আজ- ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার  সকাল ৭:২৩

কারাবন্দিদের কথা বলার জন্য ‘স্বজন’- এর উদ্বোধন করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

 

দৃষ্টি নিউজ:


‘স্বজনের সাথে সংশোধনের পথে’ স্লোগানকে সামনে রেখে টাঙ্গাইল কারাগারে প্রথমবারের মতো বন্দিদের পরিবারের আরও কাছাকাছি থাকতে চালু করা হলো মোবাইল ফোন সেবা ‘স্বজন’। বুধবার(২৮ মার্চ) দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে আনুষ্ঠানিকভাবে এই পাইলট প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। প্রকল্পটির নামকরণ করা হয়েছে ‘প্রিজন লিঙ্ক- স্মার্ট কমিউনিকেশন সিস্টেম ফর ইনমেটস অ্যান্ড রিলেটিভস’। তবে প্রকল্পটি ‘স্বজন’ নামেই পরিচিত।
টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে মোবাইল ফোন সেবা ‘স্বজন’ উদ্বোধন করে কারাগার চত্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি বলেন, বাড়ির আপনজনরা কারাবন্দিরা সাথে দেখা করা ও কথা বলার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে। দীর্ঘদিন কথা না হলে কয়েদিদের মনে একাকিত্ব ভর করে, তারা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। তাই প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ‘স্বজন’ চালু করা হলো- কয়েদিরা এই দিনের অপেক্ষায় ছিল। ‘স্বজন’ এ চার বন্দিকে কথা বলতে তাদের হাবভাব ও বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে আমার তাই মনে হয়েছে।
টাঙ্গাইল কারাগারে ধারণ ক্ষমতার তিনগুণ কয়েদি-হাজতি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেরানীগঞ্জে নবনির্মিত কারাগারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কারাবন্দিদের নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সুযোগ সৃষ্টির ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর পাইলট প্রকল্প হিসেবে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে এই কার্যক্রম প্রথম শুরু করা হলো। তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে সারাদেশের কারাগারগুলোতে এ ব্যবস্থা চালু করা হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, আমরা জেলখানাকে আর কারাগার বলতে চাইনা, কারাগার হবে ‘সংশোধনাগার’। বর্তমানে দেশের সংশোধনাগারে যিনি যে কাজ পারেন তাই করছেন এবং তাদের উৎপাদিত পণ্যের লভ্যাংশের ৫০% তিনি সাজা শেষে বাড়ি যাওয়ার সময় নিয়ে যেতে পারছেন। তিনি আরো বলেন, বন্দিদের জন্য আমরা সকল সুযোগ-সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করছি। বিশ্বের বিভিন্ন কারাগার পরিদর্শন করে আমরা বন্দিদের সার্বিক উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ গ্রহন করছি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শুধু মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলা কেন! সকল মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে পুলিশ কখনোই বাধা দেয়না। বিএনপি বা অন্য যেকোন দল রাজনৈতিক কর্মকান্ড নির্বিঘেœ পালন করছে। হ্যাঁ, নিরাপত্তা জনিত কোন বিষয় থাকলে আমরা এক বা দুদিন আগে-পিছে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের অনুরোধ করে থাকি। তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে গণতান্ত্রিক চর্চায় পুলিশের বাধা দেয়ার কোন সুযোগ নেই।
সংবাদ সম্মেলনে এটুআই’র ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন, এটুআই’র পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান(পিএআই)। স্বাগত বক্তব্য রাখেন, কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা ও সেবা বিভাগের শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। বক্তব্য রাখেন, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও টাঙ্গাইল জেলা কারাগারের জেল সুপার মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রবীণ রাজনীতিক ফজলুর রহমান খান ফারুক, টাঙ্গাইল সদর আসনের সংসদ সদস্য মো. ছানোয়ার হোসেন, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আলা উদ্দিন, টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন, পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায়, টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট জাফর আহমেদ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার জহিরুল হক ডিপটী প্রমুখ।
বুধবার বিকালে টাঙ্গাইল শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে স্থানীয় নাগরিক কমিটি আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেবেন।
টাঙ্গাইল জেলা কারাগার সূত্রে জানা যায়, এখানে এই সেবার জন্য অভ্যন্তরে চারটি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। একটি কক্ষের মধ্যেই স্থাপন করা হয়েছে এগুলো। মোবাইল ফোনে একই সময়ে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন চার বন্দি।
প্রাথমিকভাবে প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ বন্দির জন্য একটি করে বুথ নির্ধারণ করা হয়েছে। বন্দি হিসেবে কেউ কারাগারে এলেই তার কাছ থেকে পরিবারের দুটি নম্বর নেয়া হবে। ওই দুটি নম্বরে মাসে দু’বার করে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট কথা বলা যাবে। কারাগারে ডেভেলপ করা সফটওয়্যারের মাধ্যমে ভেরিফায়েড হওয়ার পর ওই দুটি নম্বরে সংশ্লিষ্ট কারাবন্দিকে কথা বলার সুযোগ দেয়া হবে। মহিলা, বৃদ্ধ, শিশু ও অল্প বয়স্ক কিশোর বন্দিরা কথা বলার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। নির্ধারিত সময়ের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে কল কেটে যাবে। সময় শেষ হওয়ার ৩ মিনিট পূর্বে সতর্কসূচক ‘বিপ’ শব্দ হবে। তবে বন্দিরা আপাতত কোনো আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত কথা বলার সময়।
এই বুথের ফোন থেকে বন্দি চাইলেই কোনও নম্বরে ডায়াল করতে পারবেন না। একইভাবে কোনো ফোন কলও আসবে না। এর কারণ, মোবাইল সেবাটির জন্য বানানো সফটওয়্যারে আগে থেকে নির্দিষ্ট নম্বর দেয়া থাকবে। এ জন্য সেগুলো ছাড়া অন্য নম্বরে ফোন কল ডায়াল করা যাবে না। শুধু ১ বা ২ চাপলে সটওয়ার থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভেরিফাইড নম্বরে কল যাবে। আত্মীয় বা পরিবারের ছবি সফটওয়্যারের মধ্যে সংরক্ষিত থাকবে।

মন্তব্য করুন

মন্তব্য করেছে

 
 
 
 
 

ব্যবস্থাপনা পরিচালক : মু. জোবায়েদ মল্লিক বুলবুল
আশ্রম মার্কেট ২য় তলা, জেলা সদর রোড, বটতলা, টাঙ্গাইল-১৯০০।
ইমেইল: dristytv@gmail.com, info@dristy.tv, editor@dristy.tv
মোবাইল: +৮৮০১৭১৮-০৬৭২৬৩, +৮৮০১৬১০-৭৭৭০৫৩

shopno