আজ- ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার  রাত ১০:১৪

ইংরেজি নববর্ষ এবং আমাদের লৌহজং

 

*মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল*

1483178905
আজ ১ জানুয়ারি। ইংরেজি নববর্ষ। নিউ ইয়ার। আমরা বাঙালিরা ১ জানুয়ারিকে পয়লা জানুয়ারি বলতে- লিখতে পারিনা; কেমন যেন উঁসখুস লাগে, বাঙালিত্বে আঘাত লাগার মতো। ১ জানুয়ারিতে প্রায় সব দেশেই জাঁকজমক উৎসব হলেও দিনটা কিন্তু সর্বত্র ‘নিউ ইয়ারস ডে’ নয়। মূলত খ্রিস্টান অধ্যুষিত এবং ইংরেজি ভাষাভাষি দেশ যেমন ইংল্যান্ড-আমেরিকায় ১ জানুয়ারি মানেই নিউ ইয়ারস ডে। কিন্তু আরব দেশে ১ জানুয়ারিতে হিজরি অর্থাৎ নববর্ষ শুরু হয় না। ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা কিংবা তিউনিসিয়ায় নতুন বছর শুরু আগস্ট থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে। নভেম্বরে এবং মার্চ মাসে যথাক্রমে চীন আর ইতালিতে নববর্ষ শুরু হয়। অথচ ১ জানুয়ারি অর্থাৎ ইংরেজি নববর্ষ মহাসমারোহে উদযাপিত হয় পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র। ইংরেজি নববর্ষ বলে ১ জানুয়ারির সঙ্গে একটা খ্রিস্টান-খ্রিস্টান ব্যাপার- স্যাপার জড়িয়ে আছে। অথচ বিশ্বের তাবৎ ইতিহাসবিদরা অনেক খুঁজেও ১ জানুয়ারির সঙ্গে যিশু, বাইবেল বা ওই ধর্মের কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাননি। যদিও সুনির্দিষ্ট তারিখ ছাড়া ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও রীতিনীতিগুলো পালন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং ভুলবশত ও মিথ্যাচারের জন্য বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। তাই ধর্মের সঙ্গে বর্ষপঞ্জির সম্পর্ক নতুন কিছু নয়। পৃথিবী সৃষ্টির প্রথম থেকেই তা পরিলতি হয়। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও রীতিনীতিগুলো সুনির্দিষ্ট তারিখে পালিত হয় বলেই বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা নিজ ধর্মের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে বর্ষপঞ্জি প্রণয়ন করেছেন। ওই বর্ষপঞ্জির সপ্তাহ বা মাস নির্ধারণ অথবা বছরের শুরু বা সমাপ্তি হিসাব করা হয় সাধারণত চন্দ্র ও সূর্যের পরিভ্রমণকে কেন্দ্র করে। এ জন্য সাধারণত বর্ষপঞ্জিগুলোকে চন্দ্র ও সৌর বছরে ভাগ করা হয়। মানুষের ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিও ওই চন্দ্র ও সূর্যের পরিভ্রমণকে কেন্দ্র করে পালিত হয়। এ কারণেই প্রতিটি ধর্মের অনুসারীরা নিজেদের দিনপঞ্জিকা অনুযায়ী ধর্মীয় বিধিবিধান পালন ও উৎসবের আয়োজন করে।
ইতিহাস সাক্ষ দেয়, জগৎ জুড়ে সব দেশে ১ জানুয়ারি উদযাপনের পিছনে মজার-মজার গল্প আছে। কেন হঠাৎ এবং কি ভাবে ১ জানুয়ারিটাই ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিন হলো, বড় বড় হিসাব কষেও পন্ডিতরা এখনো তা নিয়ে একমত হতে পারেননি। নামে ইংরেজি নববর্ষ হলে কি হবে, মূলত ১ জানুয়ারির ‘জন্ম’ কিন্তু ব্রিটিশ বা মার্কিন মুলুকে নয়। রোম স¤্রাজ্যে। রোমের লোককথা মতে, রোমে তখন সভ্যতার ছোঁয়া তেমন লাগেনি বললেই চলে। পাথর কেটে মানুষ ঘরবাড়ি বানায়, খাবার দাবার চলে শিকার করে- এভাবে বেশ চলছিল। হঠাৎ মোগাস নামে এক মাতব্বর গোছের এক ব্যক্তি লোকজন ডেকে বললো, সূর্য উঠে- অস্ত যায়, আবার উঠে। এ মাঝের সময়টুকুকে ধর এক দিন। আর পাথর দিয়ে পাথরের গায়ে একটা করে দাগ কেটে দিন বানাও; ব্যস, দিন যায়, দাগ বাড়ে। মোগাসের দিন-মাসের কাহিনী বাড়তে থাকে, মূলত মোগাসের নাম থেকে মেঘাস অর্থাৎ জ্ঞানী শব্দটা এসেছে- সেটাও কিন্তু খ্রিস্ট জন্মের ৬০০ বছর পরে। আরও পাঁচটা রোম-শিশুর মতোই একদা বাল্যকালে বিকালের আলোয় বাগানে বসে গৃহশিকের কাছে মেঘাসের গল্প শুনছিলেন সিজার। তিনি ইতিহাসে স¤্রাট জুলিয়াস সিজার নামে পরিচিত। অস্ত্রে যতটা পাকা, অঙ্কে ততটাই কাঁচা এই রোমান স¤্রাট শুধু রাজ্য জয়ই করেননি, তিনি ক্যালেন্ডারের পাতাতেও তার নাম লিখে রেখেছেন। ইংরেজি ক্যালেন্ডারের জুলাই মাস এসেছে তার নামানুসারেই। তার তৈরি ক্যালেন্ডার অনেকদিন টিকে ছিল। কিন্তু আরও পরে এই ক্যালেন্ডার নিয়েও অনেক সমস্যা দেখা দেয়। তাই জুলিয়াস সিজারের ক্যালেন্ডারও সংশোধনের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। অনেক পরে তার ক্যালেন্ডার আবার সংশোধন করেন অ্যালোসিয়াস লিলিয়াস নামীয় এক ডাক্তার। কিন্তু সেই ক্যালেন্ডার সবাইকে ব্যবহার করার কথা বলেন পোপ গ্রেগরি। তিনি ইতিহাসে ১৩ নাম্বার পোপ গ্রেগরি হিসেবে পরিচিত। ফাদার গ্রেগরি ছিলেন ইতালির লোক। ধার্মিক ছিলেন, কিন্তু সংস্কারবাদী ছিলেন না। যিশু ছাড়া তিনি আর একটি জিনিসই বুঝতেন। তা হলো নিসর্গ। কারণ তার ধারণা ছিল, এ অসীম-অনন্ত প্রকৃতি যিশুর মহত্ত’র দান। তাই তিনি ক্যালেন্ডারের সঙ্গে ধাতুচক্রের ছন্দটাকে মিলান তিনি। একদিন প্রার্থনা সেরে বেরিয়ে গ্রেগরি অনুভব করেন, এতো বরফ- শীতল হাওয়াটা যেন একটু আঁচ পেয়েছে। গাছদের শাখা প্রশাখায় খানিক সবুজের আভা লেগেছে। শীত ঘুম ভেঙে উঠে পাখিরা গান গাইছে, যেমন বসন্তে হয়। গ্রেগরি ভাবলেন, এটাই হতে পারে নতুন দিন। এভাবেই শুরু করা যায় নতুন আবহাওয়ার লীলাখেলা! নিজের ঘরে ফিরে এসে সিজারের ক্যালেন্ডারকে রেখে গ্রেগরি বসলেন সপ্তাহ, প আর মাসের হিসাব মিলাতে। একেবারে শীতের শেষ বা বসন্তের সূচনার জন্য অপো করে লাভ নেই। শীত-বসন্তের এ পরিবর্তনের জন্য বরং কিছুটা সময় ধরে রাখা যাক। আজকের দিনটাই হোক বছরের শুরু। সিজারের ক্যালেন্ডার ধরলে এ আবিষ্কারের দিনটা নাকি দাঁড়ায় ১ জানুয়ারি। এখন যে ‘নিউ ইয়ারস ডে’ উৎসব হয়- তা ইংরেজদেরই কীর্তি। কারণ চতুর ইংরেজরা গ্রেগরির যুক্তিবাদী ক্যালেন্ডারটা মেনে নিয়ে ১ জানুয়ারিকে ইংরেজি নববর্ষে পরিণত করেছিল। তার নামেই এই ক্যালেন্ডারের নাম হয় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার। গ্রেগরিয়ান ক্যালন্ডারে জানুয়ারি মাসকে প্রথমে আনা হয়। তারপর থেকেই অর্থাৎ ১৫০০ খ্রিস্টাব্দের শেষ দিকের কোনো একটা সময়ে মূলত ১ জানুয়ারিকে নতুন বছরের প্রথম দিন হিসেবে পালনের রেওয়াজ শুরু হয়। এই হলো ইংরেজি নববর্ষ বা ক্যালেন্ডারের কথা।
এ উপমহাদেশীয় ভূ-খন্ডে নববর্ষ এলেই বাঙালি সংস্কৃতিতে দেনা-পাওনার হিসেব চলে আসে। সেটা হোক ইংরেজি বা হিজরী, বাঙলা হলে তো কথাই নেই- রীতিমতো উৎসবে মাতে। কি পেলাম আর কি হারালাম তা নিরূপনে মত্ত হয়। কেউ কেউ আবার আগামীর পাওয়া- না পাওয়া নিয়েও চিন্তিত হয়ে ওঠে।
২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে জাতীয় পর্যায়ে নানা দেনা-পাওনার মাঝে আমাদের টাঙ্গাইলেরও একটা হিস্যা আছে; এবারের পাওনার খাতাটা নেহায়েত কম নয়। জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে ময়লার ভাগারে মনোমুগ্ধকর দৃষ্টিনন্দন ‘ডিসিলেক’ এবং এককালের ¯্রােতশ্বিনী লৌহজং নদীর দখল-দুষণমুক্ত করে একটি গ্রহনযোগ্য পর্যায়ে নিয়ে আসার চলমানতা পাওনার খাতাটাকে আরো কয়েক ইঞ্চি বড় করেছে বৈকি।
টাঙ্গাইলের লৌহজং নদীর বিলুপ্ত অংশ নোংরা, দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা-আবর্জনার ‘ভাগার’কে মননশীল চিন্তা ও সঠিক বাস্তবায়নে মাত্র এক বছরেই মনোরম পরিবেশ আর দৃষ্টিনন্দন রূপ বিলিয়ে সৌন্দর্যের রাণীতে পরিণত হয়েছে ডিসি লেক। এ বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে সরকারের জলাধার সংরণ প্রকল্পের আওতায় গড়ে ওঠা সৌন্দর্যমন্ডিত ‘ডিসি লেক’ উদ্বোধন করা হয়। ডিসি লেকটির সব ধরনের মালিকানা জেলা প্রশাসনের। এটি পরিচালনার জন্য নামমাত্র দর্শনার্থী ফি নেয়া হচ্ছে। এখানে নানা প্রকারের ফলদ, বনজ, ওষুধি, সৌন্দর্যবর্ধনকারী বৃ রোপণ করা হয়েছে যা ভবিষ্যতে বিরল প্রজাতির বৃ সংরণাগার হিসেবে পরিচিতি লাভ করার সম্ভাববনা রয়েছে। লেক সংলগ্ন মিনি চিড়িয়াখানা স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পাখিদের নিরাপদ আবাস নিশ্চিত করার ল্েয এক হাজার মাটির হাঁড়ি গাছে টাঙানো হয়েছে। লেকের পাড়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বসার জন্য নির্ধারিত কর্ণার রাখা হয়েছে। ইচ্ছে হলে তাদের কাছ থেকে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার কথা শুনতে ও জানতে পারবেন। লেকের পাড়ে বয়স্ক নাগরিকের জন্য সিনিয়র সিটিজেন কর্ণার তৈরি, শিশু-কিশোরদের সাঁতার শেখানোর জন্য লেকের এক পাশে মিনি সুইমিংপুল স্থাপন, লেকের চতুর্দিকে ওয়াকিং/জগিং ট্র্যাক নির্মাণ কাজ চলমান। লেকের মাঝখানের দ্বীপে বৃ রোপণের মাধ্যমে বাটারফাই জোন তৈরি এবং লেকের পানিতে ও সার্কিট হাউসের সামনে দুটি পানির ফোয়ারা নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এক কথায় শহরবাসীর জন্য এ এক অনন্য বিনোদন কেন্দ্র।
লৌহজং নদীর জন্ম যমুনার টাঙ্গাইল অংশে, এর প্রবাহও টাঙ্গাইল জেলায়ই সীমাবদ্ধ। নদীটি পুর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে সরাসরি দেিণ বাঁক নিয়ে আঁকাবাঁকা পথে দেলদুয়ারের এলংজানি নদীতে গিয়ে বন্ধুত্ব করেছে। লৌহজং নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৭৬ কিমি, প্রস্থ ৪০ মিটার এবং নদী অববাহিকার আয়তন ১০৪ বর্গ কিমি। লৌহজং নদী এককালে খুব খর¯্রােতা ছিল। নদীতে কোন সেতু ছিলনা। পশ্চিম এলাকার লোকদের টাঙ্গাইলে যাতায়াত করতে খুব কষ্ট হত। নৌকা দিয়ে দু’পাড়ে যাতায়াত করতে গিয়ে অনেক সময় ¯্রােতের ঘূর্ণিপাকে পড়ে নৌকা ডুবে যেতো। বর্তমান পার্ক বাজারের কাছে ছিল নৌবন্দর, আম গাছের তলায় একটি ঘাট ছিল বলেই আজকের আমঘাট রোড। দূরদূরান্ত থেকে স্টীমার, জাহাজ, লঞ্চ ও বড় বড় নৌকা বাণিজ্যে এ বন্দরে ভীড়তো। এখন বিশ্বাস করতেও কষ্ট হয় একসময় এ নদী দিয়েই চলতো ষ্টীমার, জাহাজ ও বড় বড় নৌকা। ছিল নৌবন্দর। নদীটি সংস্কার না করায় কালের পরিক্রমায় তার নাব্যতা হারিয়ে মরা খালে পরিণত হয়। বর্ষাকালের ২-৩ মাস এ নদীতে পানির দেখা মেলে। আর অবশিষ্ট সময় এ নদী শুকনো খা খা করে- আবর্জনায় থাকে ভরপুর। আর এর সুযোগ নিয়ে নদীর দু’পাশে ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মাটি ভরাট করে গড়ে ওঠে বাড়িঘর, দালানকোঠা। ফলে ক্রমেই এটি সরু খালে পরিণত হয়। স্থানীয় বয়োবৃদ্ধরা নদীটির যৌবনের কথা ভেবে চোখের কোণে অশ্রু ঝড়ায়, কেউ কেউ অম্ল-মধুর স্মৃতি রোমন্থন করেন। নদীটি কোনদিন দখল-দুষণমুক্ত হতে পারবে, এটা তারা কল্পনাও করেননি। হাল সময়ে ‘সময়’ পাল্টেছে। টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন নদীটি দখল-দুষণ মুক্ত করতে উদ্যোগী হয়েছেন। কয়েক মাস যাবত লৌহজং নদী দখলমুক্ত করার ঘোষণা দিয়ে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শহরে মাইকিং, নদীর ধারে মানববন্ধনসহ ফেসবুকে জনমত গঠনের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে- বেড়েছে জনসম্পৃক্ততা। জেলা প্রশাসনের এ উদ্যোগে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, পুলিশ প্রশাসন, সিটিজেন জার্নালিস্ট গ্রুপসহ নানা শ্রেণি-পেশার লোকজন একাতœ হয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় ‘লৌহজং নদী রা করি- পরিবেশ বান্ধব টাঙ্গাইল গড়ি’ স্লোগানে গত ২৯ নভেম্বর সকাল ১১টায় লৌহজং নদী দখল-দুষণ মুক্তকরণ সমন্বিত কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। সেচ্ছাসেবকরা নদীটি পুনরুদ্ধার অভিযানে স্বতঃস্ফুর্তভাবে অংশ নিচ্ছে- অংশ নিচ্ছে খোদ দখলকারীরাও। তারা স্ব-উদ্যোগে নিজস্ব^ স্থাপনা সরিয়ে নিয়ে দখলী জায়গা ছেড়ে দিচ্ছেন। নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি দু’পাড় বাধাই করে চলাচলের জন্য রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে- নেয়া হয়েছে পরিবেশ বান্ধব বিশদ পরিকল্পনা। আবর্জনার ভাগারকে সৌন্দর্যমন্ডিত ডিসি লেক- এ রূপান্তর ও লৌহজং নদীর অবয়ব ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে বরিশাল জেলার বাসিন্দা হয়েও মো. মাহবুব হোসেন টাঙ্গাইলের আতœজ হয়ে গেছেন। টাঙ্গাইল জেলায় ডিসি মাহবুব স্মরণীয় থাকবেন দীর্ঘ সময়- এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। প্রতিটি বিষয়েরই দুটো দিক থাকে, একটা ভাল অন্যটা মন্দ। এই ভাল-মন্দ মিলেই একটা পূর্ণাঙ্গ বিষয়, মানুষও এ থেকে আলাদা নয়। এজন্যই ডিসি লেক প্রতিষ্ঠার ব্যয় নিয়ে যেমন কথা আছে, কথা আছে গভীর খনন কাজ নিয়েও। দুর্মুখোরা তো আরো একধাপ এগিয়ে বর্ষা মৌসুমে পাড় ভেঙে সার্কিট হাউজ- পূর্বপাড়ে ফিলিং স্টেশন ধসে পড়ার কথাও বলছেন। লৌহজং নদী নিয়ে প্রাপ্ত অর্থের ব্যয়, প্রভাবশালীদের স্থাপনা অপসারণে পক্ষপাতিত্ব, বাধানো দু’পাড় বর্ষা মৌসুমে ধসে পড়ার আশঙ্কাও করছেন। অর্থের নয়-ছয়ের কথাও বলছেন। জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন অবশ্য সব কানকথা-অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে লৌহজং পুনরুদ্ধারে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন- এটাই আশার কথা। আমরা বলবো ডিসি লেকের সৌন্দর্য আরো বাড়ানো হোক, লৌহজং নদীর ৭৬ কিলোমিটারই দখল- দুষণ মুক্ত হোক; যে কোন প্রকারেই, হ্যাঁ যে কোন প্রকারেই। ডিসি লেক প্রতিষ্ঠা ও লৌহজং নদী পুনরুদ্ধার কার্যক্রমের কারণে জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন(পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম-সচিব) এখন টাঙ্গাইল তথা সারাদেশের ডিসি মাহবুব। কতটা আপন, কতটা জনবান্ধব, কতটা কাছের হলে এমনটা হয়- তা নিশ্চয়ই বোধগম্য। এতোটা প্রিয় হওয়ার, জননন্দিত হওয়ার মূলেও কিন্তু সেই ভাল এবং মন্দই। জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন একজন কর্তা থেকে কর্মীতে নেমে গণমানুষের মঙ্গল করছেন, আনন্দ বিলাচ্ছেন ফুলে ফুলে। এ জন্যই তিনি ডিসি মাহবুব, টাঙ্গাইলবাসীর প্রিয়মুখ- কল্পনার অবয়ব।
ধান ভানতে শিবের গীত আর নয়; যা বলছিলাম, গ্রেগিরিয়ান ক্যালেন্ডার উপহার দিয়ে ধর্মের মানুষ হয়েও ইতালিতে ইংরেজি নববর্ষের মতো একটা সামাজিক অনুষ্ঠানের শিরোমণি হয়ে রয়েছেন গ্রেগরি। ইতিহাস বিখ্যাত বিপ্লবের দেশ ফ্রান্সেও ইংরেজি নববর্ষের যথেষ্ট কদর, কারণ সে দেশের গ্রামগুলোতে এদিনে এখনো রাজা হেনরি লুইয়ের স্মরণে প্রার্থনা বসে। ১ জানুয়ারি দিনটায় শহুরে ফরাসিরা কেক ফেস্টিভ্যালে মেতে থাকেন। গ্রিস কিংবা ইন্দোনেশিয়ায়ও ব্যতিক্রম নয়। ইংরেজি নববর্ষের সাহেবি উৎসবের সঙ্গে সঙ্গে তারা লোককথার গল্পগুলো ভুলে যায় না। ১ জানুয়ারিতেই গ্রিসের বড় বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখনো মেষপূজা হয়। আর ইন্দোনেশিয়ায় গৃহস্থরা ১ জানুয়ারিতে সন্তান-সন্তুতির মঙ্গল কামনায় আলোর আরাধনায় বসেন। নববর্ষ শুরুর দিনটা এর থেকে বেশি কী পেতে পারে সারা দুনিয়ার কাছে! ইংরেজি ক্যালেন্ডারের আন্তর্জাতিকতার কল্যাণেই ১ জানুয়ারির দিনটায় সারা পৃথিবীর মানুষ এক সঙ্গে উৎসবের আনন্দ অনুষ্ঠানে মেতে উঠে। বৈচিত্র্যেরর মাঝে ঐক্য, বিবিধের মাঝে এমন মহান মিলন বছরের আর কোনদিন দেখা যায় না। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, অসাম্প্রদায়িকতার শৌর্য-বীর্যে উন্নত বিশ্বের সুরঙ্গে প্রবেশ করুক বাংলাদেশ- এটাই হোক ইংরেজি নববর্ষের প্রত্যাশা। লেখক: সাংবাদিক ও কলাম লেখক।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno