আজ- ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার  রাত ৮:১০

শেষ বলে স্বপ্নভঙ্গ বাংলাদেশের

 

দৃষ্টি স্পোর্টস:


এবার হবে, আগের চারটি ফাইনালের হতাশা ভুলে এমন আশাতেই বুক বেঁধেছিল বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসানের দল স্বপ্ন দেখেছিল, বাংলাদেশকে ইতিহাসের প্রথম শিরোপা উপহার দেয়ার। কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে মঞ্চটাও সাজানো ছিল, সেই মঞ্চে উড়ল না কেবল টাইগারদের বিজয়কেতন। শেষ বলের ছক্কায় জুটল আরও একবার স্বপ্নভঙ্গের যাতনা। পঞ্চমবারে এসেও পারল না বাংলাদেশ।
প্রেমাদাসার উইকেট ছিল ব্যাটিংস্বর্গ, এক সাব্বির রহমান ছাড়া সেখানেই নিজেদের ছায়া হয়ে রইলেন টাইগার ব্যাটসম্যানরা। পিচ রিপোর্ট বলছিল, এই পিচে ১৮০ রানও লড়াইয়ের জন্য যথেষ্ট হবে কিনা সন্দেহ। সেখানে সাব্বিরের ৭৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংসের পরও বাংলাদেশ ১৬৬ রানের বেশি এগোতে পারল না। ওই পুঁজি নিয়েও শেষতক লড়ে গেছে বাংলাদেশ। শেষ ২ ওভারে যখন ৩৪ রানের সমীকরণ, তখন জয়ের পাল্লাটা হেলে ছিল টাইগারদের দিকেই। কিন্তু ৮ বলে ২৯ রানের অভাবনীয় এক ইনিংসে সব উলট পালট করে দিলেন দিনেশ কার্তিক। তীরে এসে তরী ডুবিয়ে ৪ উইকেট হারল বাংলাদেশ।
সেরা তারকাদের বিশ্রাম দিয়ে আসরে খেলতে আসা এই ভারতও যে শক্তিধর, সেটাই প্রমাণ হয়ে গেল। দলকে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিলেন রোহিত। যুজবেন্দ্র চাহাল (৩/১৮), জয়দেব উনাদকাত (২/৩৩) আর ওয়াশিংটন সুন্দররা (১/২০) অসাধারণ বোলিংয়ে ‘অল্প’তেই বাংলাদেশকে আটকে রাখার পর আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে রোহিতই গড়েছেন ভারতের জয়ের ভীত, সর্বনাশ করেছেন বাংলাদেশের। তার গগণচুম্বী সব ছক্কা, বুলেট গতিতে বলের সীমানা পার হয়ে যাওয়া; টাইগার শিবির আর তাদের সমর্থকরা দেখেছে অসহায় দৃষ্টিতে।
বোলিংয়ে উলস্নাসের উপলক্ষ বাংলাদেশ পায়নি, এমনটা নয়। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই বদলি ফিল্ডার আরিফুল হকের ক্যাচ বানিয়ে শিখর ধাওয়ানকে (১০) থামিয়েছেন সাকিব। পরের ওভারে সুরেশ রায়নার (০) আউট নিয়ে তো নাটকই হয়ে গেল। রুবেল হোসেনের করা বলটি লেগ সাইড দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় রায়নার ব্যাটের আলতো ছোঁয়া নিয়ে জমা পড়ে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে। টাইগার শিবির উল্লাসে মাতে, অন্যদিকে আম্পায়ার দিলেন ওয়াইড। পরে রিভিও নিয়ে সফল বাংলাদেশ।
এর আগে-পরে চলল রোহিত শো। লোকেশ রাহুলও দারুণ সঙ্গ দিলেন দলপতিকে। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারেই ৫৬ রান তোলে ফেলে ভারত। এরপর এগিয়েছে রানের চাকায় গতি ধরে রেখে। রোহিত-রাহুলের ব্যাটে যখনই চার-ছক্কা; এমনভাবেই গর্জে উঠেছে প্রেমাদাসার গ্যালারি, ভারত যেন ঘরের মাঠে খেলছে! লংকানদের পুরো সমর্থন পেয়েছে তারা। কারণ, স্বাগতিক শ্রীলংকাকে যে আসর থেকে বিদায় করেছে বাংলাদেশই। তারই জের থাকল ফাইনালে।
এরপর ভারত এগিয়েছে রানের চাকায় গতি ধরে রেখে। তবে সময়মতোই লাগামটা হাতে নিয়েছিল বাংলাদেশ। ১৪ বলে ২৪ রান করা রাহুলকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের ম্যাচে ফেরা, এরপর হুমকি হয়ে থাকা রোহিতের বিদায়; রুবেল আর নাজমুল ইসলাম অপু ভীষণ প্রয়োজনের মুহূর্তেই উইকেট উপহার দিয়েছেন দলকে। ৪২ বলে ৪টি চার আর ৩টি ছক্কায় ৫৬ রান করে রোহিতের বিদায় নেয়া, ২৭ বলে ২৮ রান করে মনিষ পান্ডের বিদায়। বাংলাদেশ তখন চালকের আসনে।
শেষ ২ ওভারে জয়ের জন্য ৩৪ রান দরকার ছিল ভারতের। এমন পরিস্থিতিতে ১৯তম ওভারে ২২ রান খরচ করেন রুবেল। তাতেই সর্বনাশ। দুটো করে চার আর ছক্কায় ম্যাচটাকে আবার ভারতের দিকে টেনে নেন দিনেশ কার্তিক। শেষ ওভারে ১২ রানের সমীকরণ, বোলিংয়ে এসে সেটাকেও কঠিন করে তুলেছিলেন সৌম্য সরকার। শেষ বলে দরকার ছিল ৫ রান, কাভার অঞ্চল দিয়ে ছক্কা হাকিয়ে কার্তিক মাতলেন জয়োল্লাসে। বোলার সৌম্য তখন হতাশায় পিচের উপর মাথা নুইয়ে। ম্যাচে বাংলাদেশের প্রাপ্তি ওই হতাশাই।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা, শুরুটা খারাপ ছিল না। তামিম ইকবাল আর লিটন দাসের ২০ বলের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ২৭ রান। এরপরই বিপত্তি। ওয়াশিংটন সুন্দরকে সুইপ করতে গিয়ে রায়নার তালুবন্দি লিটন (১১)। দলীয় ওই ২৭ রানেই আরেক স্পিনার যুজবেন্দ্র চাহালের শিকার তামিম (১৫)। আগের ম্যাচে দারুণ ব্যাটিং প্রদর্শনীতে হাফসেঞ্চুরি তুলে নেয়া এই ওপেনার এদিন নিজেকে দুর্ভাগা ভাবতেই পারেন। সীমানার ওপর শার্দুল ঠাকুর যেভাবে তার ক্যাচটা নিয়েছেন, একটু এদিক-সেদিক হলেই ছক্কা হয়ে যেত।
তা না হওয়ায় হতাশা বাড়ে বাংলাদেশের। হতাশা আরও বাড়ে ওই ওভারের শেষ বলে সৌম্য সরকার (১) শিখর ধাওয়ানকে ক্যাচ দিলে। মাত্র ৬ রানের ব্যবধানে তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে মহাসংকটে পড়ে যায় বাংলাদেশ। সেট হয়ে যাওয়া সাব্বির রহমানের সঙ্গে মুশফিকুর রহিমের ৩৫ রানের জুটি সংকট কাটানোর আভাস দিয়েছিল, কিন্তু ম্যাচে চাহালের তৃতীয় শিকার হয়ে দুরন্ত ছন্দে থাকা মুশফিক ফেরায় আবার এলোমেলো হয়ে যায় সব।
একপ্রান্ত আগলে রাখা সাব্বির দেখছিলেন সঙ্গীদের আসা-যাওয়া। আগের ম্যাচের নায়ক মাহমুদউল্লাহ এদিন বোকার মতো রানআউট হওয়ার আগে অবশ্য অনেকটা সময় সঙ্গ দিয়েছেন। ৩৬ রানের পঞ্চম উইকেট জুটিতে ২১ রানই জোগান দিয়েছেন দেশের চতুর্থ ক্রিকেটার হিসেবে টি২০তে হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করা ডানহাতি ব্যাটসম্যান। পরিস্থিতি বুঝে শিটঅ্যাঙ্করের ভূমিকা পালন করে গেছেন সাব্বির, পেয়েছেন টি২০ ক্যারিয়ারের পঞ্চম হাফসেঞ্চুরির দেখা।
মূলত সাব্বিরের অসাধারণ ব্যাটিংয়ের কারণেই পরপর মাহমুদউল্লাহ আর দলপতি সাকিবের (৭) রানআউটের ধাক্কা সামলে উঠতে পেরেছে বাংলাদেশ। দুর্দান্ত সব শট খেলেছেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। উনাদকাতের করা ইনিংসের ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে বোল্ড হওয়ার আগে হাঁকিয়েছেন ৭টি চার আর ৪টি ছক্কা। ৫০ বলে করেছেন ৭৭ রান। শেষদিকে ৭ বলে ২টি চার আর একটি ছক্কায় ১৯ রান করেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তাতেই ১৬৬ রানের পুঁজি বাংলাদেশের। জয়ের জন্য সেটা যথেষ্ট হয়নি।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno