এর ৯(৩) ধারার অপরাধ রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিসংগত সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সমর্থ হওয়ায় মোট ১৪ কার্য দিবসে রায় ঘোষণা করা সম্ভব হলো। ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার নন্দিবাড়ী গ্রামের খোরশেদ আলমের ছেলে ও বাসটির হেলপার শামীম (২৬), একই জেলা, উপজেলা ও গ্রামের মৃত কামাল হোসেনের ছেলে ও হেলপার আকরাম (৩৫), ময়মনসিংহ জেলার মির্জাপুর গ্রামের মৃত এমদাদুল হকের ছেলে হেলপার জাহাঙ্গীর ওরফে সুজা মিয়া (১৯) ও একই জেলা ও গ্রামের মৃত শহিদুল ইসলামের ছেলে ও বাস চালক হাবিবুরকে(৪৫) দোষী সাব্যস্তক্রমে ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে মৃতুদন্ডের আদেশ দেয়া হলো। এছাড়াও ময়মনসিংহ জেলার মির্জাপুর গ্রামের মো. সুলতান আলীর ছেলে ও বাসের সুপারভাইজার মো. ছবর আলীকে সাত বছরের কারাদন্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত করেন আদালতের বিচারক। মামলার অপরাধ সংঘটনের কাজে নিরাপদ ছোঁয়া পরিবহনের (রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৩৯৬৩)বাসটি ব্যবহৃত হওয়ায় ফৌজদারী কার্যবিধির ৫১৭ ধারানুসারে গাড়ীটি সম্পূর্ণ নির্দায় অবস্থায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে নিহত রূপার পরিবারকে দেয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
রাষ্ট্র পক্ষের প্রতিক্রিয়া:
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট আতাউর রহমান আজাদ ও এস আকবর খান জানান, মাত্র ১৪ কর্মদিবসে এই মামলার রায় একটি নজিরবিহীন ঘটনা। এত অল্প সময়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এধরনের মামলার রায় ইতোপূর্বে লক্ষ্য করিনি। যারা ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতায় লিপ্ত তারা এই রায় থেকে শিক্ষা নিবে। এ রায়ের মধ্য দিয়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
আসামি পক্ষের প্রতিক্রিয়া:
আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট শামীম চৌধুরী দয়াল ও অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন বলেন, নিম্ন আদালত আজকে যে রায় দিয়েছে তা আইনের ব্যত্যয় হয়নি। রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে যেসব সাক্ষ্য প্রমাণ উত্থাপন করেছে সেখানে আসামিরা দোষী প্রমাণ হয়নি। রূপা ধর্ষণের যে আলামত রাষ্ট্রপক্ষ সংগ্রহ করেছে সেখানেও রূপা ধর্ষণ প্রমাণ হয়নি। এতে আসামিরা বিজ্ঞ আদালতে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আমরা এ রায়ে উচ্চ আদালতে ন্যায্য বিচারের দাবিতে আপিল করবো।
রূপার স্বজনদের প্রতিক্রিয়া:
রূপাকে ধর্ষণের পর হত্যা মামলার রায়ে চারজনের ফাঁসি ও একজনের সাত বছরের কারাদন্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহত রূপার স্বজনরা।
নিহত রূপার ভাই হাফিজুর রহমান এত অল্প সময়ে রূপা হত্যার বিচার পেয়ে আইনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, রূপাকে হত্যার সুবিচার পেয়েছি। আমরা আর কোন রূপাকে হারাতে চাই না। এ রায়ের মধ্যে দিয়ে দেশে নারীজাতি এখন নিজ নিজ গন্তব্যে নিরাপদে পৌঁছানোর সাহস পাবে। তবে এ রায় দ্রুত কার্যকর করার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে রূপাকে চলন্ত বাসে ধর্ষণ করে পরিবহন শ্রমিকরা। বাসেই তাকে হত্যার পর মধুপুর উপজেলায় পঁচিশ মাইল এলাকায় বনের মধ্যে রূপার মরদেহ ফেলে রেখে যায়।
এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ ওই রাতেই অজ্ঞাত নারী হিসেবে তার মরদেহ উদ্ধার করে। পরদিন ময়নাতদন্ত শেষে রূপার মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মধুপুর থানায় হত্যা মামলা করে। পত্রিকায় প্রকাশিত ছবি দেখে রূপার ভাই হাফিজুর রহমান মধুপুর থানায় গিয়ে ছবির ভিত্তিতে তাকে শনাক্ত করেন।
উল্লেখ্য, গত ২৮ আগস্ট এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ময়মনসিংহ-বগুড়া সড়কের ছোঁয়া পরিবহনের হেলপার শামীম (২৬), আকরাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীর (১৯) এবং চালক হাবিবুর (৪৫) ও সুপারভাইজার সফর আলীকে (৫৫) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদেরকে আদালতে হাজির করা হলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এ মামলায় বাদীসহ ২৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য-প্রমাণে মামলা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno