আজ- ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শনিবার  সন্ধ্যা ৬:৫২

আওয়ামীলীগ নেতার অসাংগঠনিক সিদ্ধান্তে তোলপাড়!

 

তৃণমূলের বিভক্তি প্রকাশ্যে :: সভাপতি-সম্পাদক ব্যতিত বর্ধিত সভা :: দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণায় নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ

বুলবুল মল্লিক:

টাঙ্গাইলের মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুইজন দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামীলীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী ডক্টর মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপির উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের একাংশের বিশেষ সভায় ওই ঘোষণার জেরে দুই উপজেলার তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।

দুই উপজেলার ওই বর্ধিত সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ গুরুত্বপূর্ণ নেতারা অনুপস্থিত থাকায় দলীয় বিভক্তি প্রকাশ্যে এসেছে। ফলে ভোটের আগেই বিভক্তির জেরে নির্বাচনকালীন সহিংসতার আশঙ্কা দানা বাঁধছে।

দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্থানীয় নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীদের জন্য দেওয়া নির্দেশনা উপেক্ষা করে দলের সভাপতি মন্ডলীর একজন সদস্যের এহেন অযাচিত সিদ্ধান্তে স্থানীয় এমপিকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।


জানা যায়, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের দলীয় প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে দলের যে কারও নির্বাচন করতে বিধি-নিষেধ নেই। এ সুযোগে অনেক ত্যাগী ও পরীক্ষীত নেতা নির্বাচন করার জন্য ইতোমধ্যে গণসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন।


টাঙ্গাইলের ১টি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে মধুপুর উপজেলা গঠিত। উপজেলা নির্বাচনে সাম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্র্থীরা হচ্ছেন- বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছরোয়ার আলম খান আবু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও শোলাকুড়ি ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইয়াকুব আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ডক্টর ফরহাদুল আলম মণি।

অন্যদিকে, ১টি পৌরসভা এবং ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ধনবাড়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সাম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হচ্ছেন- বর্তমান চেয়ারম্যান ও এমপির খালাতো ভাই হারুনার রশিদ হীরা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মীর ফারুক আহমেদ ফরিদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার দুইবারের মেয়র এবং দুইবারের ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপন,

সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী কিসলু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ওয়াদুদ তালুকদার সবুজ, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান রনি ও সাবেক ছাত্রনেতা আজিুজল ইসলাম।


ধনবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপন জানান, তাদের এমপি ডক্টর মো. আব্দুর রাজ্জাক গত ৩ মার্চ(রোববার) উপজেলা আওয়ামীলীগের বিশেষ বর্ধিত সভা করে তার খালাতো ভাই হারুনার রশিদ হীরাকে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন।

সভায় একইসঙ্গে তার পছন্দের প্রার্থী হারুনার রশিদ হিরার পক্ষে ভোট চেয়ে তাকে সবার হাতে তুলে দেন। এ সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মীর ফারুক আহমেদ ফরিদ ও তিনি উপস্থিত ছিলেন না। দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত রয়েছে- এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো প্রতীক দেওয়া হবেনা, সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে।

এমপি ডক্টর রাজ্জাক একজন বর্ষীয়ান কেন্দ্রীয় নেতা হয়ে কীভাবে একজন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলেন সেটা তার বোধগম্য নয়? ধনবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মীর ফারুক আহমেদ ফরিদ জানান, তাদেরকে বাদ রেখে এ ধরনের সভা করা ও সভায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীর নাম ঘোষণা দল ও নেত্রীর সিদ্ধান্তকে অমান্য করার নামান্তর। এমপির এ ধরনের সিদ্ধানে উপজেলার তৃণমূলের নেতাকর্মীরা খুবই ক্ষুব্ধ।


মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছরোয়ার আলম খান আবু জানান, টাঙ্গাইলের মধুপুর-ধনবাড়ী উপজেলার আওয়ামী রাজনীতি হ-য-ব-র-ল অবস্থা চলছে। দলীয় গঠনতন্ত্রের তোয়াক্কা না করে বর্তমান এমপি ও আওয়ামীলীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ডক্টর আব্দুর রাজ্জাক নিজের ব্যক্তিগত ইচ্ছেকে সংগঠনের উপর দিয়ে চালাচ্ছেন।

মধুপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বাদ দিয়ে গত ২৮ ফেব্রæয়ারি বিশেষ বর্ধিত সভা করা হয়েছে। ওই সভায় তার পছন্দের ইয়াকুব আলীকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। যা অনিয়মতান্ত্রিক ও স্বেচ্ছাচারিতার বহি:প্রকাশ। কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ যেখানে দলীয় প্রতীক ও দলীয় সমর্থন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে- সেখানে তিনি দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দলীয় সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন।


জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও মধুপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ডক্টর ফরহাদুল আলম মণি জানান, তাদের এমপি সাহেব উপজেলা চেয়ারম্যান পদে এতগুলো যোগ্য প্রার্থীর মধ্যে কীভাবে ইয়াকুব আলীকে সাপোর্ট করলেন? তিনি জানান, ওই নাম ঘোষণা করায় উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর মন্টু এর প্রতিবাদ করে ওইসভা থেকে বের হয়ে আসেন। এমপি মহোদয় নিরপেক্ষতা ভঙ্গ করছেন।


জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলমসহ পদধারী একাধিক নেতা জানান, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেওয়া হবে না। কিন্তু কাউকে সরাসরি সমর্থন দেওয়া যাবে কি-না সে সিদ্ধান্ত তারা পান নাই।


আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট তারানা হালিম এমপি জানান, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থী থাকতেই পারে। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি যতটুকু জনেন মির্টিং করে সরাসরি কাউকে সমর্থন কিংবা সমর্থন না করার সুযোগ নেই।


এবিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী ডক্টর মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপির সাথে মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগ করা হলেও তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয় নি। তবে সাবেক মন্ত্রীর এহেন সিদ্ধান্তে মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলায় আওয়ামীলীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বিব্রত হয়েছেন। ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে বর্তমান এমপির পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।


প্রকাশ, সাবেক কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডক্টর মো. আব্দুর রাজ্জাক টাঙ্গাইল-১(মধুপুর-ধনবাড়ী) আসন থেকে টানা পাঁচবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনের আগে মধুপুরে এমপির অনুসারী এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছরোয়ার আলম খান আবুর অনুসারীদের মধ্যে একাধিক সংঘর্ষ, হামলা-মামলার ঘটনা ঘটে। নির্বাচনের পর ধনবাড়ীতে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মেহেদী হাসান রনির বাড়িতেও হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno